কুড়িগ্রামে জোটের সমীকরণে জটিল হিসাব

মনিরুল ইসলাম বাবু
 | প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫০

কুড়িগ্রামের চারটি আসনের মধ্যে জোটের সমীকরণে একটিতে স্পষ্টতই সুবিধাজনক অবস্থানে জাতীয় পার্টি। একটি আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সরে যাওয়ায় আশা দেখছে বিএনপি। আর একটি আসনে তিন দলের বিদ্রোহী আর জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে আছে আলোচনা।

রবিবারের ভোটকে সামনে রেখে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কী হলে কে জিতবে, এ নিয়েই আলোচনা। এই জেলায় বরাবর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ভালো করেছে। বিএনপি কখনো সুবিধা করতে পারেনি। তবে এবার তারা আশায় আছে দুটি আসন নিয়ে।

কুড়িগ্রাম-১

ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে ১৯৮৬ সাল থেকেই টানা জিতে এসেছে জাতীয় পার্টি। এবার দলটি মার্কা দিয়েছে গত চার নির্বাচনে জয়ী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানকে। দলটির শরিক আওয়ামী লীগেরও একজন প্রার্থী আছেন। তিনি হলেন আছলাম হোসেন সওদাগর। তিনি এবার প্রথমবারের মতো লড়ছেন এখান থেকে। আর বিএনপি মার্কা দিয়েছে সাইফুর রহমান রানাকে। আসনটিতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজ এবং তিনি জয় পান এক লাখ ১৭ হাজার ৩১৭ ভোটে। তখন ধানের শীষ নিয়ে রানা পান ৯২ হাজার ৫৮৩ ভোট।

এই আসনে ভোটের প্রচারে ধর্মের অপব্যবহারের একটি ঘটনা বেকায়দায় ফেলেছে বিএনপিকে। নামাজ পড়া যেমন ফরজ, ধানের শীষে ভোট দেওয়াও তেমন ফরজÑএমন বক্তব্য দেওয়ার পর একজনকে গ্রেপ্তার করে ছয় মাসের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। আটক হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এর পর থেকে ভোটের প্রচারে পিছিয়ে পড়ে বিএনপি। তার আগ পর্যন্ত তিন দলের প্রচারই ছিল ব্যাপক।

বিএনপি বলছে, ১০ বছর আগে তারা এক লাখের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে এবার ভোট ভাগাভাগি তাদের জন্য সুবিধা এনে দেবে।

এই আসনে ৯১ ও ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়াই হয়েছে জাতীয় পার্টির। ২০০১ ও ২০০৮ সালে লড়াই হয়েছে বিএনপির সঙ্গে।

কুড়িগ্রাম-২

সদর, রাজারহাট এবং ফুলবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে মহাজোটের একজনই প্রার্থী। লাঙ্গল নিয়ে লড়ছেন পনির উদ্দিন আহমেদ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ পুরোপুরি তার সঙ্গেই আছে।

বিএনপি নিজের প্রার্থী না দিয়ে ২০০১ সালে নৌকা নিয়ে লড়া আ ম সা আ আমিনকে প্রার্থী করেছে। তিনি গণফোরামে যোগ দিয়েছেন ভোটে লড়তে।

এই আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ভোট কাছাকাছি। অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াত বা তার অন্য শরিকদের অবস্থান বেশ দুর্বল। ফলে আ ম সা আ আমিন কতটা সুবিধা করতে পারবেন, এ নিয়ে সংশয় আছে।

নবম সংসদ নির্বাচনে এখানে মহাজোটের প্রার্থীর কাছে এক লাখ ৫৭ হাজার ১৩১ ভোটে হারেন বিএনপি জোটের তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

কুড়িগ্রাম-৩

উলিপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে মহাজোটের শরিক আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিÑদুই দলেরই প্রার্থী আছেন। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আক্কাছ আলী সরকার সরে গেছেন আওয়ামী লীগের এম এ মতিনের সমর্থনে।

এই আসনটিতে ১৯৯১ সাল থেকে কখনো হারেনি জাতীয় পার্টি। দলের প্রবীণ নেতা মাইদুল ইসলামের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনেও জয় পায় তারাই।

এখানে বিএনপি প্রার্থী করেছে তাজভীর উল ইসলামকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী আবুল কাসেম মিয়ার ছেলে। ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ে জাতীয় পার্টির মাইদুলের কাছে হারেন এক লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৭ ভোটে। সে সময় তার পক্ষে পড়ে মাত্র ২০ হাজার ৮৭১ ভোট।

বিএনপির সমর্থকরা আশা করছেন, জাতীয় পার্টির আক্কাছ আলী বসে যাওয়ায় সুবিধা আসলে তারা পাবেন। দলটির কর্মী-সমর্থকরা নৌকায় না দিয়ে ভোট দেবে ধানের শীষে।

কুড়িগ্রাম-৪

রৌমারী, চর রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনে তৈরি হয়েছে জটিল সমীকরণ।

এখানে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপির পাশাপাশি তিন দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। স্বতন্ত্র প্রতীকে আছেন একজন জামায়াত নেতাও। আরও আছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। ভোটের সমীকরণ এখানে জটিল।

এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকির হোসেন, বিএনপির আজিজুর রহমান এবং জাতীয় পার্টির আসরাফ উদ দৌলা।

নৌকা না পেয়ে বিদ্রোহী শেখ জাহাঙ্গীর আলম ট্রাক, লাঙ্গল না পেয়ে গোলাম হাবিব সিংহ ও ইউনুছ আলী কুড়াল, ধানের শীষ না পেয়ে ইমান আলী ডাব, জামায়াতের নেতা আবুল হাসেম আপেল এবং ইমরান এইচ সরকার মোটরগাড়ি নিয়ে বিদ্রোহী হয়েছেন।

নবম সংসদ নির্বাচনে এখানে জাতীয় পার্টিকে হারিয়ে জেতে আওয়ামী লীগ। এর আগের নির্বাচনে বিএনপি জোটের হয়ে লড়া জামায়াত হয় দ্বিতীয়। বিএনপি এখানে ৯১ সাল থেকে কখনো ভালো ভোট পায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

কেরানীগঞ্জে আ.লীগের নির্বাচনি প্রচারে যুবদলের নেতারা!

বিএনপির আরও তিন নেতা বহিষ্কার

জেল-জুলুমের ভয় দেখিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমানো যাবে না: সালাম

রাজধানীতে যুবদলের প্রতিবাদ সমাবেশ ১১ মে

৭৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

আ.লীগ জনগণকে কবরস্থ ক‌রে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়: রিজভী

বাংলাদেশ ও ভারত ভবিষ্যৎ বিশ্বে নানা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে: ড. সেলিম মাহমুদ

রাজনৈতিক দলগুলো কথা বন্ধ রাখলে গণতন্ত্র পিছিয়ে পড়বে: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পতাকা ওড়ানোসহ ছাত্রলীগের একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা

একদলীয় শাসনে বাংলাদেশে আজ মুক্ত গণমাধ্যম অনুপস্থিত: মঈন খান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :