বিটকয়েনের সাতকাহন

পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি কারেন্সি বিটকয়েন। এটিকে ভার্চুয়াল মুদ্রাও বলা হয়। বিটকয়েন একটি অনলাইন কারেন্সি সিস্টেমের মুদ্রা। এই কারেন্সি সিস্টেমকে ক্রিপ্টোকারেন্সিও বলে। একে দেখা অথবা ছোঁয়া যায় না। এটি তৈরি হয় অনলাইনে এবং ব্যবহারও হয় অনলাইনে, ডিজিটাল মাধ্যমে। বিটকয়েন পুরোপুরি আমাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত, এটি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।
বিটকয়েন নেটওয়ার্ক হলো একটি পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক যা ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রটোকলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ব্যবহারকারীরা বিটকয়েন ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট সফটওয়্যার ব্যবহার করেন এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে নামাঙ্কিত মেসেজ চালাচালির মাধ্যমে বিটকয়েন আদান-প্রদান করেন।
লেনদেনগুলো ব্লকচেইন নামে পরিচিত একটি বন্টিত, প্রতিলিপিকৃত পাবলিক ডাটাবেসে রেকর্ড করে রাখা হয় এবং মাইনিং নামের প্রুফ অব ওয়ার্ক প্রটোকল ব্যবস্থায় ঐকমত্য অর্জিত হয়।
বিটকয়েনের ডিজাইনার সাতোশি নাকামতো দাবি করেন, বিটকয়েনের ডিজাইন ও কোডিং ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল। প্রকল্পটি ২০০৯ সালে মুক্ত সোর্স সফটওয়্যার হিসেবে অবমুক্ত করা হয়।
বাস্তবিকভাবে দেখতে গেলে একটি সাধারণ কাগজ আর কোনো নোটের মধ্যে পার্থক্য থাকে না। কিন্তু একটি নোটের মূল্য ২ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কেননা এর পেছনে সরকার থাকে, ব্যাংক থাকে এবং কোনো অথোরিটি থাকে। তারা একসঙ্গে বসে এটি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যে, কোন নোটের মূল্য কত হবে। আর আমরা তাদের বিশ্বাস করি এবং এই সামান্য কাগজের টুকরাটাকে মূল্যবান বানিয়ে দেয়। কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণই আলাদা। বিটকয়েনের মান কোনো সরকার নির্ধারণ করে দেয় না, আর এর নাই বা কোনো ব্যাংক। বিটকয়েন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট অথোরিটিও থাকে না।
২০০৯ সালে এই মুদ্রা সর্বপ্রথম চালু করা হয়েছিল এবং এটি তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত চলে আসছে, যা অনলাইনে অনেক বেশি জনপ্রিয়।
বর্তমানে ১ বিটকয়েন সমান ৫৭৯ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ বিটকয়েন সমান ৬ লাখ ৪ হাজার ৪২৫ টাকার মতো। কয়েক বছর আগে এর মূল্য ১,২০০ ডলার পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। কিন্তু যেহেতু এর মূল্য নির্ধারণ করার জন্য কোনো অথোরিটি নেই, কোনো সরকার নেই এবং কোনো ব্যাংক নেই, তাই এর মূল্য ওঠানামা করতে থাকে (যদি এখন বিটকয়েনের মূল্য স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে)। আপনার এবং আমার এই মুদ্রার ওপর ভরসা আছে বলেই আমরা একে অপরের সঙ্গে এটিকে বিনিময় করতে পারি। এতে সুবিধা হলো আমি যদি আপনাকে কিছু বিটকয়েন পাঠাতে চাই, তবে আমি আপনাকে তা সরাসরি পাঠিয়ে দিতে পারবো। এমনটা নয় যে, আমাকে কোনো ব্যাংকে যেতে হবে আর না হলে কোনো অথোরিটির মাধ্যমে আপনাকে পাঠাতে হবে। আপনার অ্যাকাউন্ট কখনো ফ্রিজ করা সম্ভব নয় এবং আপনি যখন ইচ্ছা যাকে তখন ইচ্ছা তাকে এই মুদ্রাটি পাঠাতে পারবেন। এতে আপনি যত সুবিধা পেতে পারেন, তত সুবিধা সাধারণত কোনো ব্যাংক বা সাধারণ মুদ্রা আপনাকে দিতে পারবে না। ব্যাংক ট্রানজেকশনে অনেক বেশি রুল থাকে, যা আপনাকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হয়, কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে কোনো রুল থাকে না।
ফ্রিতে বিটকয়েন আয় করা যায়। বিটকয়েন ফ্রিতে আয় করার জন্য প্রায় ২০০০ এর উপর সাইট রয়েছে। যারা তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে কেপচা পূরণ করার জন্য বিটকয়েন প্রদান করে থাকে। এটা সাধারণত ১০০-১০০০০০ সাতোশি প্রদান করে থাকে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, বিটকয়েনের একক সাতোশি নামে পরিচিত। একটি ওয়েবসাইটে কেপচা পূরণ করে অল্প কিছু আয় করা যায়। আর তাই যত বেশি ওয়েবসাইটে কাজ করবেন আয় তত বাড়বে। কিছু ওয়েব সাইটের অ্যাড্রেস দেয়া হলো যা বিটকয়েন থেকে আয় করা সম্ভব।
১. FastBTC
২. Rolling Faucet
৩. Green Bitco
৪. Bitcoinker
৫. Destiny BTC
৬. We Love Bitcoin
৭. http://freebitco.in
৮. FAUCET.BITCOINZEBRA.COM
৯. http://www.bitcoinaliens.com
১০. http://moonbit.co.in
পরিশেষে বলা যায় ইউজাররা অপরাধের দিকে ঝুঁকে যায় বেশি। বাংলাদেশে এটি এখনও অনুমোদন দেয়া হয়নি।
এখনও বিটকয়েনে বিনিয়োগ করাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়। কিন্তু ক্রিপটোকারেন্সি হিসেবে বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিটকয়েন।
(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/আরজেড)

মন্তব্য করুন