হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন

সুজন সেন, শেরপুর
 | প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৪০

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন শেরপুরের অসংখ্য নারী-পুরুষ। গণহত্যার পর কোথাও মাটিচাপা দিয়ে, কোথাও মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে নদীতে। আবার কোথাও হত্যাযজ্ঞের পর স্থানীয় লোকজন মরদেহের সৎকার করেছেন।

কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছর পরও যুদ্ধদিনের নীরব স্বাক্ষী এইসব বধ্যভূমি ও গণকবর এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সোহাগপুর বিধবাপল্লী: ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের ১৮৭ জন পুরুষকে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর গ্রামটি প্রথমে বিধবাপাড়া ও পরে বিধবাপল্লী হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিতি পায়। গ্রামটিতে রয়েছে ৫৯টি গণকবর। এ গণহত্যার দায়েই জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়েছে।

আলোচিত গ্রামটি দেখতে এসে হতাশ হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। অন্যের জমিতে স্মৃতিফলক আর বসার ঘর ছাড়া সেই ভয়াবহ গণহত্যার স্মৃতিবাহী তেমন কিছুই নেই।

শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, এখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরসহ নানা কিছু গড়তে তারা জমি দিতেও ইচ্ছুক। কিন্তু উদ্যোগ না থাকায় হারাতে বসেছে সোহাগপুর বিধবাপল্লীর সেই রক্তস্নাত ইতিহাস।

জগৎপুর: ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে ৩০ এপ্রিল গণহত্যা চালিয়ে ৪২ জন হিন্দুসহ ৫৮ জন নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়িঘর। গণহত্যার এ স্থানটিতেও স্মৃতিস্তম্ভ বা শহীদদের স্বীকৃতি দিতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

নাকুগাঁও: ২৫ মে নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্তের ভোগাই নদী পার হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভারতের বারাঙ্গাপাড়া থানার ডালুতে গণহত্যা চালায়। শহীদ হন বাংলাদেশ থেকে ডালুতে আশ্রয় নেওয়া মুক্তিকামী ও ভারতীয় নাগরিকসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষ। হানাদারদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে শহীদ হন নয় বিএসএফ সদস্য।

ভারতের কাঁটাতারঘেঁষা নাকুগাঁওয়ে গণহত্যার শিকার বাংলাদেশি মুসলমানদের মরদেহ দাফন করা হয়। নয় মাসে বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরও এ স্থানে কবর দেওয়া হয়।

স্বাধীনতার পর ভারত সরকার শহীদ বিএসএফ সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং দুই বছর আগে আরও বৃহৎ আকারে সংস্কার ও পুনর্র্নির্মাণ করে।

কিন্তু নাকুগাঁওয়ের গণকবরটি এখনো অবহেলায় পড়ে আছে। ১৯৯৭ সালে এলজিইডির তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলেও আজ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।

ঝিনাইগাতী উপজেলার নকশী, নকলার নারায়ণখোলা, শ্রীবরদীর কাকিলাকুড়া গ্রামে বীরবিক্রম শাহ মুতাসীন বিল্লাহ খুররমের সমাধিস্থল, শেরপুর শহরের শেরিব্রিজ, সুরেন্দ্র সাহার বাড়ি আল-বদরদের টর্চার সেল, সদর থানার সামনে অ্যাডভোকেট এম এ সামাদের বাড়ির বধ্যভূমি, জেলা প্রশাসকের বাংলোর পাশে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির কার্যালয়সহ নানা স্থানও মুক্তিযুদ্ধের নীরব স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই।

ঝিনাইগাতী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফকির আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানাতে এসব বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী স্থানগুলো সরকারিভাবে দ্রুত সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।’

জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অনেক স্থান-স্থাপনা অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকার একটু দৃষ্টি দিলেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই এটা করা উচিত। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় এগিয়ে আসতে পারে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

সুবর্ণচরে এমপিপুত্র শাবাব বিজয়ী

নড়িয়ায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ আহত ৩

কুমিল্লার তিন উপজেলায় দুই নতুন মুখ, লাকসামে ইউনুসের হ্যাট্রিক

বান্দরবান সদরে আ.লীগ নেতাকে হারিয়ে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা কুদ্দুস বিজয়ী

ভোট দিলেন কেরানীগঞ্জের বিএনপি নেতা, ফাঁকা ছিল বেশিরভাগ কেন্দ্র

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী হলেন যারা

ফরিদপুরে চেয়ারম্যান পদে তিন উপজেলায় যারা নির্বাচিত হলেন

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত: ঝিনাইদহ-১ আসনে নির্বাচনে বাধা নেই

রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম বাঙালিকে আলোর পথ দেখায়: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

কুমিল্লায় ট্রান্সফর্মার চোর চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :