সাতক্ষীরায় জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা

রমজানের মাঝামাঝি সময় পার হলেই জমে ওঠে সাতক্ষীরার ঈদ বাজার। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদ বাজারে প্রায় শত কোটি টাকার পোশাক বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। এবার বাজারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দেশীয় পোশাকের আধিপত্য। অন্যান্য বছর ভারতীয় সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে বিভিন্ন পোশাক জনপ্রিয় হলেও এবার বাজারে সেগুলোর উপস্থিতি নেই। ফলে দেশীয় ডিজাইনের পোশাকের বিক্রি বেড়েছে।
আসাদুল মার্কেটের নিউ ফ্যাশন কিং-এর স্বত্বাধিকারী মো. ইশতিয়াক আহমেদ জানান, নারীদের মধ্যে সারারা, গারারা, নায়রা ও গাউনের চাহিদা বেশি। এসব পোশাকের দাম ১,৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে, তবে ৩ হাজার টাকার মধ্যেই ভালো মানের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে, যা ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।
আমিনিয়া সুপার মার্কেটের ইয়াং চয়েজ-এর স্বত্বাধিকারী মো. অলিউর রহমান জানান, এবার ছেলেদের মধ্যে পাঞ্জাবি, প্যান্ট, শার্ট ও গেঞ্জির চাহিদা বেশি। বিশেষ করে ড্রপ সোল্ডার গেঞ্জি ও কাতুয়া শার্ট বেশ জনপ্রিয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যবসায়ীরা জানান, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা সর্বসাকুল্যে প্রায় এক লাখ টাকার সওদা করে থাকেন ঈদ উপলক্ষে। নিম্নবিত্ত পরিবারে প্রায় ৫০ হাজার টাকার সওদা করেন। আর উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের তো ঈদ বাজার আরও বেশি। সব মিলিয়ে এবারের ঈদে শত কোটি টাকার বেচাকেনা হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
বাজারে পোশাকের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কিছুটা চাপে পড়েছেন। এনজিও কর্মী শিরিন আক্তার জানান, সন্তানদের জন্য পোশাক কিনতে এসে দেখছেন ২ হাজার টাকার নিচে ভালো মানের পোশাক পাওয়া কঠিন।
প্রাইভেট চাকরিজীবী রুবেল হোসেন বলেন, পরিবারকে খুশি করতে চাই, কিন্তু গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম ৩০০-৫০০ টাকা বেশি হওয়ায় বাজেটের সঙ্গে তাল মিলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
তবে কিছু ক্রেতা দাম বাড়লেও মানের কারণে সন্তুষ্ট। শিক্ষার্থী ফারিহা সুলতানা বলেন, নতুন ডিজাইনের দেশীয় পোশাক আসায় ভালো লাগছে। মান ভালো হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি হলেও কিনেছি।
শুধু বিপণিবিতান নয়, শহরের ফুটপাতের দোকানগুলোতেও সমান ভিড়। রিকশাচালক আব্দুল খালেক জানান, পরিবারের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন, কিন্তু বড় মার্কেটে দাম বেশি হওয়ায় ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করার চেষ্টা করছেন।
গৃহিণী রোকসানা পারভীন বলেন, সাধারণ মার্কেটে দাম বেশি লাগছে, তাই ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় এমন দোকান খুঁজছি।
জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করছে, যাতে কোনো বিক্রেতা বাড়তি দাম না নিতে পারে।
সাতক্ষীরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান তানভীর জানান, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সচেতন করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জি.এম সোহরাব হোসেন জানান, শহরের সমিতির আওতাভুক্ত ২৫০টি দোকানে এবার ঈদে বিপুল পোশাক বিক্রির আশা করা হচ্ছে।
তবে শহরের প্রধান প্রবেশপথগুলোর কিছু অংশ বন্ধ থাকায় ক্রেতারা বাজারে আসতে পারছেন না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। তারা প্রশাসনের কাছে এই প্রবেশপথগুলো উন্মুক্ত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিনুল হক বলেন, বাজারে ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ব্যবসায়ী সমিতির স্বেচ্ছাসেবকরাও নিরাপত্তার কাজে সহযোগিতা করছেন।
(ঢাকা টাইমস/১৬মার্চ/এসএ)

মন্তব্য করুন