তাপপ্রবাহের তীব্রতা অনুভবের মূল কারণ ভুল নগরদর্শন: ইকবাল হাবিব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০৪ | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:১২

দেশের নগরীগুলোতে তাপপ্রবাহ অনুভবের তীব্রতা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ হলো ভুল নগরদর্শন বলে মন্তব্য করেছেন স্থপতি ইকবাল হাবিব।

মঙ্গলবার সকালে ‘নগর তাপদাহের তীব্রতা: প্রেক্ষিত ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, দেশের নগরীগুলোতে তাপপ্রবাহ অনুভবের এই তীব্রতা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ হলো ভুল নগরদর্শন। নব্বই দশকের পর নগরীগুলোতে অপরিকল্পিত, মানববিচ্ছিন্ন এবং পরিবেশের বৈরী কর্মধারার মধ্য দিয়ে দ্রুতগতির নগরায়নের ধারার যে বিকাশ, আজকের এই নগরীগুলোর অভিঘাত তারই প্রকাশ।

এই স্থপতি বলেন, দেশে বর্তমানে তাপপ্রবাহের যে মাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে, তা এ দেশে নতুন নয়। ঐতিহাসিকভাবে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। ঢাকার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পরবর্তী সময়ে ২০১৪ এবং ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, পৃথিবীর উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে ২০২৪ সাল। জাতিসংঘের আবহাওয়া সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্টে গত এক দশকে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ে প্রায় ১ দশমিক ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বরাবরই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির তালিকায় অন্যতম। পাশাপাশি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ‘এল নিনো’র প্রভাব, বাংলাদেশে চরমভাবাপন্ন পরিবেশ ও আবহাওয়ার সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনে অসংগতি দেখা দিচ্ছে।

ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ দিক থেকে আগত মৌসুমি বায়ুর দ্রুত আগমন ঘটছে। আবার অপরদিকে উত্তর দিক থেকে আগত আন্তঃদেশীয় দূষিত ও উষ্ণ বায়ুর প্রবেশ ঘটছে দেশীয় আবহাওয়ায়। এছাড়া নদীর ওপর বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদী শাসন ও খনন ব্যবস্থাপনার অভাবে নদীমাতৃক এই দেশের নদীগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে উত্তপ্ততার পরিধি বাড়ছে, তাপমাত্রা সীমাহীন না হলেও তীব্র দাবদাহ অনুভূত হচ্ছে।

সবুজায়ন ও বনায়ন প্রেক্ষিতে স্থপতি ইকবাল বলেন, বাংলাদেশে বনজ সম্পদ ও বনভূমির অবক্ষয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশে ভূখণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অপরিহার্য। বাংলাদেশের বন বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে বন আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট ভূমির ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাব মতে, বাংলাদেশে বার্ষিক ২ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বন উজাড় হয়েছে যা বার্ষিক বৈশ্বিক গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ। গত ১৭ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৬৬ বর্গকিলোমিটার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট ধ্বংস করা হয়েছে।

‘রাইজিং টাইডস, রোরিং ফিউচার্স: দ্য সুন্দরবনস কোয়েস্ট ফর সারভাইভাল-২০২৪’ শীর্ষক গবেষণার বরাত দিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ দশকে সুন্দরবনের ঘন বনাঞ্চল ২৭ ভাগ কমেছে। পাশাপাশি দেশের নগরগুলোসহ বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে বৃক্ষশোভিত সড়কগুলোর আচ্ছাদনকে দ্রুততম সময়ে বৃক্ষহীন মরুকরণ যাত্রায় মারণমুখী চেষ্টাও বিগত দিনগুলোতে দৃশ্যমান। বায়ুমণ্ডলে মানুষের বসবাসা স্তরে ছায়াঘেরা ৫ থেকে ৬ গুণ শীতল পরিবেশ বা মাইক্রোব্লাইমেটে বজায় রাখার সবুজ বৃক্ষরাজির আবরণকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে।

জলাশয় ও জলাধার কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট জলাশয়, খাল, পুকুরসহ অন্যান্য জলাধার সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না করে বরং দখলদারদের কাছে জিম্মি হওয়ার একটি মনোবৃত্তি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়েছে। নগরীর বৃক্ষরাজির পাশাপাশি জলাশয় জলধারা (নীল আন্তঃসংযোগ)-কে ক্রমাগত বিলুপ্ত হতে দেওয়া এবং এর রক্ষণ ও সংরক্ষণ (কনজারভেশন ও প্রিজারভেশন) এই দুটো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ভারসাম্যমূলক এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিত না করাই এর মূল দায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, আমরা শহরে এন্টি ন্যাচারাল কাজ করছি। সরকারি কর্মকর্তারা সবুজায়ন করার নানা প্রকল্প গ্রহণ করলেও ভালো ফলাফল কোনোটিতেও আসেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান অবস্থার জন্য সরাসরি রাষ্ট্র দায়ী৷ আমরা যদি সবুজায়ন ফিরিয়ে আনতে না পারি তাহলে দেশের অবস্থা প্রতিনিয়ত খারাপের দিক যাবে।

বাপা সভাপতি ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা করেন না। রাজনীতিবিদদের দেশের সবুজায়ন নিয়ে আরও সচেতন হওয়া জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মিহির লাল সাহা প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/এমআই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন ৩২ হাজার ৭১৯ বাংলাদেশি

এবার চতুর্থ শীর্ষ চূড়া লোৎসে জয় বাবর আলীর

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ ও তার পরিবারের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ঢাকাসহ ১২ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা, নদীবন্দরে সতর্কতা

দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু

রাত পোহালে ভোট, ১৫৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৬০৩ জন

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশংসায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি

কিরগিজস্তানে ভালো আছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিদেশে গিয়ে কাগজপত্র সত্যায়নের ঝামেলা আর থাকছে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আসছে বঙ্গবন্ধু শান্তি পদক, মূল্যমান ১ লাখ মার্কিন ডলার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :