আজ ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিল

আজ বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন, যা মুজিবনগর দিবস হিসেবে পরিচিত।
১৭ এপ্রিল উপলক্ষে মেহেরপুরের মুজিবনগরে স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতি কমপ্লেক্স, আম্রকাননে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ পুরো মুজিবনগর জুড়ে করা হয়েছে রঙের কাজ। এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসন। দিনটির শুরুতেই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিসৌধে পতাকা উত্তোলন করবেন বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর প্রতীক ফারুক ই আজম। এর পরে তিনি স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ শেষে গার্ড অব অনার গ্রহণ করবেন।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এই সরকারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। এরপর ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমানে মুজিবনগর) বাংলাদেশের প্রথম সেই সরকার শপথ গ্রহণ করে। সংক্ষিপ্ত এই অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি অর্ধশতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে যুদ্ধকালীন এই সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন।
শপথবাক্য পাঠের সময় উড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সংক্ষিপ্ত অথচ এই ঐতিহাসিক কর্মসূচি চলাকালে অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তার বিধান করেছিল স্থানীয় জনগণ ও গোলক মজুমদারের নির্দেশে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। মুজিবনগরের আম্রকাননে উপস্থিত অনেকের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, সেদিন সকাল ১১টা ১০ মিনিটে শীর্ষ নেতারা দৃপ্ত পদক্ষেপে মঞ্চের দিকে এলে দেশ স্বাধীন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সমবেত সংগ্রামী জনতা ‘জয় বাংলা’ জয়ধ্বনি দেয়। মুজিবনগরে শপথ অনুষ্ঠানস্থলে একটি ছোট্ট মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছিল।
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথমে মঞ্চে ওঠেন। ঝিনাইদহের তৎকালীন এসডিপিও মাহবুব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সশস্ত্র দল ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধানকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। এরপর মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা এবং প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী। উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবকরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে নেতাদের বরণ করে নেন।
সরকারের মুখপত্র জয় বাংলা পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি আবদুল মান্নান এমসিএর উপস্থাপনায় শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমেই নতুন রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দলিল ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন চিফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলি। অনুষ্ঠানের সূচনায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন তিলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠ করা হয়।
অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা মায়ের চার বীর সন্তান প্রাণ ঢেলে গাইলেন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। উপস্থিত সবাই তাঁদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন। অপূর্ব এক ভাবগম্ভীর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল তখন। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর ঘোষণা করেন প্রধান সেনাপতি পদে কর্নেল ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল আবদুর রবের নাম।
অনুষ্ঠান শুরু হল বেলা ১১টার পর। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ সবাই এসে গেছেন। তবে যার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ছিল তিনি নেই, তিনি আসবেন না। শেখ মুজিব যে কোথায় আছেন তা এখনও জানা যায়নি। তবু অনুপস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হল রাষ্ট্রপতি হিসেবে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। মন্ত্রিসভার অন্য তিনজন সদস্য হলেন খোন্দকার মোশতাক আহমদ, এইচ এম কামরুজ্জামান এবং এম মনসুর আলি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ নিযুক্ত হন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ওসমানী।
(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এফএ)

মন্তব্য করুন