মঠবাড়িয়ার ১৫ শহীদের আজো স্বীকৃতি মেলেনি

সৈয়দ মাহ্ফুজ রহমান, পিরোজপুর
 | প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:১৬

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজার হিন্দু অধ্যুষিত ভীমনলী গ্রামে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে ১৫ শহীদের স্বীকৃতি আজও মেলেনি। সেই সাথে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে তাদের সমাধিস্থল। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়ও এই বীরদের নামও লিপিবদ্ধ হয়নি অজ্ঞাত কারণে। আর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি। বীর শহীদ পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় যেমন স্বীকৃতি পায়নি, তেমনি মুক্তি সংগ্রামে বীরত্বগাঁথা ইতিহাস অজানাই রয়ে গেছে নতুন প্রজন্মের কাছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নে অর্ধ সহস্রাধিক সদস্য মিলে আলবদর ও রাজাকার বাহিনী গড়ে এলাকায় হিন্দুদের ঘরবাড়িতে লুটতরাজ, গণহত্যা ও নারী নির্যাতন চালায়। এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়াত ও হিন্দুদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ভীমনলী গ্রামের বাড়ৈ বাড়ি রাজাকারদের বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয়। তারা পরিকল্পিতভাবে ’৭১-এর মে মাসে বাড়ৈবাড়িতে আক্রমণ চালায়। রাজাকার দল ভীমনলী গ্রামের ৮০টি হিন্দু বাড়িতে পালাক্রমে তাণ্ডব চালিয়ে ব্যাপক লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ করে।

সেদিন রাজাকারদের আক্রমণ প্রতিহত করতে মুক্তিযোদ্ধারা চেষ্টা চালিয়ে রাজাকার লালু খাঁ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। সেদিন দুই হাঁটু আর কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন সাপলেজা মডেল হাইস্কুলের শিক্ষক রমেশ চন্দ্র মিস্ত্রী (৫৮)। তবে তার বড় ভাই গণেশ চন্দ্র মিস্ত্রী শহীদ হন।

আর রাজাকারদের গুলিতে ১৫ মুক্তিকামী বাঙালি শহীদ হন। এরা হলেন- যীতেন্দ্রনাথ বাড়ৈ, সুরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ ও উপেন্দ্র নাথ বাড়ৈ (তিন ভাই), নিশিকান্ত বাড়ৈ ও তার বড় ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ বাড়ৈ, জগদীশ চন্দ্র বাড়ৈ, গণেশচন্দ্র মিস্ত্রী, ভূপাল মিস্ত্রী, বলরাম মিস্ত্রী, ষষ্ঠী হাওলাদার, বসন্ত মিস্ত্রী, সখানাথ খরাতি, ঠাকুর চাঁদ মিস্ত্রী, নেপাল চন্দ্র মিস্ত্রী ও বিনোদ চন্দ্র বিশ্বাস শহীদ হন। পরে এসব শহীদদের একই স্থানে গণসমাধি দেয়া হয়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যাওয়া সাপলেজা মডেল হাইস্কুলের শিক্ষক রমেশ চন্দ্র মিস্ত্রী স্বজন হারানার দুঃখ-ব্যাথা আর ক্ষোভ নিয়ে বলেন, সেদিনের সেই সম্মুখযুদ্ধ ছিল সশস্ত্র রাজাকারদের সাথে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র বাঙালির। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ আর আশ্রয়হীন বাঙালিকে আশ্রয় দেয়াই ছিল আমাদের অপরাধ। আমাদের দুর্ভাগ্য এই বীরত্বগাঁথা আর ১৫ বাঙালির এ জীবনদান আজও স্বীকৃতি পেল না।

মুক্তিযোদ্ধা বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ভীমনলীর ১৫ শহীদকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বহুবার শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু আজও এটি হয়নি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার বাচ্চু মিয়া আকন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে উপকূলীয় মঠবাড়িয়ায় স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে যতগুলো সম্মুখযুদ্ধ হয়েছে- তার মধ্যে ভীমনলী গ্রামের বাড়ৈবাড়ির সম্মুখযুদ্ধ অন্যতম। ইতিহাসে এই বীরত্ব আজও অস্বীকৃত রয়ে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান আর আশ্রয়হীন বাঙালিদের আশ্রয়ের অপরাধে রাজাকারদের হামলা শিকার ও তা প্রতিহত করতে সেদিন মুক্তিকামী বাঙালি সম্মুখ লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২২ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :