সবার জন্য নয় ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৯, ১৩:৩৪
অ- অ+

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিকেল টুরিজমের বাজার ভারতে। কিন্তু বাস্তবে কতটুকু ব্যাপ্ত ভারতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা? মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে চিকিৎসা পর্যটন থেকেই ভারতের আয় হবে নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে, সেই অঙ্ক ছয় বিলিয়নের কাছাকাছি হওয়ায় বিশ্বের মেডিকেল টুরিজমের ১৮ শতাংশের দখল রয়েছে ভারতের হাতে। এই বিরাট অঙ্কের আয়ের পেছনে রয়েছে ভারতে স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, ভিসাপ্রদানে তৎপরতা ও ইংরেজি ভাষার ব্যাপক ব্যবহারের মতো একাধিক কারণ।

গত পাঁচ বছরে ভারতে চিকিৎসার কারণে আসা মানুষ বা ‘মেডিকেল টুরিস্ট'র সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন। বাংলাদেশ ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছেন আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, দক্ষিণ কোরিয়া ও নাইজেরিয়ার মতো দেশের নাগরিকরা।

ভারতের অভিবাসন দপ্তরের দেয়া তথ্য দেখা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকেই ভারতে চিকিৎসাসংক্রান্ত ভিসায় আসেন এক লাখ ২০ হাজার ৩৮৮ জন বাংলাদেশি। এই সংখ্যাই ২০১৭ সালে বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ২১ হাজার ৭৫১। ২০১৫-২০১৮ সালে ভারতে আসা বাংলাদেশি মেডিকেল টুরিস্টের সংখ্যা বেড়েছে ৮৩ শতাংশ।

কিন্তু দেশের মাটিতে একই চিকিৎসা কি একই তৎপরতার সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের কাছে পৌঁছায়?

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন ‘ন্যাশনাল হেলথ প্রোটেকশান মিশন’ বা ‘মোদীকেয়ার’ এর। অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চালু করা ‘ওবামাকেয়ার’ এর আদলের এই পরিষেবা। এর মাধ্যমে দেশের ৫০ কোটি জনতার কাছে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যবীমা পৌঁছে দেবার ঘোষণা দিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু অর্থায়নের অভাবে আজও বাস্তবায়ন হয়নি এই প্রকল্প।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষা জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা রয়েছে ভারতে। শুধু তাই নয়, বীমার সুযোগ পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায়, ভারতে মোট ৬৫ শতাংশ নাগরিকই নিজের পকেট থেকেই চিকিৎসাসংক্রান্ত খরচ বহন করেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের আরেকটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৫ সালে ভারতের জিডিপির (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) মাত্র ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ ব্যয় করা হয় স্বাস্থ্যখাতে। এর ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ খরচ হয় বেসরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার পেছনে। সরকারি পরিষেবার জন্য বরাদ্দ মাত্র এক শতাংশ।

ভারতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূলে রয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে নাগরিকের বাস্তবিক দূরত্বের প্রশ্ন। যে দেশের মোট ৬৬ শতাংশ নাগরিক গ্রামাঞ্চলে বাস করে, যে দেশের প্রায় ৪০ শতংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে অবস্থান করে, সেই দেশে সরকারির চেয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার পেছেন বেশি খরচ কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্ন রয়েই যায়।

পাশাপাশি, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার মান উন্নত হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট খরচের পরিমাণ সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের সামর্থ্যের অনেকটাই বাইরে। ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিদেশ থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে বিপুল অর্থ লাভ করে বিশ্বের অন্যতম সফল মেডিকাল টুরিজমের স্থান হতে পেরেছে। এবিষয়ে অনেক গবেষণা থাকলেও অধরা রয়ে যাচ্ছে বিদেশি রোগীদের আর্থসামাজিক পরিচয়ের ভিত্তিতে ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার কার্যকরিতার বিষয়টি।

রোগীর আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে কোনো রোগী যখন ভারতে উন্নত মানের চিকিৎসা পাবেন, তা তিনি যেকোনো দেশের নাগরিকই হন না কেন, তখনই সম্পন্ন হবে ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবার গণতান্ত্রিকীকরণ।

ঢাকা টাইমস/২৬আগস্ট/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কুমিল্লায় ৪ মামলায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা গ্রেপ্তার
শেরপুরে পৃথক ঘটনায় দুই মরদেহ উদ্ধার
ঝিনাইদহে সাপের কামড়ে প্রাণ গেল এইচএসসি পরীক্ষার্থীর
২৩ হাজার ইয়াবাসহ দুই মোটরসাইকেল আরোহী ট্রাফিক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা