শেরপুরে হলুদ-জীবনে সচ্ছলতা

মো. আব্বাস উদ্দিন, ঝিনাইগাতী (শেরপুর ) প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:৩৪

শেরপুরের পাঁচ উপজেলার সিংহভাগ মানুষ কৃষিফসলের ওপর নির্ভরশীল হলেও বিকল্প চাষের দিকেও ঝুঁকছে তারা। বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা তাদের স্বল্প জমিতে সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

এ ছাড়া শেরপুরে আছে অনেক উঁচু জমি, যেখানে পানি সংকটের কারণে ধান-পাট চাষ করা যায় না। পরিত্যক্ত পড়ে থাকা এসব উঁচু জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল। এর বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে হলুদ। কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলায় হলুদ চাষির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হলুদ, আদা, সবজি চাষ করে বহু পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা।

সবজি ও মসালাজাতীয় ফসলের সম্ভাবনায় নরসিংদী থেকে বেশ কিছু দক্ষ সবজি চাষি এ অঞ্চলে এসে বসতি গাড়েন। তাদের অনুসরণ করে এলাকার কৃষকরা চাষ করছেন বিভিন্ন ধরনের সবজি।

ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তের উঁচু জমিগুলোতে লাউ, শিম, বরবটি, করলা, ঝিঙে, কদু, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, কাকরুল, দুধকশি, ঢেঁড়স, পেঁপে, গাজরসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে থাকেন সীমান্তের কৃষকরা। একই পদ্ধতিতে শ্রীবরদী উপজেলার চরাঞ্চলের উঁচু উর্বর ভূমিতে বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাধাঁকপি, আলু, পাতাকপি, গাজর, মরিচ, সরিষা, মিষ্টি আলু, পেঁয়াচ, রসুন, মুগডাল, মসুরডাল ও মাসকলাইসহ বিভিন্ন জাতের কৃষিফসল চাষাবাদ করে থাকে।

নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলায় আদা, হলুদ, মরিচ, বেগুন, শিম, পাতাকপি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ বিভিন্ন কৃষি ফসল চাষ করে থাকেন।

কৃষকরা জানান, এসব সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল চাষ করে ধান ও পাটের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন তারা। তাই ধান-পাটের চেয়ে এসব কৃষিফসলে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। তা ছাড়া জমিও কম লাগে। প্রতি এক শতাংশ জমিতে সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল চাষ করে ১ থেকে ২ হাজার টাকা আয় হয়। কিন্তু ধান ও পাট চাষে আয় হয় এর চেয়ে অনেক কম।

জানা যায়, এ বছর নকলা উপজেলার বহু কৃষক হলুদ চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। বানেশ্বর্দী, উরফা, চন্দ্রকোনা, গণপদ্দী, চরঅষ্টধর ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের অনেক চাষি হলুদ চাষ করে তাদের সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। অনুর্বর জমিতে কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলায় হলুদ চাষির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার হলুদ সরবরাহ করা হয় আশপাশের জেলাগুলোয়। বাড়ির আঙিনা ও আশপাশে বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের ব্যবহারের জন্য আরও বহু কৃষক প্রায় ১০০ একর জমিতে হলুদ চাষ করেছেন। গণপদ্দী নাজিম উদ্দিন, চন্দ্রকোনার রইছ উদ্দিন, উরফার ফিরোজ মিয়া, চরকৈয়ার গুঞ্জুর, বকুল ও ঝিনাইগাতী উপজেলা সীমান্তের গাড়কোনা, ফাকরাবাদ, গোমড়া, সন্ধ্যাকুড়া, বনগাঁও ও গান্ধিগাঁও গ্রামের বহু চাষী হলুদ, আদা, সবজি এবং মসলাজাতীয় ফসল চাষ করে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম কোরবান আলী জানান, জেলার পরিত্যক্ত উঁচু ভূমিগলো পানি সংকটের কারণে ধান-পাট চাষ করা সম্ভব হতো না। ফলে সেগুলো পতিত পড়ে থাকত। আমাদের পরামর্শে স্বল্প জমির দরিদ্র কৃষক ও প্রান্তিক চাষীরা ধান-পাটের পরিবর্তে সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ শুরু করে। এর মাধ্যমে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে তারা।

(ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :