আমানতে আবগারি শুল্ক হবে আত্মঘাতী
আগামী জাতীয় বাজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা পৃথিবীর কোথাও নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, আমানতে আবগারি শুল্ক বিষয়টি নেতিবাচক। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সেটা হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তাতে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন, কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক লাখ টাকা জমা হলেই ৮০০ টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হবে। এ নিয়ে সব মহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে ঢাকাটাইমস মুখোমুখি হয় অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ এই অধ্যাপকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।
স্যার, কেমন আছেন?
ভালো আছি। তবে অর্থমন্ত্রী যে বাজেট দিলেন সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি।
কেমন চিন্তা, স্যার?
চিন্তা হলো মানুষের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ। এটা কোনোভাবেই উচিত হয়নি।
এটার মধ্যে সমস্যা কোথায়, স্যার?
সমস্যা হলো আমি ৪৫ বছর অধ্যাপনা করছি। আমার বেতন লাখের কোটায়। আমি তো এমনিতেই সরকারকে ট্যাক্স দেই। এরপর আমার আমানতের মধ্যেও শুল্কারোপ। এটা মোটেই কাম্য ছিল না। এ কারণে মানুষ সেভিংসে নিরুৎসাহিত হবে।
আর কোনো দেশে কি এমন হয়?
আমার জানামতে পৃথিবীর আর কোনো দেশে আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ করে না। এটা করা উচিত নয়।
আবগারি শুল্কের নেতিবাচক দিক কী?
আবগারি শুল্ক ধারণাটাই নেতিবাচক। এর মধ্যে কোনো ইতিবাচক দিক নেই। মানুষ কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে কিছু টাকা ব্যাংকে জমায় ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রেখে। কিন্তু আবগারি শুল্ক আরোপের ফলে মানুষ টাকা আর আমানত করবে না। ব্যাংকে অর্থ ডিপোজিটে নিরুৎসাহিত হবে মানুষ।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, লাখপতিরা সবাই সম্পদশালী, বাড়তি অর্থ দিতে সক্ষম।
অর্থমন্ত্রী এটা বলতে পারেন না। তাহলে তো যারা দিনমজুর খেটে অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করে তাদেরও কি সম্পদশালী বলা যাবে। এটা অর্থমন্ত্রী কীভাবে বললেন সেটা আমার বুঝে আসে না।
আবগারি শুল্কের বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
আবগারি শুল্ক বাদ দিতে হবে। আমানতের ওপর কোনো কর ধরা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা উচিত। অন্যথায় এটা হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী। সামনে নির্বাচন। এই সময় কার পরামর্শে অর্থমন্ত্রী এমন বিষয় বাজেটে আনলেন আমার বুঝে আসে না। এই সিদ্ধান্ত সার্বিকভাবে মানুষের মনে সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দেবে।
এর বিকল্প কী হতে পারে?
মানুষের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ না করে লাভের ওপর এটি আরোপ করা যেত। লাভ যত হবে তার ওপর শুল্ক আরোপ করা যেত। এটা মানুষ মেনে নিত। কিন্তু এখন আমানতেই সরকার হাত দিচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করবে না।
বাজেটের আকার তো বেশ বড়?
বাজেটের আকার বেশ বড়। এটা ঠিকই আছে। দেশের অর্থনীতি বড় হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সে হিসেবে বাজেটের আকার ঠিকই আছে। তবে বাজেট ব্যবস্থাপনা বা বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা কম।
কেমন সক্ষমতা চাই?
বাজেটের যে আকার সেটি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে দক্ষ জনশক্তি দরকার। যেটা ঘাটতি আছে। ট্যাক্স বসানো হলো কিন্তু আদায় হলো না, তাতে তো লাভ নেই। এটার বাস্তবায়নই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
১৫ শতাংশ ভ্যাট?
অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন ১৫ শতাংশ থেকে ভ্যাট কমানো হবে। কিন্তু তিনি কথা রাখলেন না। অন্তত ১২ শতাংশ করতে পারতেন। ভ্যাটের আওতা বাড়ছে। সুতরাং ভ্যাট কমিয়ে দিলে কোনো সমস্যা নেই।
এবার অনেক জিনিসেই নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস।
এটাও ঠিক হয়নি। কারণ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মানুষই দেশে বেশি। এদের ওপরই এই খড়্গ নামছে। কিন্তু যারা এ দেশে সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী তাদের কোনো সমস্যা নেই। তারা সমানে ব্যবসা করে চলেছে। শিশু সামগ্রীর ওপরও বেশি ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
ফুড সাপ্লিমেন্টের ওপরও বেশি ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। কারণ যেখানে আমরা শিশুপুষ্টির কথা বলছি, সেখানে আবার ভ্যাট বেশি আরোপ করা ঠিক হয়নি। বরং উচিত ছিল ভ্যাটের আওতা বাড়ানো। ভ্যাট কমিয়ে আনা। এতে করে বিক্রি বেশি হতো, টাকা বেশি আয় হতো। এখন বিক্রি কম হবে। মানুষ কিনতে আগ্রহী হবে না।
বাজেট নিয়ে সার্বিকভাবে আপনার পরামর্শ কী?
আমানত থেকে অবশ্যই আবগারি শুল্ক বাদ দিতে হবে। একজন মানুষ যদি এক লাখ টাকা বেতন পান, প্রতি মাসেই ওই বেতন থেকে টাকা কাটবে। এটা তো হতে পারে না। এটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ থেকে ভ্যাট কমাতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে ভ্যাট তুলে দিতে হবে।
ধন্যবাদ স্যার, সময় দেয়ার জন্য।
ঢাকাটাইমস ও তোমাকেও ধন্যবাদ।
(ঢাকাটাইমস/৩জুন/মোআ)