‘আলোকিত’ শিশু গড়ার কারিগর

কাজী রফিক
| আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:১৪ | প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫২
আলোকিত শিশু স্কুলে শিক্ষার্থীদের সাথে মিঠুন দাস কাব্য (ডানে)

প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে অনুদান দিচ্ছেন সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। আর সেই টাকায় চলছে একেকজন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর পড়াশোনা।

কেউ কেউ নিচ্ছেন একাধিক শিশুর দায়িত্ব। এভাবে দলিত ও বেদে সম্প্রদায়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অনিশ্চিত জীবন এখন শিক্ষার আলোয় আলোকিত। পড়াশোনার পাশাপাশি এসব শিশুরা পাচ্ছে সামাজিকতার শিক্ষাও।

‘আলোকিত শিশু’ নামে এক সংগঠন গড়ে তুলে এই ব্যবস্থা এবং তার ব্যবস্থাপনা করে চলেছেন মিঠুন দাস কাব্য।

ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ থেকে গণযোগাযোগ ও গণমাধ্যম শিক্ষা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়য়ে এডুকেশন লিডারশিপ প্রোগ্রামে স্নাতকোত্তর করছেন কাব্য। তিনি ‘টিচ ফর বাংলাদেশ’-এ ফেলোশিপ করছেন মিঠুন দাস কাব্য। তার সঙ্গে আছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

কাব্য ঢাকা টাইমসকে জানান, শুরুটা ছিল ঢাকার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর এলাকায়। সেখানে একটি স্কুল গড়ে তোলার মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু করান স্থানীয় পথশিশুদের। স্কুলের নাম দেয়া হয়, আলোকিত শিশু স্কুল।

‘এই শিশুরা এক দিন আলো ছড়াবে। তাদের পথশিশু বলে অবজ্ঞা না করে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিলে এ সমাজ গঠনে অন্য ১০ জনের মতো তাদেরও অবদান থাকবে।’

কীভাবে চিন্তাটা এলো? কাব্য বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহটা জন্ম নিল বিভিন্ন সময়ে ত্রাণ বিতরণে কাজ করতে গিয়ে। তারপর একটু খোঁজ নিয়ে যখন জানতে পেরেছি বাংলাদেশে কমিউনিটিগুলোতে শিশুদের শিক্ষার হার মাত্র তিন থেকে চার শতাংশ, তখন ইচ্ছেটা আরও বেশি কাজ করেছে। তাদের অসহায়ত্ব আমাকে তাদের নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।’

পড়াশোনার পাশাপাশি এসব শিশুকে দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ, সামাজিক শিক্ষা, ব্যবস্থা করা হচ্ছে খেলাধুলা ও পোশাক। এ ছাড়া ‘গিভ ফর গুড’ প্রজেক্টের আওতায় খেলনা, জামা-কাপড় পাচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। পাচ্ছে নৈতিক শিক্ষা, দলীয় ও সামাজিক কাজের শিক্ষা।

প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতি নয়, এই শিশুদের জন্য নেয়া হয়েছে সহজ শিক্ষাক্রম। তাদের জন্য পড়াশোনাকে আনন্দময় করার চেষ্টা করা হয়েছে। কঠিনকে করা হয়েছে সহজ।

কাব্য বলেন, “পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই ‘অল্টারনেটিভ ইজি লার্নিং ওয়ে’ অনুসরণের চেষ্টা করি। যাতে শিক্ষার্থীরা চাপমুক্ত থেকে পড়াশোনার প্রতি আরও আগ্রহী হয়।”

‘ঈদের সময়ে আমরা এক দিন ভোজন, নতুন জামা বিতরণ এর আয়োজন করে থাকি। তাছাড়া বৈশাখে বাচ্চাদের নিয়ে একটা ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি।’

বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের মালখানগরে একটি এবং নাটোরের আলাইপুর হরিজন কলোনিতে গড়ে তোলা হয়েছে দুটি স্কুল। সেখানে শিক্ষা এবং সামাজিকতার শিখছে ৮৫ জন দলিত ও বেদে সম্প্রদায়ের শিশু। বর্তমানে দুই জেলার এই ৮৫ জন শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন ৩৪ জন। তারা প্রতি মাসে এই শিশুদের জন্য এক হাজার করে টাকা করে অনুদান দিচ্ছেন।

তবে শুরুটা সহজ ছিল না। কাব্য বলেন, ‘শুরুটা অনেক বেশিই চ্যালেঞ্জিং ছিল। বাচ্চাদের পড়ানোর জায়গা, ফান্ড, ম্যানেজমেন্ট সবকিছুই অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল।’ এই স্কুলে যারা পড়ছে, তাদের পরিবারের অন্য কেউ এর আগে স্কুলে যায়নি। আর এই বিষয়টি শিশুদেরও যেমন চমৎকৃত করেছে, তেমনি তাদের যারা পড়াচ্ছেন, তাদের মধ্যেও এনে দিয়েছে তৃপ্তির বোধ।

সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এখানে নিয়মিত শিক্ষার্থী বাড়ানো হয় না। কাব্য বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী বাড়ে না। আমরা একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করি। আর সেই জনগোষ্ঠীর সব আগ্রহী বাচ্চাই আমাদের শিক্ষার্থী। তবে ডোনার বাড়লে আমরা আমাদের সেবার মান বৃদ্ধি করে থাকি।’

শুধু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পড়াশোনা করালে এই শিশুদের ভবিষ্যৎ পাল্টাবে না। তাই এদের নিয়ে আরও একটু ভাবতে চায় ‘আলোকিত শিশু’।

তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সংগঠনটির পরিচালক। বলেন, ‘গুণগত শিক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার পথে উন্নীত করা এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :