পাঠকশূন্য ভাষাশহীদ জব্বার গ্রন্থাগার

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ
  প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:০০
অ- অ+

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে ছাত্র-জনতার এক মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আব্দুল জব্বার। এই ভাষা শহীদের স্মৃতি ধরে রাখতে ২০০৭ সালে শহীদ আব্দুল জব্বারের জন্মস্থান ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাচুয়াতে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ‘শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়। ভালো মানের চেয়ার-টেবিল, কোলাহলমুক্ত শান্ত পরিবেশ, নির্মল হাওয়ায় পর্যাপ্ত বই পড়ার সুযোগ থাকলেও পাঠক পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রন্থাগারটির অবস্থান গফরগাঁও উপজেলা শহর থেকে দূরে হওয়ায় পাঠকশূন্য হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রন্থাগারের ভেতরে আলমারিতে ইতিহাস, বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন, দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম, কবিতা, উপন্যাস ও গল্পের বই ছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনীসহ চার হাজার ১৩৭টি বই। ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত এই গ্রন্থাগারের আলমারির থরে থরে সাজানো রয়েছে এসব বই। বেশিরভাগ বই বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখকের লেখা। বইগুলো দেখে মনে হয়, বইগুলো একেবারেই পড়া হয়নি।

এদিকে গ্রন্থাগারের ভেতরে কোথাও ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের কোনো স্মৃতিচিহ্ন, এমনকি কোনো ছবিও দেখা যায়নি। তবে ফটকে আবদুল জব্বারের একটি ছবি রয়েছে।

গ্রন্থাগারটি শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে। বাকি পাঁচ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই আট ঘণ্টায় লোকজন আসে মাত্র দুই-তিনজন। যারা আসেন, তারাও কিন্তু বই পড়ার জন্য আসেন না, দেখতে আসেন। কোনো দিন একজনও আসেন না। পাঠক না থাকায় বইয়ের সেলফে হাত দেয়ারও প্রয়োজন হয় না বহুদিন। আগে নিয়মিত পত্রিকা রাখা হলেও পাঠক না থাকার অজুহাতে এখন আর পত্রিকাও রাখা হয় না। পাঠক ও দর্শনার্থী না থাকায় গ্রন্থাগারিককে এখানে সারাদিন শুয়ে বসে সময় কাটাতে হয়।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে জাদুঘরটি ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। সারা বছর কোনো কর্মকাণ্ড থাকে না। অনেক সময় দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ওই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর দেখতে আসেন। এ সময় তারা জাদুঘরে শহীদের কোনো স্মৃতিচিহ্ন না পেয়ে হতাশ হন। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণেও এই গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা খুবই কম।

ওই গ্রন্থাগার ও জাদুঘরের গ্রন্থাগার কায়সারুজ্জামান বলেন, গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর ভবনের আয়তন প্রায় এক হাজার ৪৬০ বর্গফুট। মোট বইয়ের সংখ্যা চার হাজার ১৩৭টি। আগে প্রতিদিন হাতে গোনা কিছু পাঠক এলেও এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়।

২০০৭ সালের ২৫ মার্চ এক সভায় তার জন্মগ্রাম পাঁচুয়ার নাম প৬িরবর্তন করে ‘জব্বার নগর’ করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় আজও বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও গফরগাঁওয়ের পাঁচুয়া গ্রামবাসী নিজেদের জব্বারনগরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। তারা আশাবাদী, কাগজে-কলমে পাঁচুয়ার নাম ‘জব্বার নগর’ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার।

ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের জন্ম ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাঁচুয়া গ্রামে। তার বাবার নাম হোসেন আলী শেখ ও মা সাফাতুন নেছা। সাত ভাই-বোনের মধ্যে জব্বার ছিলেন সবার বড়।

তরুণ বয়সে আনসার বাহিনীতে যোগ দিলেও এক সময় চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়ে ঢাকায় ২১ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই দিন রাত ৮টায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। গফরগাঁওবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি শহীদের পৈত্রিক ভিটাকে কেন্দ্র করে শহীদ জব্বার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার নগরের আধুনিকায়ন করা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুব উর রহমান বলেন, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদের নামে তার নিজ গ্রামের বাড়িতে জাদুঘর শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের বই যেন পর্যাপ্ত থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখা এবং পাঠক বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।

সরকারি প্রজ্ঞাপনে নামকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়ায় জব্বারনগর গ্রাম বাস্তবায়নের ব্যাপারেও অবগত নই। আর এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আমার অফিসে রয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/কেএম/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যুদ্ধবিরতিকে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক বিজয় বললেন শাহবাজ শরিফ
হজ পালনে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৩৭ হাজার ৮৩০ বাংলাদেশি
সোনার দাম কমলো, ভরি ১৭০৭৬১ টাকা
আজ যে অঞ্চলে ঝড় হতে পারে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা