ট্রেনে-বাসে স্বস্তির ঈদযাত্রা, যাত্রীস্বল্পতার অস্বস্তি সদরঘাটে

প্ল্যাট ফরমের পিলারের গোড়ায় বাঁধানো বেদিতে বসে আছেন কোনো কোনো যাত্রী। অনেকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কেউবা পায়চারি করছেন সুপ্রশস্ত প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু কারও মধ্যে উদ্বেগ কিংবা অস্বস্তি নেই। কেননা তাদের মধ্যে একটা আশ্বস্তি তৈরি হয়েছে যে সময়মতো ট্রেন ছেড়ে যাবে। স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে নির্ঝঞ্ঝাটে পৌঁছাতে পারবেন বাড়িতে। এখন অপেক্ষা আকাঙ্ক্ষিত টেনের।
পাশে দাঁড়ানো একটি ট্রেন। তার ভেতরে অনেক যাত্রী আসন নিয়েছেন। আবার নতুন যাত্রী উঠছেন ট্রেনে। কোনো তাড়াহুড়ো নেই তাদের মধ্যে। স্বাভাবিক পদচারণের মুখরতা ছাড়া বাড়তি কোনো কোলাহল নেই প্ল্যাটফর্মেও।
কমলাপুর স্টেশনে এমনই স্বস্তির চিত্র দেখা গেল। ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে সময়মতো। আগাম টিকিট কাটা বলে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর যাত্রীরা নিজ নিজ আসনে বসে যাচ্ছেন গন্তব্যে। এখনো অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড় নেই।
রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে তেমন ভিড় না থাকলেও বাড়িমুখী মানুষ বাড়ছে। পথে আগাম টিকিট কাটা যাত্রী তোলা হবে বলে বাসগুলো কিছু আসন খালি রেখে ছুটছে গন্তব্যে। তবে বাসের নির্ধারিত সময় মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না অনেক পরিবহনের।
এদিকে লঞ্চে তেমন একটা ভিড় নেই। সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের কিছু আনাগোনা থাকলেও আগামীকাল থেকে ভিড় বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে ঈদের লম্বা ছুটি। গত ৩১ মে থেকে ট্রেনে আগাম টিকেটে যাত্রীসেবা শুরু হয়। ইতিমধ্যে বাসেরও একই রকমের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ সময়ে কোনো রকমের ভোগান্তি ছাড়া গন্তব্যের উদ্দেশে স্বস্তির যাত্রা করছেন যাত্রীরা।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আজ মঙ্গলবার ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে সকালে যথাসময়ে ছেড়ে গেছে ট্রেন। সকাল থেকেই যাত্রীরা আসছেন তাদের নির্ধারিত ট্রেনের সময় অনুযায়ী। স্টেশনের পরিবশে ও ট্রেনের সিডিউলে সন্তোষ প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
যানজটের পড়ার আশঙ্কায় যারা আগেভাগে ঘর থেকে বেরিয়েছেন, তাদের অনেকে সময়ের অনেক আগেই স্টেশনে এসে গেছেন। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছেন তারা। তবে অনাহূত মানুষের আনাগোনা কম। কেননা এবার স্টেশনে প্রবেশপথে কয়েক দফা তল্লাশি হচ্ছে। টিকিটবিহীন কেউ ঢুকতে পারছে না প্ল্যাটফর্মে। এ ছাড়া সময়মতো ট্রেন ছাড়ছে বলে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না যাত্রীদের। আর তাতে প্ল্যাটফর্মে নেই অস্বস্তিকর ভিড়।
প্ল্যাটফর্ম নির্ঝঞ্ঝাট রাখতে এবার একটি বিশেষ টিম কাজ করছে জানিয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানান, বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধ ও অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে ব্যাপকভাবে চেকিং চলছে। হকার ও ভবঘুরেদের স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
আগামী শনিবার (৭ মে) দেশে উদযাপিত হবে কোরবানির ঈদ ঈদুল আজহা। আর বাকি পাঁচ দিন। আজ তেমন ভিড় না থাকলেও কাল-পরশু থেকে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবহন খাতের লোকজন।
মহাখালী বাস টার্মিনালে জামালপুরের একজন যাত্রী যাচ্ছেন সপরিবারে। তিনি জানান, কোনো ধরনের ভোগান্তি হয়নি তার। সহজেই টিকিট পেয়েছেন। আগের ভাড়াই নিয়েছে কাউন্টার।
এদিকে লঞ্চে আগাম টিকিট বিক্রি হলেও তাতে তেমন সাড়া মিলছে না। টার্মিনালে এখনো ঈদের আমেজ নেই। তবে ঈদের দুদিন আগে যাত্রীর ভিড় বাড়বে বলে মনে করছেন লঞ্চ মালিকরা।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চে সেই আগের চিরচেনা ভিড় নেই। যাত্রীস্বল্পতার কারণে এই পথে লঞ্চের সংখ্যা কমে গেছে। তবে ঈদের সময় কিছুটা ভিড় বাড়ে। ঈদের দুই দিন আগে-পরে এই ভিড় দেখা যায় বেশি।
(ঢাকাটাইমস/৩জুন/মোআ)

মন্তব্য করুন