সালিশে কিশোরীকে জুতাপেটায় মানবাধিকার কর্মী
মাদারীপুরে ‘খারাপ চরিত্র’ আখ্যা দিয়ে কিশোরীকে জুতাপেটার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক মানবাধিকার কর্মীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর সালিশ করে ওই কিশোরীকে জুতাপেটা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগী কিশোরী জানিয়েছেন, যে সালিশে তাকে জুতাপেটা করা হয় সেখানে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তাকারী সংগঠন মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশনের কর্মী আকলিমা বেগম আইন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজেও ওই কিশোরীকে জুতাপেটা করেন।
সালিশের নামে অবৈধ সাজা দেয়ায় মানবাধিকার কর্মীর সম্পৃক্ততার তথ্যে নিন্দা জানিয়েছেন মাদারীপুরে সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য এনায়েত হোসেন নান্নু। ঢাকাটাইমসে তিনি বলেন, ‘সমাজে ছোটখাটো কিছু বিষয় স্থানীয় সালিশে মীমাংসা হতে পারে। তাই বলে নারী ও শিশুঘটিত এমন ঘটনার মীমাংসা করার ক্ষমতা স্থানীয় সালিশকারদের নেই। এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের কঠোর বিচার হওয়া উচিত।’
যে প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে কাজ করতেন আকলিমা বেগম সেই প্রতিষ্ঠান মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়শনের প্রধান সমন্বয়কারী খান মো. শহীদ বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা স্থানীয় পর্যায়ে সমাজভিত্তিক কমিটি করে থাকি স্থানীয় লোকজন নিয়ে। এতে যদি কেউ অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে জড়িত থাকে, তাহলে আমরা তাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করি। ওই কিশোরীর পরিবার যদি আইনগত সহায়ত চায়, আমরা সংস্থার পক্ষ থেকে সহযোগিতার করব।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি জানার জন্যে মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তারকে জানানো হয়েছিল। তারা ঘটনা বিস্তরিত শুনেছে। এখন যদি নির্যাতিতার পরিবার মামলা দেয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় সালিসকারীদের ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে নির্যাতিতা কিশোরীটির পরিবার। তাদের অভিযোগ নিরাপত্তাহীনতায় থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কোন ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়নি। বরং স্থানীয় পর্যায়ে তাদের একঘরে করে করেছে প্রভাবশালীরা।
এই ঘটনায় মাদারীপুর মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কয়েকটি মাবনাধিকার সংগঠনের লোকজন কিশোরীর বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছে। তবে তাদের আইনগত কোন সহায়ত দেয়ার উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসনের তরফ থেকে।
স্থানীয়রা জানায়, গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে শহরের মধ্য খাগদি এলাকার কিশোরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় একই এলাকার একটি যুবক। পরে মেয়েটিকে বিক্রি করে দেন ওই যুবক। বিষয়টি ওই কিশোরীর পরিবার জানতে পেরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগছাড়ার করমবাজার থেকে কিশোরীটিকে উদ্ধার করে।
পরদিন বিকালে বিষয়টি সালিস মীমাংসা করেন স্থানীয় কয়েকজন মাতুব্বর। সেখানে মেয়েটিকেই দোষী আখ্যা দিয়ে তাকে ১০টি জুটাপেটা করা হয়।
মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী আকলিমা বেগম ছাড়াও ওই শালিসে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আইয়ুব খান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজাম খান, সাবেক কাউন্সিলর সামসুল হক খান, স্থানীয় প্রভাবশালী সেলিম মীরা, খবির খান প্রমুখ।
আর আইয়ুব খান, মুজাম খান, সামসুল হক খানের সিদ্ধান্তে ওই কিশোরীকে দোষী সাব্যস্থ করা হয়। প্রকাশ্যে দেয়া হয় ১০টি জুটাপেটা।
ঢাকাটাইমস/২৮ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি