সরকার ঘনিষ্ঠরাই বলছে এই সরকারের নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা নেই: জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, সরকারের ঘনিষ্ঠরাই বলছেন— এই সরকারের মধ্যে আরেকটা সরকার আছে। আর এই সরকারের নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা নেই।
সোমবার এক বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালীর পাঠানো বিবৃতিতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। একইসঙ্গে আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, এখন সরকারের ঘনিষ্ঠরাই বলছেন- এই সরকারের মধ্যেই আরেকটা সরকার আছে। আর এই সরকারের নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা নেই। সরকার ঘনিষ্ঠরাই বলছেন— বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নয়।
বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মিছিল মিটিং করতে দেওয়া হয়নি, আমাদের নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে, আমাদের অফিস ও বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তখন সরকার উৎকন্ঠিত হয়নি, এমনকি দুঃখ প্রকাশও করেনি। যেদিন থেকে আমি এই সরকারের সমালোচনা করা শুরু করেছি, সেদিন থেকেই আমার নামে মামলা দেওয়া শুরু করেছে। আমার নামে হত্যা সহ বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়েছে, ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। আমাকে পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই হত্যাকান্ডের মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।
মাইলস্টোন স্কুল দুর্ঘটনা পরিদর্শনে গিয়ে সরকারের কিছু পদস্থ কর্মকর্তা জনরোষের শিকার হয়ে ৯ ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিল সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘গণমানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বারবার চেষ্টা করেও তাদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছিল। অবরুদ্ধ কর্মকর্তারা উদ্ধারের পর সরকার একটি জরুরি সভা ডাকলেন। দেশের মানুষ ভেবেছে দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সরকার গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু, দেশবাসীকে হতাশ করে নিজেদের রক্ষায় সমমনাদের দিয়ে একটি জোট গঠন করলেন। যখন শিশু হারিয়ে মা বাবার হাহাকার চলছে, আহত শিশুর চিকিৎসা ও বেঁচে থাকা নিয়ে অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে আছে, তখন সরকার নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে জোট গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।’ সরকারের সঙ্গে যারা সুসস্পর্ক রেখে চলেন অথবা যাদের কাছে পেলে সরকার নিজেদের রক্ষা করতে পারবে তাদের নিয়ে বৈঠক করেছে। দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা রোধ বা মোকাবেলার জন্য সরকার জোট গঠন করেনি। জোট গঠন করেছেন, স্বজনহারা অভিভাবক ও সাধারণ সচেতন মানুষের আক্রোশের হাত থেকে বাঁচতে— বলেন কাদের।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, সরকারের কথা হচ্ছে, যারা প্রতিবাদ করেছে তারা হচ্ছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদের দোসর। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই তাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করলেই তারা আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে যায়।
কোটা বিরোধী আন্দোলনই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে কোটা তো এখন আরো বেড়েছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ার পর এখন আবার দেশে বৈষম্য বেড়ে চলছে। চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। দেশের অন্যায়ের মাত্রা আরো বেড়েছে।’
‘এখন যারা সরকার চালাচ্ছে তাদের চেয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আমরা অনেক বেশি সক্রিয় ছিলাম। আমরা অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী নেতৃত্ব দেওয়ায় রংপুরে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছিল। অন্তত ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আমাদের ২জন নেতা শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী। শহীদ আবু সাঈদের কবর রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সবার আগে আমিই জিয়ারত করেছি। জাতীয় পার্টি আবু সাঈদের পরিবারকে শান্তনা ও সহায়তা দিয়েছে।’
দোসর আখ্যা দিয়ে এখন আমাদের ওপর জুলুম নির্যাতন চলছে জানিয়েছে কাদের বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি করতে দিবে কি-না বা নির্বাচন করতে দিবে কি-না তা নিয়ে সরকার চিন্তা ভাবনা করছে। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা যেহেতু এ প্রেক্ষাপটে দেশে-বিদেশে গ্রহনযোগ্য করা যাচ্ছে না, সে কারণে জি এম কাদের বিহীন জাতীয় পার্টি তৈরির অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, দেশের এ অসহনীয় পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। সেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যদি সবাইকে নিয়ে একযোগে কাজ করে তাহলেই দেশটা হয়ত রক্ষা পাবে। অবাধ নির্বাচন হলো, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে হবে। আর নিরপেক্ষ মানে হচ্ছে সরকার সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করবেন। নির্বাচনে কোন সরকারী দল থাকতে পারবে না। আমরা দেখছি প্রশাসন, পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সহায়তায় একটি দল রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। আবার আমাদের মত নিবন্ধিত দলকে রাজনৈতিক কর্মমান্ডে বাধা দেয়া হচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে এই সরকার কীভাবে দল নিরপেক্ষ হয়? ফলে বর্তমান অর্ন্তর্বতী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মন্তব্য করুন