ভদ্রবেশে মাদক ব্যবসা করত ইয়াবা সম্রাট আলম: র্যাব
মিয়ানমার থেকে আসা এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে দ্রুত বড়লোক হতে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা সম্রাট মো. আলম। ভদ্রবেশে মাদক ব্যবসার সহযোগী হিসেবে নেয় নিজের ভাই মো. জসিম উদ্দিনকে। তাদের বাড়ি কক্সবাজার হলেও রাজধানীতে ফ্ল্যাট ভাড়া করে দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছিল ইয়াবা ব্যবসা।
তবে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) জালে ধরা পড়ে যায় দুই ভাইয়ের মাদক ব্যবসা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার বিকালে রাজধানীর হাজারীবাগ থানার পশ্চিম ধানমন্ডি এলাকা থেকে দুইভাইসহ তাদের দুই সহযোগী মো. সালাউদ্দিন (২৭) এবং মো. মিজানুর রহমানকে (৩৩) গ্রেপ্তার করে র্যাব-২।
এ সময় তাদের কাছ থেকে এক লাখ ২৩ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৮১ হাজার নগদ টাকা, সাতটি সিমসহ মোবাইল ফোন, একটি ট্রলি ব্যাগ, তিনটি নোটবুক, একটি ক্যালকুলেটর, দুইটি ভিজিটিং কার্ড বক্স উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার সময়ে রাজধানীর কাওরানবাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র্যাব-২ এর সিইও লে. কর্নেল আনোয়ারুজ্জামান।
আলমকে ‘ইয়াবা সম্রাট’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে কর্নেল আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আগে তারা এলাকার বন্ধুদের সহযোগিতায় চিংড়ি মাছের পোনার ব্যবসা, কটেজের ব্যবসা, জমি কেনাবেচার ব্যবসা করে কিছুটা উন্নতি করলেও একপর্যায়ে আলম ইয়াবা নেশায় আসক্ত হয়ে নিজেই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।’
লে. কর্নেল আনোয়ারুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আলম জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানিয়েছে, সে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। একপর্যায়ে মিয়ানমার থেকে আসা অজ্ঞাতনামা এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্র ধরে নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। পরে মাদক ব্যবসাকে বড় পরিসরে রুপান্তরের লক্ষ্যে নতুন পুরাতন গাড়ি কেনাবেচা ব্যবসার আড়ালে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে তার কক্সবাজারের কলাতলী, শামীম গেষ্ট হাউজে মজুদ করে কখনো প্রাইভেট কারে, কখনো পিকআপে, বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টে, পরিবহন বাসে, বডি পরিবর্তন করে ঢাকায় নিয়ে আসে। দীর্ঘদিন ধরে ভদ্রবেশে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সুকৌশলে ইয়াবা ট্যাবলেট রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করে আসছিল।
র্যাব-২ অধিনায়ক আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত জসিম উদ্দিন মাদক স¤্রাট আলমের ছোট ভাই। তিনি ঢাকা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার খরচ চালাতে মাদক ব্যবসায়ী বড় ভাইয়ের পরামর্শে সে তার স্কুল, কলেজ পড়–য়া মাদকসেবী বন্ধুদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিয়মিতভাবে ইয়াবা সরবরাহ করত এবং মাদকের আসর বসানোর জন্য আলাদা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করত।
তাদের সহযোগী সালাউদ্দিন র্যাবকে জানিয়েছে, সে কক্সবাজার পৌর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সে মোটর গাড়ির গ্যারেজে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করার সুবাদে মাদক ব্যবসায়ী আলমের সাথে পরিচয় হয় ও তার সহযোগী হিসেবে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।
লে. কর্নেল আনোয়ারুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মিজানুর রহমান কক্সবাজার জেলার রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সে উখিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাসের গাড়ি চালক হিসেবে কাজ করার সুবাদে মাদক ব্যবসায়ী আলমের সঙ্গে পরিচয় হয়। বাড়তি আয়ের নেশায় মাদক ব্যবসায়ী আলম তাকে প্রলুব্ধ করে মাদক পরিবহন ও ব্যবসার কাজে জড়িয়ে ফেলে।
ঢাকাটাইমস/১৫ মার্চ/এএ/ডিএম