জইশ-ই-মোহাম্মদ নিয়ে চীনের আগ্রহ কোথায়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০১৯, ০৯:৩৫
অ- অ+

স্বাধীন কাশ্মীরের দাবিতে আন্দোলন করা সশস্ত্র সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার৷ ভারত চাইছে, জাতিসংঘের মাধ্যমে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে, তবে চীন সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু কেন?

কাশ্মীর অঞ্চলকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার সূচনা করে জইশ-ই-মোহাম্মদ৷ কাশ্মীরে বোমা হামলা করে ভারতের ৪০ সেনা হত্যার পর এর দায় স্বীকার করে সংগঠনটি৷ এর আগেও ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা ও পাঠানকোট হামলায় এই সংগঠনটির জড়িত থাকার কথা আলোচিত হয়েছে৷

হামলার পর ভারত দাবি তুলেছে, পাকিস্তান যেন সেদেশের অভ্যন্তরের এমন সন্ত্রাসকে দমন করতে তৎপর হয়৷ একইসঙ্গে জইশ-ই-মোহাম্মদের নেতা মাসুদ আজহারকে তাদের কাছে সোপর্দ করার দাবিও জানায় ভারত৷

মাসুদ আজহারকে যেন সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেজন্য তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বার বার আবেদন জানায়৷ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আজহারকে সন্ত্রাসী ঘোষণার বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আকারে আনে ফ্রান্স৷ নিরাপত্তা পরিষদের সব স্থায়ী সদস্য এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও চীন বিপক্ষে ভোট দেয়৷ ভারতের কাছে চীনের এই আচরণ সেদেশটির সঙ্গে পাকিস্তানের মিত্র সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ হলেও চীন বলেছে যে, আজহারের বিরুদ্ধে ‘আরও তদন্তের’ প্রয়োজন আছে৷

বেইজিং সবসময়ই বলে এসেছে যে, তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে৷ কিন্তু আজহারের বিষয়টিকে তারা ‘প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা’ বলছে৷ খবর ডয়চে ভেলের।

এ বিষয়ে চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সের এশিয়া প্যাসিফিক ইন্সটিটিউটের ভারত বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লিউ জিয়াওজু বলেন, ‘যখনই কোনো আক্রমণ হয়, ভারত আজহারের সংগঠনের ওপর দোষ চাপায়, কিন্তু কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে না৷ যখনই এমন কোনো ঘটনা ঘটে, ভারত দোষারোপ করে পাকিস্তানকে, অথচ প্রমাণ দেয় না৷’

তবে ইসলামাবাদের প্রতি বেইজিংয়ের এমন আগ্রহের কারণ অর্থনৈতিক বলে মনে করেন জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের প্রধান ক্রিস্টিয়ান ভাগনার৷ তিনি বলেন, ‘চীনের জন্য নির্বাচিত সরকারের চেয়ে সেনাবাহিনী অনেক ভালো’৷ আজহারের বিরুদ্ধে ভোট দিলে পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে তাদের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিতে পারে বলে তার ধারণা৷

তবে ভাগনার মনে করেন, চীন তার অবস্থান পাল্টানোর আগেই পাকিস্তান সেনাকে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে৷ এ বিষয়ে ভাগনারের প্রশ্ন, ‘যদি এসব গ্রুপের কারণে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের কালো তালিকাতেই ঢুকতে হয়, তাহলে এদের দিয়ে কী কাজ হবে? বাজারে এর কী প্রভাব পড়বে?’ তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের জন্য কোনো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবরোধ সামলাবার উপায় নেই৷

পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী সাঈদ সালমান শাহ বলেন, ‘সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে৷ যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়া পাকিস্তানের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।’

অর্থনীতিবিদ আজরা তালাত সাঈদ বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে চীনের আপত্তির কারণ পাকিস্তান নয়, বরং ভারত৷ মাসুদ আজহারের বিষয়ে চীনের এমন অবস্থানের কারণ ভারতের সঙ্গে তাদের বিরোধ, ইসলামাবাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা এবং তিব্বতের নেতা দালাই লামাকে দেশটির সহযোগিতা, এ সব কারণেও ভারতকে কখনো সমর্থন করে না চীন৷’

ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইন্ডিয়ার ফেলো ধ্রুব জয়শঙ্কর বলেন, বিষয়টি প্রতীকী হলেও আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা ভারতের জন্য জরুরি৷ পাকিস্তান আগে কখনো চিহ্নিত গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি৷ আর জইশ-ই-মোহাম্মদ তো এর মধ্যেই তালিকাভুক্ত৷

আজহারের ওপর সন্ত্রাসী তকমা থাকলে তাকে গ্রেফতার করা ভারতের জন্য সহজ হবে, তবে তাকে বৈশ্বিকভাবে সন্ত্রাসী ঘোষণা করা হলে ‘ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাইছে’ বলে প্রতীয়মান হবে৷

ঢাকা টাইমস/২৩মার্চ/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মেট্রোরেলের ঢাবি স্টেশন বিকেল থেকে বন্ধ থাকবে
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহত ৯৫, মোট মৃত্যু ছাড়াল ৫৮ হাজার
লন্ডনে উড্ডয়নের পরই বিমান বিধ্বস্ত, বাতিল সব ফ্লাইট
পল্লীবন্ধু এরশাদ চিরকাল মানুষের হৃদয়ে কণক প্রদীপ হয়ে জ্বলবেন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা