প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরে যে দুটি বিষয় গুরুত্ব পাবে

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরে অভিবাসন ও বিনিয়োগ অগ্রাধিকার পাবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, এই সফরে অনেকগুলো সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। এই সফরের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর থেকে গভীরতর হবে।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন প্রেস সচিব।
আগামীকাল সোমবার (১১ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। ১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে দেশটিতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রেস সচিব বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সফর। সফরের মূল ফোকাস অভিবাসন নিয়ে আলাপ, দ্বিতীয় ফোকাস হচ্ছে বিনিয়োগ।’
মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশের জনশক্তি খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে উল্লেখ করে শফিকুর আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিবাসন এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পারি, যাতে মালয়েশিয়া আমাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনশক্তি নেয়। এগুলো নিয়ে কিছু আলাপ হবে এবং এটার আলোকে কিছু চুক্তি স্বাক্ষর হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে মালয়েশিয়ার বড় বড় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কথা হবে বলে জানান প্রেস সচিব। বলেন, ‘আগামী ১২ আগস্ট একটি বিজনেস কনফারেন্স আছে। এরপর ১৩ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টাকে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি কেবাংসান (ইউকেএম) সম্মানসূচক ডিগ্রি দেবে। এই অনুষ্ঠানে আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম উপস্থিত থাকবেন ।’
সফরসূচিতে ১২ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আছে। প্রেস সচিব বলেন, ‘সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের যে সুসম্পর্ক আছে, সেটা একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শাহ আসিফ রহমান বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের আমন্ত্রণে এই রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জানান, সফরের প্রথম দিন প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে। সেখানে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল প্রধান উপদেষ্টাকে গ্রহণ করবেন। ১২ আগস্ট পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। বৈঠকের পর দুদেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য যে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হবে তা হলো প্রতিরক্ষা বিষয়ক সহযোগিতা; এলএনজি ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণসহ জ্বালানি সহযোগিতা; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ মালয়েশিয়া (আইএসআইএস); বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) ও চিপ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মিমোস (এমআইএমওএস) এর সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক চেম্বার এফবিসিসিআইর সঙ্গে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়িক চেম্বারের মধ্যে সমঝোতা।
সম্ভাব্য এক্সচেঞ্জ নোটগুলো হলো হালাল ইকোসিস্টেম, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং উচ্চ শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বিষয়ক নথি সই।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর কোনো দেশের সরকার প্রধান হিসেবে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সফর করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। গত অক্টোবরে প্রায় এক দশক পর মালয়েশিয়ার সরকার প্রধান বাংলাদেশ সফর করেন।
শাহ আসিফ রহমান জানান, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর একটি সংবাদ সম্মেলন এবং প্রধান উপদেষ্টার সম্মানে একটি রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে। একই দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা একটি ব্যবসায়িক ফোরামে অংশ নেবেন এবং এর পরপরই মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন খাতে নতুন কর্মী নিয়োগ, অধিক সংখ্যক পেশাদার নিয়োগ, শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
শ্রমবাজারের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রের সঠিক ব্যবহার,কৃষিসহ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়গুলোও আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।
(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন