হেরোইন গায়েবে পকেট ভরল দুই দারোগার!

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
  প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৩২
অ- অ+
প্রতীকী ছবি

মাদকবিরোধী একটি অভিযান করেই তিন লাখ টাকা ঢুকেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার দুই দারোগার পকেটে। সূত্র বলছে, পাঁচ দিনের মধ্যে আরও দুই লাখ টাকা দেয়ার কথা আছে তাদের। জব্দ করা হেরোইন পরিমাণে কম দেখানো এবং পলাতক ব্যক্তিদের আসামি না করার কারণে এই টাকা পেয়েছেন তারা। অভিযুক্ত দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) হলেন আবদুল খালেক ও মো. মামুন।

শুক্রবার গোদাগাড়ী থানা পুলিশ ২০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের দিয়াড়মানিকচক গ্রামের বাসিন্দা মর্জিনা খাতুন বিজলী (৪২), তার ছেলে শামিম হোসেন (২২) ও জা নেসফুল বেগমকে (৩০) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। অভিযোগ উঠেছে, এদের গ্রেপ্তার করেই বাণিজ্য করেছেন দুই এসআই। তবে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার শামিম একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বাবার নাম আমিনুল ইসলাম। শামিম ও দিয়াড়মানিকচক মধ্যপাড়া গ্রামের ফুলাল নামে আরেক ব্যক্তি একসঙ্গে মাদক ব্যবসা করেন। কয়েকদিন আগে তাদের দুজনের এক কেজি ২০০ গ্রাম হেরোইনের চালান ভারত থেকে আসে।

১২টি প্যাকেটে থাকা এসব হেরোইন তারা নেসফুল বেগমের বাড়ির খড়ের পালার ভেতর লুকিয়ে রাখেন। পরে নেসফুল খড়ি আনতে গেলে হেরোইনগুলো পান। বিষয়টি জানাজানি হলে ফুলাল ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নেসফুলের কাছ থেকে তার ছয় প্যাকেট হেরোইন নিয়ে যান। শামিমও তার হেরোইন নিয়ে যান।

তবে এলাকায় প্রচার হয়ে যায় যে, নেসফুলের কাছেই ১২ প্যাকেট হেরোইন আছে। একপর্যায়ে খবর যায় পুলিশের কাছেও। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পুলিশ নেসফুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শামিম ও তার মাকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের বাড়ি থেকে ছয় প্যাকেট হেরোইন উদ্ধারও হয়। কিন্তু থানায় আসার পরই হেরোইন কমে হয় দুই প্যাকেট।

সূত্র জানায়, মামলায় নেসফুলের স্বামী মিজানুর রহমান মেজর এবং মেজরের বাবা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ওয়ার্ড সদস্য মনসুর রহমানকেও পলাতক আসামি করার হুমকি দেন এসআই খালেক ও মামুন। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ছয় প্যাকেটেরই মামলা দেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। মনসুর রহমান তখন আবদুল জব্বার নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে দুই দারোগার সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেন। তখন পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে মনসুর ও তার ছেলে মিজানুরকে আসামি না করা এবং ছয় প্যাকেটের স্থানে দুই প্যাকেট হেরোইনের মামলা করতে রাজি হন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। জব্বার তাদের সেদিনই তিন লাখ টাকা দেন। আর অবশিষ্ট দুই লাখ টাকা দেয়ার কথা আছে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে।

সূত্র আরও জানায়, টাকা দেয়ার কারণে চার প্যাকেট হেরোইন গায়েব করে দেন এসআই খালেক ও মামুন। এরপর দুই প্যাকেট জব্দ দেখিয়ে গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে মাত্র ২০০ গ্রাম হেরোইনের মামলা করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা এ মামলায় কোনো পলাতক আসামি নেই। তবে হেরোইন গায়েব এবং টাকা লেনদেনের কিছুই জানতে পারেননি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করে টাকা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল জব্বার তা অস্বীকার করেন। আর এসআই আবদুল খালেক ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, তিনি জব্বারকে চেনেনই না। এসআই মামুন বলেন, দুই প্যাকেটই হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছিল। সাক্ষীদের উপস্থিতিতেই তা জব্দ করা হয়েছে। হেরোইন গায়েব এবং টাকা নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। মানুষ এসব কথা রটায়। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন।

ওসি জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে নেসফুল জানিয়েছেন যে তার কাছ থেকে ছয় প্যাকেট হেরোইন ফুলাল নিয়ে গেছেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে হেরোইন উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

ফুলালকে আসামি না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, বিষয়টি জানাজানি হলে তার কাছে থাকা হেরোইন উদ্ধার হবে না। তাই তাকে আসামি করা হয়নি। হেরোইনগুলো উদ্ধার করা গেলে তার বিরুদ্ধে এমনিতেই মামলা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/আরআর/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফিরে দেখা ৪ জুলাই: সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, উত্তাল সব বিশ্ববিদ্যালয়
এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকেও ইভিএম বাদ
আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা, পাউবো কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ
নির্বাচন ভবনে রোপণ করা গাছ থেকে সরানো হলো আউয়াল কমিশনের নামফলক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা