ভোলায় চলছে অতিথি পাখি নিধন, হারাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য

ইকরামুল আলম, ভোলা
 | প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৯:১৩

ভোলার মধ্য মেঘনা। চারদিকে জলরাশি। শীতের উষ্ণ রোদেলা আলো ঝলমল করছে পানিতে পড়ে। ভেসে আসছে কিচির-মিচির শব্দ। চরের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ে রং-বেরঙের অতিথি পাখি। এক দল ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ছে। আর এক দল চরের পানিতে ডুব-সাঁতার দিয়ে খাবার খাচ্ছে। নয়ন জুড়ানো এক অপরূপ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। যা দেখলে সে কারো মন জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এই অপরূপদৃশ্য বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কিছু সময় পড়েই ভেসে আসতে থাকে অসংখ্য মৃত পাখি।

সরেজমিনে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মাঝামাঝি মেঘনায় চোখে পড়ে এ দৃশ্য। সামান্য টাকার লোভে বিষ টোপ দিয়ে একটি পাখি ধরতে গিয়ে এরকম শত শত পাখি মারা গিয়ে নদীর চরে ভাসছে। এভাবে নির্বিচারে পাখি শিকার করার ফলে পাখিদের আগমন যেমন কমে যাচ্ছে। তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য ও সৌন্দয্য হারাচ্ছে মনো-মুগ্ধকর চরগুলো। অতিথি পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তাদের দৌরাত্ম আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শীত শুরুর সাথে সাথে ভোলার উপকূল ও দূরবর্তী বিভিন্ন চরে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান দেশ থেকে কুইন আই ল্যান্ড অব বাংলাদেশ খ্যাত ভোলায় পাখি আসতে শুরু করে। এসব পরিযাই অতিথি পাখি উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার মাঝের চর, মদনপুর, মেদুয়া, নেয়ামতপুর চরে, চরফ্যাসনের তারুয়া, কুকরী-মুকরী, সাগর কন্যা মনপুরার ঢালচর, চর পালিতাসহ অর্ধশতাধিক ছোট বড় চরে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ অতিথি পাখির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। পাখিদের কলকাতনে মুখর হয়ে উঠেছে চরগুলো। কিন্তু এসব দুর্গম চরাঞ্চলে পাখির জন্য নিরাপদ আবাস স্থল হওয়ার কথা থাকলেও পাখি শিকারিদের কারণে তাদের কোন নিরাপত্তা নেই। খাদ্যের সন্ধানে রং-বেরঙের পাখা মেলা এসব পাখি উড়তে গিয়েই মারা পড়ছে শিকারিদের হাতে। ধানের সাথে বিষাক্ত রাসয়ানিক দ্রব্য, চেতনানাশক দ্রব্য ও জাল ফেলে নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার।

মেঘনার জেলে জামাল মাঝি জানান, প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরতে গেলে মেঘনায় অসংখ্য মরা পাখি ভাসতে দেখা যায়। এছাড়া চরাঞ্চলে অতিথি পাখি মরে পড়ে থাকে। কতিপয় অসাধু জেলে ভাটার সময় নদীতে কীটনাশন জাতীয় দ্রব্য ধানের সাথে মিশিয়ে ছিটিয়ে দেয়। ওই ধান খেয়ে পাখিগুলো পড়ে যায়। অনেক পাখি উড়ে অন্যত্র গিয়ে নদীতে মরে পড়ে যায়। পাখি শিকারি দল অসুস্থ ও মৃত পাখি জবাই করে বাজারের ব্যাগে করে বিভিন্ন হোটেলে ও বাসা বাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করে। এসব পাখি গোপনে প্রতি পিস বিক্রি হয় ৫শ থেকে ৬শ টাকা করে।

ভোলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সামস উল আলম মিঠু বলেন, পাখি শিকারে প্রশাসনের দুর্বল অভিযান ও নজরদারি না থাকায় এ বছর পাখির আগমন কমে গেছে। এতে নষ্ট হচ্ছে চরাঞ্চলের সৌন্দর্য্য। শিকারিদের হাত থেকে পাখি শিকার বন্ধ না করলে ভোলাতে কোন পাখির আগমন ঘটবে না বলে মনে করে এলাকাবাসী। একই সাথে পাখি শিকার বন্ধে আরো সচেতনতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

ভোলা সিভির সার্জন ডা. রথিন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য খাইয়ে নিধন করা এসব অতিথি পাখি মানব দেহের খাদ্য নালিতে প্রদাহ হবে। বারবার এসব খাবার খেলে লিভার কিডনি আক্রান্তসহ ক্যান্সার হওয়ার আশংকা রয়েছে।

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার লে. নাজিউর রহমান বলেন, শিকারিদের হাত থেকে পাখি রক্ষায় তারা নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষভাবে তৎপর রয়েছে। অভিযানের জন্য তাদের সকল স্টেশনকে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান কোস্টগার্ডের এ কর্মকর্তা।

স্থানীয়দের মতে, ভোলার জীববৈচিত্র সংরক্ষণে এসব পাখির লালন জরুরি। পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা সম্ভব না হলে শিগগির এ অঞ্চলটি পাখি শূন্য হয়ে পরবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী।

(ঢাকাটাইমস/৩০ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :