জামালপুরে কৃষি জমিতে জলাশয়, বিপাকে কৃষকরা

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর
| আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:৩৯ | প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:৩২

জামালপুর সদরের শরিফপুর ইউনিয়নে আড়াইশ’ বিঘা তিন ফসলি জমি খনন করে জলাশয় তৈরি করে মাছ চাষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এতে আমন-আউস ও ইরি-বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ করতে না পারায় বিপাকে পড়েন এলাকার দরিদ্র কৃষক ও প্রান্তিক চাষিরা। আবাদি কৃষি জমিতে জলাশয় তৈরি বন্ধ করা না গেলে কৃষি জমি কমে গিয়ে স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপশি পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিবে বলে আশঙ্কা স্থানীয় সচেতন মহলের।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর সদর শরিফপুর ইউনিয়নের বেড়াপাথালিয়া ও গোদাশিমলা গ্রামের প্রায় ৩ বছর আগে দেড়শ’ বিঘা আবাদি জমি খনন করে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি মৎস্য খামার গড়ে তুলেন বেড়া পাথালিয়া গ্রামের রব্বানীসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ওই মৎস্য খামার সম্প্রসারণ করতে জমির মালিকদের ধান চাষের চেয়ে অতিরিক্ত লাভের প্রলোভন দেখিয়ে এবারও প্রায় ১শ’ বিঘা জমি জমি লিজ নেয় তারা। তাদের এই জমিতে যেখানে মৎস্য খামারের জন্য খনন করা হচ্ছে সেই জমিগুলো তিন ফসলি কৃষি জমি। সরকারি আইনকে তোয়াক্কা না করে তিন ফসলি কৃষি জমি খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলান কালাচান বলেন, প্রভাবশালী ওই চক্রের মৎস্য খামারের মাঝখানে পড়ছে তার এবং প্রতিবেশীর আরো চারটি পরিবারের ঘরবাড়ি-বসতভিটা। তারা জমি ভাড়া দেননি বলে ওই প্রভাবশালী চক্রটি তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। ‘মাছ চাষের নামে এই পুরা এলাকার কৃষি জমি নষ্ট করা হচ্ছে। কৃষি জমি কমে গেছে বা ওই জমি আর কোনোদিন কৃষি আবাদে ফিরে আসবে না। এভাবে কৃষি জমি খনন করে কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টি করে মাছচাষ করে অধিক লাভবান হওয়ায় ওই চক্রটি মৎস্য খামার প্রকল্প সম্প্রসারণ শুরু করেছে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে কৃষি জমি খননকারী প্রভাবশালী চক্রের অন্যতম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমরা কৃষকের কাছ থেকে প্রভাব খাটিয়ে জমি ভাড়া নেইনি। ধান আবাদে লাভ হয় না বিধায় কৃষকরাই আমাদের কাছে জমি ভাড়া দিয়ে লাভবান হচ্ছে। অনেকেই জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন।’

কৃষি জমি খনন করে মৎস্য খামার গড়ে তোলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে জামালপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর কোনো এখতিয়ার নেই। এখানে কৃষি জমি খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আইনভঙ্গ করা হচ্ছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কৃষি জমিতে জলাশয় তৈরি বিষয়ে জামালপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদা ইয়াছমিন বলেন, ‘এলাকায় সরজমিনে গ্রামবাসীর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। বিশাল এলাকাজুড়ে কৃষি জমি খনন করে জলাশয় তৈরি করা হচ্ছে। বছর তিনেক আগে এভাবে জলাশয় তৈরি করে মৎস্য খামারের সাথে যুক্ত গোলাম রব্বানীকে তার খামার প্রকল্পের বৈধতার সপক্ষে কাগজপত্র তলব করা হয়েছে। একই সাথে নতুন করে একই এলাকায় আরো অনেক কৃষি জমি খনন করে সেখানে কি ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কিনা- এসব বিষয়ে বৈধ কাগজপত্র না দেখানো পর্যন্ত কৃষি জমি খনন করে কৃত্রিম জলাশয় তৈরির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনোরূপ আইন ভঙ্গ হয়ে থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৪ডিসেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :