চক্ষুবিজ্ঞানেও দালালের থাবা

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট ২০১৯, ০৮:২৬

মহিবুল হাসান ভুগছেন চোখের কর্নিয়া সমস্যায়। টাকার অভাবে ঢাকায় এসে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পেশায় কৃষক মহিবুল তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। স্বল্প আয়ে ছয় সদস্যের পরিবারের খরচ মেটানোর পর কিছুই থাকে না। কিন্তু আর সহ্য হচ্ছে না যন্ত্রণা। পরে ধারদেনা করে বুধবার সকালে কুমিল্লা থেকে আসেন ঢাকার চক্ষুবিজ্ঞান ইউস্টিটিউটে।

১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাখানেক পর বহির্বিভাগে চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করেন। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তিনি কক্ষ থেকে বের হতেই কয়েকজন লোক ঘিরে ধরেন মহিবুলকে। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে চলে টানাটানি। প্রত্যেকই তাদের নিজস্ব ল্যাবে কম খরচে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।

কথা হয় মহিবুলের সঙ্গে আসা রাকিবার সঙ্গে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ডাক্তারের রুম থেকে বের হলে অনেকেই আমাদের এখানে পরীক্ষা না করিয়ে তাদের ল্যাবে পরীক্ষা করাতে বলে। আমরা রাজি হইনি। কারণ আমার স্বামী বলে দিয়েছে, হাসপাতালেই সব চিকিৎসা আছে। যেন বাহিরে চিকিৎসা না করাই।’

রাকিবার সঙ্গে কথা শেষ করে বহির্বিভাগের সামনে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই দেখা যায় সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। এক রোগী চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হতেই কয়েকজন ঘিরে ধরে তাকে। কথা বলতে টেনে নিয়ে যায় হাসপাতালের বাইরে।

পেছন পেছন গিয়ে দেখা যায়, রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়েই কথা বলছেন লোকটি। এক পর্যায়ে রোগীটিকে বাগে এনে তিনি পাশের একটি ল্যাবে নিয়ে যান।

প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক রোগী এসে কম খরচে চোখের চিকিৎসা নেন চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। আর এই হাসপাতালেই রয়েছে চোখের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা। অথচ হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা কয়েকটি ল্যাবের হয়ে কাজ করা দালালরা তাদের নানা কথা বলে ভাগিয়ে নিয়ে যান।

এই সমস্যাটি ওই এলাকায় সোহরাওয়ার্দী বা পঙ্গু হাসপাতাল ঘিরে বছরের পর বছর ধরে ছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে অগুণতিবার। এতেও পরিস্থিতি পাল্টেছে, এমনটা বলা যায় না। কিন্তু আগারগাঁওয়ে গড়ে ওঠা চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বা আরও কয়েকটি হাসপাতালকে আদর্শ হিসেবেই ধরা হতো। সেগুলো নিয়ে নেতিবাচক নয়, গণমাধ্যমে এতদিন এসেছে ইতিবাচক সংবাদ। কিন্তু এর একটিতেও এখন হানা দিয়েছে দালালচক্র। যারা কিনা রোগীদের নিয়ে যান পাশের রোগ পরীক্ষাহারে। বিশেষ করে যারা নতুন করে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন তাদেরকে ঘিরেই চলে এই কর্মকাণ্ড।

দালালদের সঙ্গে যে চক্ষুবিজ্ঞানের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা আছে, সেটার প্রমাণও মেলে সেখানে গেলেই। কারণ, আনসার সদস্যদের সামনেই দালালরা নির্বিঘেœ এসব করে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে না।

এই হাসপাতালে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, সেগুলোর ফি তুলনামূলক বেশ কম। দালালরা উল্টো কথা বলে রোগীদেরকে ভাগিয়ে নিয়ে আসলে পকেট কাটছে। আবার পরীক্ষার ফলাফল মানসম্পন্ন হবে কি না, এ নিয়েও আছে প্রশ্ন।

চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিউটিটে এক্স-রেতে ২০০ টাকা, ইসিজিতে ৮০ টাকা, এইচবিএসএজিতে ১৫০ টাকা, ছানির ফ্যাকো সামারি ও গ্লুকোমা, কর্নিয়া, অকুলোপ্লাস্টিক পেডিয়াট্রিক অফথ্যালজি কমিউনিটি অফথ্যালজি, ইয়াগ লেজার ও অরগন লেজার পরীক্ষায় এক হাজার টাকা করে খরচ হয়।

হাসপাতালের পাশে গড়ে ওঠা ঢাকা ল্যাব ও সিটি ল্যাবে গিয়ে দেখা যায়, এসব পরীক্ষা করাতে প্রায় দ্বিগুণ বা কোনো কোনো পরীক্ষায় সেটা তিনগুণের মতো বেশি নেওয়া হচ্ছে।

তাহলে রোগীরা কেন ওসব বেসরকারি হাসপাতালে যান? চোখ দেখাতে আসা শিপন আহমেদই তার জবাব দিলেন। বলেন, ‘জানতাম না এই হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। যার কারণে দালালের খপ্পরে পড়ি। যারা নতুন করে চিকিৎসা নিতে আসেন তারাই বেশি এদের খপ্পরে পড়ে। কিন্তু প্রশাসনের লোক কী করে সেটাই আমি বুঝি না।’

বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে হাসপাতালের তথ্যকেন্দ্র থেকে কোনোভাবেই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। পরে হাসপাতালটির ওবেয়সাইট থেকে পরিচালক জালাল আহমেদের ল্যান্ডফোনে করে তাকে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/এনআই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :