অপরাধ দমনের সংবাদপত্রের ভূমিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৬:৩৮| আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ২০:৪৮
অ- অ+

একটি সুস্থ ও নিরাপদ সমাজ গঠনে অপরাধ দমন অন্যতম প্রধান শর্ত। এক্ষেত্রে কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা আদালতই নয়, সমাজের সচেতন অংশ হিসেবে সংবাদপত্রও অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সংবাদপত্র কেবল অপরাধের ঘটনা জানায় না, বরং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ও প্রশাসনকে সচেতন রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।

জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত All Bangla newspaper সহ প্রায় সকল ভাষার সংবাদপত্র অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেসাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলে। কোন এলাকায় কী ধরনের অপরাধ ঘটছে, কীভাবে এসব অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে এবং তার প্রভাব কী এসব তথ্য সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনসাধারণ জানতে পারে। এমন সচেতনতা অনেক সময় অপরাধ সংঘটনের আগেই তা প্রতিরোধে সহায়তা করে। বর্তমান সময়ে কিছু সংবাদপত্র বা সংবাদ মাধ্যম তাদের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্যবহার করে সংবাদ দ্রুত প্রচারের মাধ্যমে অপরাধ দমনে ভূমিকা রাখছে।

সংবাদপত্র সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে অপরাধবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলে। ধর্ষণ, মাদক, সাইবার অপরাধ, কিশোর গ্যাং, মানব পাচার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে পরিবার, স্কুল এবং সমাজে প্রতিরোধমূলক আলোচনা তৈরি হয়। এতে করে সাধারণ মানুষ যেমন সতর্ক হয়, তেমনি অপরাধীরা নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফলাফল সম্পর্কে আগেভাগেই বুঝতে পারে।

সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় অনুসন্ধানধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করে অপরাধের শিকড় খুঁজে বের করেন। চোরাচালান, ঘুষ, দুর্নীতি বা চাকরির প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনায় সাংবাদিকদের সাহসী প্রতিবেদন প্রশাসনের চোখ খুলে দেয়। এসব প্রতিবেদন অনেক সময় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করে। উদাহরণস্বরূপ, কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান, মাদকের বিস্তার কিংবা শিক্ষা খাতে অনিয়ম সব ক্ষেত্রেই সংবাদপত্র সমাজকে জানিয়ে দেয় কোন দিকটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

অপরাধের সামাজিক কারণ যেমন দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব কিংবা পারিবারিক সহিংসতা সংবাদপত্র এসব সমস্যাকেও সামনে আনে। ফলে অপরাধের মূল কারণ নিয়েই নীতিনির্ধারকরা পুনরায় ভাবতে বাধ্য হন। এভাবেই সংবাদপত্র শুধু অপরাধ প্রকাশ করে না বরং অপরাধ দমনে দীর্ঘমেয়াদী নীতি তৈরিরও অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

সংবাদপত্র প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কেও জনমত তৈরি করে। পুলিশের অদক্ষতা বা গাফিলতির খবর যেমন জনগণ জানতে পারে, তেমনি সাহসী পুলিশ কর্মকর্তাদের কাজের প্রশংসাও পায় সংবাদপত্রে স্থান। এতে প্রশাসন যেমন জবাবদিহিমূলক আচরণে উৎসাহ পায়, তেমনি সৎ অফিসাররা উৎসাহিত হন।

বিশেষ করে অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা আজ অপরাধ দমনের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। একাধিক টিভি অনুষ্ঠানে কিংবা প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায় অপরাধ সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষকে অপরাধের গভীরতা সম্পর্কে অবগত করছে। জনগণের মনোজগতে অপরাধবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করাই এমন রিপোর্টের মূল উদ্দেশ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে কভিড-১৯ মহামারির সময় কিছু অসাধু ব্যক্তি ভুয়া করোনা রিপোর্ট ও জাল চিকিৎসা সামগ্রী বাজারজাত করে। এসব অপরাধ বহু সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানার আগেই সংবাদপত্রে উঠে আসে। সাংবাদিকদের এই দায়িত্বশীল ভূমিকা সমাজে অপরাধ প্রতিরোধে বড় অবদান রাখে।

এছাড়া ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে সংবাদপত্র কাজ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী পরিবার বা ব্যক্তি পুলিশের কাছে যথাযথ সহায়তা পান না। সংবাদপত্র সেই কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেয় প্রশাসন ও পুরো জাতির কাছে। ফলে অনেক সময় পুলিশ বা অন্যান্য সংস্থা বাধ্য হয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে।

অপরাধের ভয়াবহতা যখন সংবাদপত্রে উঠে আসে, তখন সমাজে একটি সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ বুঝতে পারে অপরাধ করলে তার কী শাস্তি হতে পারে। এটি অন্যদের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে কার্যকর প্রভাব ফেলে।

তবে এখানে সাংবাদিকদের ভূমিকা যতটা শক্তিশালী, ততটাই সংবেদনশীল। অপরাধ নিয়ে রিপোর্ট করার সময় গোপনীয়তা, আইনি প্রক্রিয়া এবং ন্যায়ের নীতিমালা মানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়া ট্রায়ালের নামে কোনো অপরাধীর নাম প্রচার করে সমাজে তাকে দোষী বানিয়ে ফেলা কখনো উচিত নয়। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই কোনো সংবাদ প্রকাশ আইন ও নীতির পরিপন্থী।

শেষ কথা, সংবাদপত্র সমাজের আয়না। এই আয়না যদি সত্য, সঠিক এবং সাহসী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তবে অপরাধীরা লুকাতে পারে না। প্রশাসন দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়, সমাজে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। আর এই রকম একটি গণমাধ্যমই পারে একটি দেশকে অপরাধমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও নিরাপদ সমাজ উপহার দিতে।

(ঢাকা টাইমস/২৭জুলাই/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চার সরকারি কলেজ ও ২১ স্থাপনার নাম পরিবর্তন
আবু সঈদ হত্যা: অভিযোগ গঠন বিষয়ে আসামিপক্ষের পরবর্তী শুনানি কাল বুধবার
কুমিল্লায় টিপু হত্যা মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন
মেঘনা ব্যাংকের চট্রগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তাদের নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা