সিলেটের আস্তানায় বড় জঙ্গি থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় যে বাড়িটিতে সেনাবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে তাতে বড় কোনো জঙ্গি নেতা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে এই প্রশ্নের জবাব পেতে অভিযান শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতা দিবসে রবিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।
গত জুলাই থেকে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে ৩৫ জনেরও বেশি মানুষ। এদের মধ্যে সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপতায় নেতৃত্বদানকারী হিসেবে চিহ্নিত তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, নুরুল ইসলাম মারজান, হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের প্রশিক্ষক হিসেবে চিহ্নিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামও রয়েছেন। তবে জঙ্গিরা একজন নেতার মৃত্যুর পর অন্য একজনকে নেতৃত্বে বসায় জানিয়ে পুলিশ বলছে, শীর্ষ জঙ্গিদের ধরতেও তাদের অভিযান চলছে। গত ডিসেম্বরে ঢাকার আশকোনায় একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে এমন একজন জঙ্গি নেতা মুসাকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। মুসাই এখন জঙ্গি তৎপরতার নেতৃত্বে থাকাদের একজন বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সীতাকুণ্ডের দুটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর গত শুক্রবার ভোরে দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহল নামে একটি বাড়ির নিচতলায় সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখে পুলিশ। পরে অভিযান চালাতে সেখানে যায় সোয়াট নামে পুলিশের বিশেষ ইউনিট। তবে তাদের পক্ষে সেখানে অভিযান চালানো বিপজ্জনক জানানোর পর পাঠানো হয় সেনা কমান্ডো দলকে।
শনিবার সকালে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টাতেও সন্দেহভাজন জঙ্গিদেরকে পরাভূত করা যায়নি। এর আগে ‘সময় নাই, তাড়াতাড়ি সোয়াট পাঠাও’ জাতীয় বক্তব্য দিয়ে ভেতরে থাকা ‘জঙ্গিরা’ কার্যত পুলিশকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল।’
গত বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে যতগুলো বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে, তার কোনোটাতেই এত বেশি প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। কিন্তু সিলেটের এই আস্তানায় জঙ্গিরা মরিয়া বলেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এই অভিযানস্থলের অদূরে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে যাতে ছয় জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছে ৫০ জনের মত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ওই আস্তানার ভেতরে থাকা সন্দেহভাজন জঙ্গিরা শক্তিশালী বিস্ফোরক মজুদ করে রেখেছে বলেই তাদের ধারণা। এ কারণে ঝুঁকি নেয়া যাচ্ছে না। আর শনিবার রাতের বিস্ফোরণ তাদেরকে আরও ভাবিয়ে তুলেছে। ভেতরের ‘জঙ্গি’দের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবেই বাইরের এই হামলা হয়েছে বলেই ধারণা তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও অভিযান চলছে, অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে বড় কোনো জঙ্গি নেতা থাকতে পারে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবসময় বলে এসেছি জঙ্গি নির্মূল হয়নি তবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেলেই ষড়যন্ত্র করছে, তারা এখনও সক্রিয় রয়েছে। তবে জনগণ যেহেতু জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না, সেহেতু তারা টিকতে পারবে না।’
গত ১৭ মার্চ উত্তরার আশকোনায় র্যাবের নির্মাণাধীন সদরপ্তরে ‘আত্মঘাতী’ হামলা, ২৪ মার্চ বিমানবন্দর গোলচত্বরে বিস্ফোরণে যুবকের প্রাণহানীর পর সিলেটের এই বিস্ফোরণেরও দায় স্বীকার করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েও দেশের কোথাও জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) শনাক্ত করার সৌভাগ্য হয়নি…দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোনো নেতাই আইএসের অনুসন্ধান দিতে পারেননি। আমরা যদি আইএস শনাক্ত করতে পারতাম তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতাম।’
বাংলাদেশে ২০১৫ সালে বেশ কিছু গুপ্তহত্যা এবং ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পরও আইএসের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করার দাবি প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। সম্প্রতি ১৪ দেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে হওয়া আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা নিয়ে তথা হয়। জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে এক গবেষক বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে এদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে বাংলাদেশ সরকার আইএসের অস্তিত্ব স্বীকার করতে চায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এসব তৎপরতায় জড়িত নব্য জেএমবি নামে সংগঠন।
(ঢাকাটাইমস/২৬মার্চ/ডব্লিউবি)

মন্তব্য করুন