দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা
বুয়েটের ভিসির দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আজ সন্ধ্যায় ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন।
এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনাকালে ভিসি বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও আবরার হত্যার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামি শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। তাদের ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা ১৯ আসামিকে স্খায়ীভাবে বহিষ্কার, বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সময় দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান। শিক্ষার্থীদের এই ঘোষণার পর অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে যান শিক্ষকরা। এরপর শিক্ষার্থীরা অডিটরিয়াম থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- খুনিদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহন, মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীন স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি, অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিশিয়াল নোটিশ প্রদান এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
শিক্ষকরা বের হয়ে গেলে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই, হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই’, ‘খুনিদের ঠিকানা এই বুয়েটে হবে কেন?’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’ ‘স্থায়ী বহিষ্কার, বহিষ্কার, খুনিদের বহিষ্কার করো’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রম চলতে পারে, একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। দাবি বাস্তবায়নে যতটুকু সময় দরকার তা দিতে রাজি তারা। তার আগ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। আবরার খুনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করে তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া যাবে না।
এর জবাবে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তারপরও কেন বুয়েটের পরিস্থিতি অস্থির করার চেষ্টা করছো?’
যেকোনোভাবে ভর্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নিতে হবে উল্লেখ করে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বলেন, ‘আমরা তোমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছি। তোমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলছি না, আমরা শিক্ষকরা তোমাদের পাশে রয়েছি। তবু কেন বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছো?
ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে তিনি ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা ড. মিজানুর রহমানের পরামর্শে সাড়া দেননি।
বৈঠকে বক্তব্যের শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেন ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। বলেন, ‘আমার কিছুটা ভুল হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ভুল আমি স্বীকার করেছি, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
আবরার ফাহাদ হত্যায় বুয়েটের অভিযুক্ত ১৯ জনকে অস্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি জানান, আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেয়া হবে।
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর প্রায় ছয় ঘণ্টা তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে রাত আড়াইটার দিকে তারে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে যায় শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুতলার সিঁড়ির করিডোরে। এর কিছুক্ষণ পর মরদেহ পায় শিক্ষার্থীরা।
৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ হয় সারা দেশে। ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল বুয়েট ক্যাম্পাস।
(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/ইএস/মোআ)