ঘুরে আসুন ফল মেলায়
ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপলি, হাড়িভাঙ্গাসহ একইস্থানে নানা জাতের আম ভাবা যায়? শুধু আমই নয়, আনারস, কাঁঠাল, কলা, কামরাঙ্গা, খেঁজুর, আপেল, লেবু, তাল, লটকনসহ অন্যান্য ফলও পাওয়া একইস্থানে। স্থানটি রাজধানীর খামারবাড়ির আ ক ম গিয়াস উদ্দিন মিলকি অডিটরিয়াম চত্বর। এখানে নানা জাতের ফল নিয়ে শুরু হয়েছে জাতীয় ফল মেলা ২০১৭।
শুক্রবার সকালে মেলার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিন দিনব্যাপী মেলা চলবে আগামী রবিবার পর্যন্ত।
মেলার প্রথম দিন সকাল থেকে রাজধানীতে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আকাশ এখনও মেঘলা। কিন্ত মেলায় গিয়ে এর কোনো প্রভাবই দেখা গেল না। বৃষ্টিতে উপেক্ষা করে মেলায় এসেছেন অসংখ্য ফলপ্রেমী। জুমার দিন হওয়ায় সকালের দিকে ভিড় কিছুটা কম থাকলেও সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলপ্রেমীদের ভিড় জমছে ফলমেলায়। প্রথমদিনেই মেলা দারুন জমে উঠেছে।
মেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্টলে কথা হয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রেজওয়ানা রহমানের সঙ্গে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘প্রথমদিনেই মেলা বেশ জমে উঠেছে। দেশি ফলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এছাড়া বিদেশি ফলের তুলনায় দেশি ফল তাজা পাওয়া যায়। আবার দামও অনেক কম।’ তিনি বলেন, ‘মেলায় অনেক ফলের প্রদর্শনী হচ্ছে। এখান থেকে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন ফল সম্পর্কে ধারনা পাবে। মেলার বিভিন্ন স্টলে ফল বিক্রিও হচ্ছে। তবে আমরা শুধু প্রদর্শনী করছি।’
এসব ফলের চারা কোথায় পাওয়া যাবে এ সম্পর্কে রেজওয়ানা বলেন, ‘খামারবাড়ির হটি কালচার উইংয়ে যোগাযোগ করলে এ ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যাবে।’
মেলার প্রবেশ গেট দিয়ে ঢুকলেই সামনে চোখে পড়বে উঁচু একটি স্তর। এখানে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল সাজানো আছে। বিভিন্ন প্রকার আম, আনারস, কাঁঠাল, কলা, লেবু, কামরাঙ্গা, খেঁজুর, আপেল, লেবু, তাল, লটকনসহ বিভিন্ন ফল দিয়ে সাজানো।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন স্টলে দেখা গেল আম, কাঁঠাল, কলা, তরমুজ, ফজলি আমসহ বিভিন্ন ফল। তবে এখানে শুধু ল্যাংড়া ও হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে। আর বাকি ফল প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। প্রতি কেজি হিমসাগর ৫৫ টাকা এবং ল্যাংড়া ও আম্রপলি আম ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া অনেকের কাছে অপরিচিত অনেক ফলও প্রদর্শিত হচ্ছে মেলায়। এগুলোর মধ্যে আছে আঁশফল, টক আতা, তেশা, রংপুর লাইম, তিতকড়া, কালামানসি, ড্রাগফ্রুট।
মেলায় আসা দর্শনাথী মাহফুজ বলেন, এমন ফলের নাম জীবনে কখনো শুনিনি। মেলায় এসে প্রথম দেখলাম। নতুন ফলের সঙ্গে পরিচিতি হতে পেরে বেশ ভালই লাগছে। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন তার সঙ্গে আসা বন্ধুরা ফলের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
খাগড়াছড়ি মারমা ফলদ বাগান মালিক সমিতির স্টলে দেখা গেল আনারস, আম, লেবু, কলা বিক্রি করতে। কথা হয় সমিতির সভাপতি আবুশি মারমার সঙ্গে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে শুধু আনারস আর কলাই হয় না। এখানকার আম্রপলি আম খুব সুস্বাদু। আমাদের এলাকার ফলকে পরিচিত করে তোলায় জন্য মেলায় আসা।
তিনি জানান, প্রতি কেজি আম ১২০ টাকা, আনারস জোড়া আশি টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলের স্টলের দায়িত্বে থাকা উমাচি জানান, আমাদের এসব ফলে কোনো কেমিক্যাল দেয়া নেই। খাগড়াছড়ি থেকে আনায় ফলের দাম একুট বেশি।
মায়ের সঙ্গে মেলায় এসেছে স্কুলছাত্র হাসিব। মাকে বায়না ধরছে মেলায় আরও কিছু্ সময় থাকার জন্য। কিন্তু বাসায় ইফতারের আয়োজন করতে হবে বলে ছেলেকে মেলা থেকে নেয়ার চেষ্টা করছেন মা। তারপরেও ছেলের আবদার ‘মা আর একটু থাকি না, এখনতো সব ফল দেখা হয়নি।’ ছেলের এমন আবদারে আবার মেলায় আনার আশ্বাস দিয়ে ছেলে বাড়ি যেতে রাজি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রিতা ও হাবিবাকে দেখা গেল ফলের সঙ্গে ছবি তুলতে। ঢাকাটাইমসকে তারা বলেন, আমাদের দেশে এত ফল হয়, এখানে না আসলে জানতাম না। তারা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এসব ফলের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আহ্বান জানান।
মেলায় আম কিনেছেন বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী ইকরামুল হাসান। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, মেলায় ৬০০ টাকা দিয়ে পাঁচ কেজি হাড়িভাঙ্গা আম কিনেছি। রংপুরের বিখ্যাত আম এটি। স্বাদেও অনেক হওয়ায় আমার পরিবার এই আম অনেক পছন্দ করে। ভেজালমুক্ত আম পাওয়ার আশায় কষ্ট হলেও মেলায় এসে আম কিনেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি, অর্থ চাই, দেশি ফলের গাছ লাগাই’ স্লোগানে শুরু হওয়া মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে দেশে উৎপাদিত সকল ধরনের ফল ও ফলদ বৃক্ষ।
মেলা সবার জন্য উম্মুক্ত রয়েছে। এখনে প্রবেশ করতে লাগবে না কোনো টিকিট। প্রতিদিন সকাল নয়টায় থেকে শুরু হয়ে মেলা চলবে রাত আটটা পর্যন্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গোলাম মারুফ জানান, মেলায় আগতরা দেশীয় বিলুপ্ত প্রায় ফল ও ফলের গাছ সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন। এখানে নতুন জাতের ফলের গাছও প্রদর্শন করা হচ্ছে।
ঢাকাটাইমস/১৬জুন/জেআর/এমআর