প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিন বলধা গার্ডেনে

নাসিমা আক্তার তূরা, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১১:৩৮| আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১১:৫১
অ- অ+

উহ! এই শহরে থাকতে থাকতে একদম হাঁপিয়ে গেলাম। একটু যদি বেড়ানোর জায়গা থাকে। ছুটির দিন এলেই বাচ্চাদের বায়না, ঘুরতে নিয়ে চলো, ঘুরতে নিয়ে চলো। কিন্তু কোথায় যাবো। ঢাকার বাইরে বেড়াতে যেতে তো কমের পক্ষে এক সপ্তাহ সময় দরকার। সঙ্গে খরচ তো আছেই।

বলছিলেন সুমি নামে এক গৃহিনী। না এটা শুধু তার একার সমস্যা নয়। প্রায়ই শোনা যায় এই ক্ষেদ। কিন্তু আসলে কথাটা পুরো সত্যি না। ঢাকা এবং এর আশপাশেই আছে একদিন বা বারবার যাওয়ার সুন্দর জায়গা। প্রকৃতির অনাবিল ছোট্ট স্বর্গরাজ্যটিতে না গেলে বুঝতেই পারবেন না। তাই ঘুরে আসুন সেই অপূর্ব সুন্দর জায়গা বলধা গার্ডেনে। টিকাটুলি মোড়ে রাজধানী সুপার মার্টেকের উল্টোদিকে খানিকটা হাঁটলেই যাওয়া যায় এই উদ্যানে।

ঢাকার ওয়ারী এলাকায় এই উদ্যানে রয়েছে প্রচুর দুর্লভ গাছপালা। সাবেক ঢাকা জেলা, বর্তমান গাজীপুর জেলার বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০৯ সালে এই উদ্যানটি চালু করেন। তিনি দুটি উদ্যান তৈরি করেন। প্রথম উদ্যানটির নাম রাখেন সাইকি। পরবর্তীতে তৈরি হয় দ্বিতীয় উদ্যান সিবলী।

জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রকম ফুলগাছ ও অন্যান্য উদ্ভিদ এনে রোপন করেছেন নিজের তৈরি এ গার্ডেনে।

১৯৪৩ সালে নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর মৃত্যুর পর কলকাতা হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এর দেখাশুনা করা হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সরকারের আমলে কোর্ট অব ওয়ার্ডস বাগানের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিল। কিন্তু তাদের দুর্বল ব্যবস্থাপনায় বাগানের অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাকিস্তান সরকার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ১৯৬২ সালে বলধা গার্ডেনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয় বন বিভাগকে। বর্তমানে এটি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের একটি স্যাটেলাইট ইউনিট। এ বাগানে মোট ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮ হাজার উদ্ভিদ আছে।

প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত এই উদ্যান খোলা থাকে। বলধা গার্ডেনের টিকিট বর্তমানে জনপ্রতি ৩০ টাকা।

‘ঐতিহ্যবাহী বলধা গার্ডেনের বর্তমান অবস্থা দেখতে এক বিকেলে ছুটেছিলাম জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর এক সময়ের বাগানবাগিতে। ভেতরে ঢুকতেই প্রকৃতির স্নিগ্ধ পরশে প্রশান্তি অনুভূত হল। চারদিকে সবুজের সমারোহ, যা জনবহুল ঢাকা শহরে খুঁজে পাওয়া যায় অসম্ভব। এখানে এসে তাই কিছুক্ষণের মধ্যে ডুবে গেলাম প্রকৃতির সান্নিধ্যে’-বলছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার।

এ গার্ডেনের ‘সাইকি’ অংশে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে লাল, নীল, সাদা, হলুদ জাতের শাপলায় ভরা অনেকগুলো শাপলা হাউস, বিরল প্রজাতির দেশি-বিদেশি ক্যাকটাস, অর্কিড এনয়োরিয়াম, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি ও কৃত্রিম সুরঙ্গসহ একটি ছায়াতরু ঘর।

আর সিবলি অংশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে শংখনদ পুকুর ক্যামেলিয়া, স্বর্ণ অশোক, আফ্রিকান টিউলিপ। আরো আছে সূর্যঘড়ি জয় হাউস। এক সময় এখানে শুধু গোলাপই ছিল ২০০ জাতের। ক্যাকটাসের একটি আলাদা সংগ্রহ ছিল। গোলাপ বা ক্যাকটাসের সংগ্রহ এখন আর আগের মত নেই। তবে অল্প সংখ্যক সংগ্রহ এখনো আছে। এছাড়া আছে কৃষ্ণবট, ক্যামেলিয়া, আমাজান, লিলি প্রভৃতি। দুর্লভ উদ্ভিদ বলতে ব্রনস ফেসসিয়া রয়েছে।

এটা দেখতে হলে গার্ডেনের গেট দিয়ে ঢুকে একটু সামনে গিয়ে ডান দিকে যেতে হবে। দুর্লভ উদ্ভিদের পাশাপাশি কিছু দেশীয় উদ্ভিদ যেমন কামরাঙা, বিচিত্র রাবার, টগর, হরিতকি, বহেড়া, ডেউয়া, বুদ নারিকেল, বোতলপাম, মিষ্টি তেঁতুল, জামরুল, সফেদা, খেজুর, সুপারি রয়েছে।

গার্ডেনের ভেতরে সূর্যঘড়ির একটি স্থাপনা আছে। সূর্যের মাধ্যমে সময় অবলোকন করা যায়। এটির অবস্থান গেট দিয়ে ঢুকে ৮০ থেকে ১০০ গজের মধ্যে। এর কাছে রাস্তার বামপাশে একটা শান বাঁধানো পুকুর রয়েছে।

গার্ডেন কর্তৃপক্ষ জানায়, অনেকে সময় কাটানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বলধা গার্ডেনে আসেন। তবে স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের বেশি আসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

প্রতি বছর বন বিভাগ এ গার্ডেন ইজারা দিয়ে থাকে। এ বছর ইজারা নিয়েছেন সুমন মিয়া নামে একজন। তিনি জানান বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণে ২০ জনের মতো লোক কাজ করেন।

বলধা গার্ডেনে বসে ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতা লিখেছিলেন।

তবে গার্ডেনে এসে সূর্যঘড়ি কাজ করতে না দেখে কিছুটা হতাশ হলেন তাওহিদুল ইসলাম। কারণ আশপাশের বিরাট অট্টালিকাগুলো সূর্যেও আলো আসতে বাধা দিচ্ছে। তাওহিদ বলেন, ‘এই ঘড়ির কথা শুনেছিলাম লোকমুখে। সচল দেখতে পারলে ভালো লাগতো। তারপরও এখানে এসে দারুণ লাগছে। বলতে পারেন, এই শহরের ধূলাবালির মধ্যে একটু প্রাণভরে নিঃশ্বাস ফেলতে পারলাম।’

ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/ডব্লিউবি

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাকিস্তানে ভারতের হামলায় নিহতের সংখ্যা কত? যা জানালো সেনাবাহিনী
ভারতীয় সেনারা সীমান্তে ‘সাদা পতাকা’ উড়িয়ে পালালো
কুবির বিজয়-২৪ হলে মাদক বিরোধী অভিযানে মাদকদ্রব্য উদ্ধার
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে দাম কমে গেল ভারতীয় রুপির
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা