নদীপাড়ের মানুষ (পর্ব-৪)

বন্যার ক্ষতে বিধ্বস্ত জনজীবন

প্রতীক ওমর, বগুড়া
 | প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:২৩

পরপর দুই দফা বন্যায় বগুড়ার তিন উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, কালভার্ট, ব্রিজ, কৃষকের ফসল- সবকিছু তছনছ হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে নদীপারের জনবসতি। সোনাতলা, ধুনট, সারিয়াকান্দি উপজেলাতেই প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এই তিন উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা চর। যমুনা এবং বাঙালি নদী এই তিন উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে বাঙালি নদী তেমন সমস্যা না করলেও যমুনার করালগ্রাস বর্ষা মৌসুমে ব্যাপকভাবে আঘাত করে নদীপারের মানুষদের।

তিন মাস আগেই বন্যার পানি নেমে গেছে। টিআর, কাবিটার ৬৩ লাখ টাকা এবং সংসদ সদস্যের কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দও হয়েছে ইতোমধ্যে। সেই বরাদ্দের ছোঁয়া এখনো কোনো উপজেলায় চোখে পড়েনি।

প্রতিবার বন্যা হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ভাঙে। বরাদ্দ আসে। কাজ হয় না। নদীপারের অসংখ্য মানুষের এই অভিযোগ প্রতি বছরই করে থাকে।

বর্তমানে সারিয়াকান্দিতে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ফলে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পারায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলাচল দুঃসাধ্য হওয়ায় সন্ধ্যার পরেই গ্রামের রাস্তাঘাটে পথ চলাচল বন্ধ করতে হয়।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে দুই দফা ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষি, মৎস্য, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ কিলোমিটার পাকা রাস্তা। একই বিভাগের ৫৯ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এ বিভাগে টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রায় ৫৯ কিলোমিটার গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাট ছাড়াও একটি ব্রিজ মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে এ বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বীজ-সার দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার ও মেরামতের তেমন কোনো গতি নেই। এ জন্য স্থানীয়রা প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ১৪টি ব্রিজের সংযোগ সড়ক বিধ্বস্ত হওয়ায় স্কুলগামী ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষেরা বহু কষ্টে প্রতিদিন পথ পাড়ি দিচ্ছেন।

কাজলা ইউনিয়নের জামথল চরের জাকির হোসেন জাকি, সুনচু, আব্দুল খালেক ঢাকাটাইমসকে বলেন, বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার পর আমরা অনেক কষ্টে তরিতরকারি, শাক-সবজি উৎপাদন করেছি। কিন্তু সময়মতো সেগুলো বাজারে নিয়ে যেতে না পারায় সঠিক মূল্য পাচ্ছি না। আবার কোনো দিন বিক্রি না হলে আস্তে আস্তে তা নষ্ট হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, রাস্তাঘাটে খানাখন্দ ও গভীর খাদ সৃষ্টি হওয়ায় আমরা রাতের বেলা পথ চলতে পারছি না। পথ চলতে ওই সব গভীর খানাখন্দে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার সারওয়ার আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, চরাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য টিআর ৩৬ লাখ, কাবিটা ২৭ লাখ এবং এমপির বরাদ্দ এক কোটি ১১ লাখ ইতোমধ্যেই পাস হয়েছে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্প যাচাই বাছাই চলছে। অতিসত্বর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত, সংস্কার করে গ্রামীণ জনপদ চলাচলের উপযোগী করা হবে।

এই কর্মকর্তা জানান, কাজ শুরু হতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম মো. আবু হেনা ঢাকাটাইমসকে বলেন, বগুড়ায় দুই দফা বন্যায় তিন উপজেলায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ অনেক কম। তিনি বলেন, যতটুকু বরাদ্দ আসে এর সবটুকুই উন্নয়নের জন্যই ব্যয় হয়ে থাকে।

(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ডোমারে বিএনপির ভোট বর্জনের ডাক 

ঢাকা-ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে দুই কমিউটার ট্রেন উদ্বোধন

চুয়াডাঙ্গায় দশ কেজি গাঁজাসহ দুই  মাদককারবারি গ্রেপ্তার

সিদ্ধিরগঞ্জে বস্তাবন্দি স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি

মফস্বল সাংবাদিকেদের ওয়েজ বোর্ডের আওতার আনার দাবি

আ.লীগ বিভ্রান্তিকর কথা বলে নিজেদের ভেতরকার অস্থিরতা আড়াল করছে: প্রিন্স

‘ওরাল ক্যান্সার’ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর

‘মনে হয় আত্মহত্যা করি, তাতে যদি বেঁচে যাই!’

ফেলোশিপে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন সাতক্ষীরা মেডিকেলের ডা. মাহমুদুল হাসান

গাজীপুরে দুর্ঘটনা: দুই ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :