শেষ পর্ব

হায়েরোগ্লিফে যা লেখা হবে

অমর মিত্র
  প্রকাশিত : ০৬ মে ২০২০, ১৭:৫৯| আপডেট : ০৭ মে ২০২০, ১০:১৪
অ- অ+

[পূর্বে প্রকাশের পর]

খবরিয়ার কথা:

১৭ তারিখের পরদিন ১৮ তারিখে কলেজ স্ট্রিট গেছি সমীরের গাড়িতে। ও আমাকে নিয়ে গেল। ফিরেও এলাম সন্ধের পর। কফিহাউস যাইনি। ১৮-র পর থেকে বাড়িতে। ১৭ তারিখে সেই জয়েন্ট সেক্রেটারি কয়েকটি মিটিং করেছিলেন, তিনি নিজের পুত্র দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন কি না তা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ১৮ তারিখ সন্ধেয় অপু আমাদের সঙ্গে এসেছিল পাইকপাড়া অবধি। লেখক অজয় গুপ্তর বাড়ি যাবে। ফিরবে উবের ধরে। যেতে যেতেই অপুর হোয়াটস আপে খবর এল, স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি বন্দ্যোপাধ্যায় স্বেচ্ছা অন্তরীনে গেছেন ১৪ দিনের জন্য। ভয় ছড়িয়ে পড়ছিল। নবান্ন বীজানুমুক্ত করা হচ্ছে তা টেলিভিশনে দেখাল। বিপন্ন মুখের ছবি দেখতে পেলাম। কর্মচারীরা ভয় পেয়েছে। ফাইল ধরতে চাইছে না। ফাইলে উনি গতকাল স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। আমাদের এখন প্রহর গুণতে হবে, যাঁরা তাঁর কাছাকাছি এসেছিলেন, তাঁরা কেমন থাকেন। ভাইরাস আমাদের ভিতর ঢুকে পড়েছে। আতঙ্ক সেই ভাইরাসের নাম। মহামারী সেই ভাইরাসের পিছু পিছু আসছে।

১৮ তারিখের পর থেকে ঘরে। অনেকেই ঘরে। স্যোসাল মিডিয়াতে বারবার বলা হচ্ছে জমায়েতে না যেতে। ঘরে থাকতে হবে। ইতালির ভেনিসের একটি ভিডিও এল ভোরে হোয়াটস আপে। নিঝুম দুপুর। একটি মানুষও নেই শহরে। এ কোন শহর? ক্যামেরা এক নিঝুম শহরের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অলিগলি দিয়ে, সেই ক্যানেলের পাশ দিয়ে, নৌকো বাঁধা রয়েছে, কিন্তু কোনো মানুষ নেই। সব দোকানের শাটার নামানো। রাস্তায় কোনো প্রাণের চিহ্ন নেই। মনে হচ্ছিল বিজয়ী ঘাতক করোনা ভাইরাস আমাকে প্রাণহীন শহর দেখিয়ে দিচ্ছে। দেখ দেখ দেখ, মানুষের কী হাল করেছি আমি। অলিগলি আমাদের কলকাতার মতো। আর সেই ক্যানেল ! স্পিড বোট, গন্ডোলা ঘাটে বাঁধা, দুপারের অপূর্ব স্থাপত্যের অট্টালিকার ছায়া পড়েছে ঝিম মেরে থাকা জলে। বড় বড় অট্টালিকা নিয়ে প্রাচীন রেনেসাঁর দেশ ঘুমিয়ে আছে। ভেনিস ভূ- পর্যটক মার্কোপোলোর জন্মস্থান, মার্কোর কথা আরম্ভেই বলেছি, এখান থেকেই যাত্রা করেছিল ভূপর্যটনে। পার হয়েছিল জনপদের পর জনপদ। মার্কোর মনে পড়ে, সেই যে সেই যুবকের বাসনা জেগেছিল শহর দেখার। সে বনে বনে ঘুরে হয়েছিল ক্লান্ত। তারপর একদিন পৌঁছল ইসাডোরা নামের এক শহরে, যে শহরে নিখুঁত দূরবীন তৈরি হয়, বেহালা তৈরি হয়। দুই সুন্দরীর যে কোনো একটিকে পছন্দ করা নিয়ে মনের ভিতরে দ্বন্দ্বের জন্মালে তৃতীয় এমন একজনের সন্ধান পাওয়া যায়, যে কিনা অধিকতর সুন্দরী। সেই যুবক এমন এক নগরের কথাই মনে মনে ভেবেছিল, কিন্তু সমস্তজীবন হেঁটে যখন সে পৌঁছেছিল সেখানে তখন সে বৃদ্ধ। শহরের কেন্দ্রে কোথাও এক জায়গায় বসে সে দেখছিল অল্প বয়সীদের। না, দেখছিল নগর জনমানবহীন। বৃদ্ধ এবং নগরের সৌধ, পায়রা, ঈগল, চিল...। ভেনিসের ভিডিও আমার কাছে এইভাবে এসে দেখা দিয়েছিল।

ভেনিস বড় মিউজিক কম্পোজার আন্তনিও ভিভাল্ডির জন্মস্থান। সিম্ফোনিক ও অপারেটিভ মিউজিক এর ইতিহাসে ভিভাল্ডির জায়গা অনেক উঁচুতে। ভেনিসের সব সঙ্গীত গিয়াছে থামিয়া। সেই ভিডিও যেখানে পৌঁছয় সেই জায়গা এক প্রশস্ত চাতাল। মনে হয় আনন্দের জায়গা ছিল। চার্চের ঘন্টা বাজছিল। শেষ ঘন্টা…, না পায়রার দল মাটিতে খুটে খাচ্ছে দানা। পায়রারা আছে। বুঝতে পারছি ভেনিস কী হয়ে গেছে। বাঁচতে সকলে ঘরে ঢুকে গেছে। আমাদের এমনি ভাবেই শহর ফাঁকা করে দিতে হবে। এমনি করে পায়রাদের কাছে গোটা শহর রেখে দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়তে হবে।

মেয়র বললেন, আপনি কি ভেনিসে ফেরার পথে এদিকে এসেছেন মার্কো ?

মার্কো বললেন, আমি কোথায় ফিরছি জানি না স্যার, কিন্তু ফিরছি, ফিরতে ফিরতে সব বিপ্রতীপ দেখছি, আয়নায় যেমন দেখা যায়, যা যেদিকে ছিল তা সেদিকে নেই, পাহাড়টা পশ্চিমে ছিল, এখন সেদিক ধুধু প্রান্তর, স্তেপভূমি দিগন্তে গিয়েও থামেনি, দিগন্ত পেরিয়ে আকাশের শেষ সীমা ফুঁড়ে কোথায় গেছে যে জানি না।

বলতে পারত নিকোলাই ইভানোভিচ লোবাচেভস্কি। দাবার ঘুঁটি নাড়াচাড়া করতে করতে মেয়র বললেন।

মার্কো বিস্মিত হয়ে মেয়রের মুখের দিকে তাকালেন। মেয়র বললেন, গণিতজ্ঞ, কিন্তু সে নাই, কাযান বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি যান, অনেক গণিতজ্ঞ এই দূরত্ব মেপে নিতে পারবে।

তিনি কোথায় ?

সেই কথাও সেখানেই জানা যাবে।

মার্কো বললেন, অসীমের সীমা হয় না হে নগরাধিপতি, আমি যত মেপে যাব, সে তত দূরে চলে যাবে, গণিতজ্ঞের সাধ্য নাই তার হিশেব খুঁজে বের করে।

খবরিয়ার খবর:

২০ তারিখ রাতে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। ২২শে মার্চ লকডাউন। একদিনের জন্য। বিকেল ৫টায় শাঁখ বাজল, থালা বাসন কাঁসর ঘন্টা বাজল এবং মিছিল বেরল নাম সংকীরতনের মতো করে। বাজি ফাটল। হাউই উড়ল। উৎসব হয়ে গেল যেন। মানুষের এক অংশ ভাবল হয়ে গেছে। ভাইরাস মরেছে। কিন্তু দেশ সারাদিন নিস্তব্ধ ছিল। মানুষ ঘরের বাইরে যায়নি। ২৩-২৪ বাদ দিয়ে ২৫শে মার্চ থেকে সমস্ত দেশে লকডাউন আরম্ভ হলো। সমস্ত উড়ান, মেল, এক্সপ্রেস, প্যাসেঞ্জার, লোকাল ট্রেন বন্ধ, মেট্রো বন্ধ… কলকাতা এবং সমস্ত পুর শহর লকডাউন। তারপর সমস্ত পশ্চিমবঙ্গ। ভারত লকডাউন হলো ৩১শে মার্চ পর্যন্ত, তারপর তা ১৪-ই এপ্রিল পর্যন্ত পরিবর্ধিত হলো।

আমাদের কলকাতা ফাঁকা হয়নি। মানুষ ঘর থেকে যে বেরচ্ছে তা দেখছি টেলিভিশনে। যাঁকে অফিসে যেতে হবে, যেতেই হবে। যাঁকে ব্যবসায় যেতে হবে, যেতেই হবে। চৈত্র মাস পড়ে গেছে, এই সময় কলকাতা শহরে কেনাকাটার বড় ধূম পড়ে যায়। হাতিবাগান, গড়িয়াহাটে বস্ত্র বিপনি, হকার সকলেই বেচা কেনা করে অনেক। লক্ষ্য ১লা বৈশাখ। আমরা ১৮ তারিখ যখন হাতিবাগান পার হয়ে আসছি পথঘাট ফাঁকা। আলো ঝলমল দোকানদানি একা বসে ঝিমোচ্ছিল। হকারের হাঁকডাক শোনা যাচ্ছিল না। সমীর, অপু বলছিল লোকে ভয় পেয়েছে। আমিই নিজেকে আশ্বস্ত করতে বললাম, না, সবে চৈত্র পড়েছে, সেলের বাজার শুরু হতে দেরি আছে। রাত্রে আমরা, আমি মিতালি নর্থ ক্যারোলিনায় চকোরি মৈনাকের খবর নিই, আমেরিকায় সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। ওদের ওয়ার্ক অ্যাট হোম শুরু হবে হবে করছে। ওরা থাকে শারলট সিটিতে। বলল, গণ পরিবহন নেই শারলটে, তাই কিছু হয়নি তেমন। তবে ওরা সতর্ক হচ্ছে। বাচ্চার ইস্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। অনলাইন লেখাপড়া হবে। ধনী দেশ। প্রযুক্তির শীর্ষে ওঠা দেশ, হবে এমন। কিন্তু কদিন বাদে কী হল। নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলস, সানফ্রান্সিস্কো, ফ্লোরিডা, মিয়ামি বিচ…, সব দখল হয়ে গেল অদৃশ্য ঘাতকে। ভারতেও করোনা ঢুকছে তখন। কীভাবে ঢুকছে, উড়ানে করোনা বীজ বয়ে আনছে ভীত ভারতীয় ছাত্ররা, ভ্রমণকারীরা, কাজের জন্য বিদেশ যাওয়া ব্যক্তিরা...ইওরোপ, ইতালি, ব্রিটেন, স্পেন, আমেরিকা থেকে বীজ আসছে আমাদের দেশে। তাদের দেশে এই ভাইরাস বয়ে নিয়ে গেছে চীন প্রত্যাগত মানুষজন। চিন নিজেদের সুরক্ষিত রেখেছে উহান শহরকে অবরুদ্ধ করে। কিন্তু মারণ ভাইরাসকে কেন উড়ে যেতে বিমান পাঠাল ইওরোপের দেশে দেশে ? উড়ান বন্ধ করেনি কেন? কিংবা সতর্ক করেনি কেন দেশগুলিকে ? নিজেরা বাঁচলে হবে ? চিন দেশের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, স্বার্থপরতা সারা পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে ফেলেছে। এই সময়, এই অবরুদ্ধ সময় ধরা পড়তে লাগল, স্যোসাল নেটওয়ারকিং সাইটে। দেজ পাবলিশিঙের তিমির চলে গেল বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় গ্রামে, যামিনী রায়ের দেশে। সে লিখে গেল,

‘এই প্রথম বাড়ি ফেরার সময় এত বিষণ্ণ। কলকাতাকে মনে হচ্ছে যেন ওরান শহর। ময়ূরাক্ষীতে বসে ভাবছি ওরান শহরের মতো এই শহরও লকডাউন হয়ে যাবে কি। আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি? পলাতক? কতদিন আগে পড়া প্লেগ উপন্যাসের ঘটনাগুলি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আর ভয় পাচ্ছি। এরমধ্যে সিঙ্গাপুরের সমুদ্রতীরে ফিরে এসেছে ডলফিন। ইটালির ক্যানেলে ফিরে এসেছে হংসদল। চিন, ইটালি,ফ্রান্স, স্পেনে কমে গেছে বায়ুদূষণের মাত্রা। প্রকৃতি কি কিছু বলতে চাইছে? যে সভ্যতা শুরু হয়েছিল প্রকৃতির সঙ্গে অবিরাম লড়াই আর ধবংসের পথে সেই গতিপথ বদলানোর সময় এসে গেল কি ? প্রকৃতি মাতা কে প্রণাম। মা নিশ্চয় তার শিশুদের বাঁচিয়ে তুলবে আশা রাখি।’

তিমিরকান্তি ঘোষ।

মেয়র শুনতে শুনতে বললেন, এত বিষাদ তোমার কথায়, শহরটা কেমন আমাকে বলো, আমি একটু স্বস্তি পাই, তুমি নিখুঁত বর্ণনা করতে পার, আমি সেই শহর দেখি নাই, একটা মানুষ এক জীবনে সব নগর, বন্দর দেখতে পায় না, তখন অন্যের কাছে শুনে নিতে হয়।

মার্কো বললেন, আমাকে একটু ভদকা দিলে খুশি হই, আমি শীতার্ত।

মেয়র তার ব্যবস্থা করলেন। পরিচারক এসে ভদকা এবং কচি বাছুরের সুসেদ্ধ মাংস পরিবেশন করল। সঙ্গে কিছু ফল। আঙুর, পেস্তা, বাদাম, ছোলা। সবুজ লেটুস পাতা, মালবেরি...। মার্কো খুশি হলেন। নিশ্চিন্ত হলেন। খাদ্য আর পানীয় থাকলে তিনি কতবার ভূপর্যটনে যে যেতে পারেন। দেশ-দেশান্তরে ঘুরে নগর ও জনপদের সাক্ষী হতে পারেন। মার্কোর শীত কমে এল। ক্ষুধা সাময়িক ভাবে নিবৃত্ত হলো। তিনি তো ক্ষুধার কাহিনিও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন কম না। নগর জনপদ মানে হর্ম্যশ্রেণী, মহাসড়ক, মোটরগাড়ি, ফিটন গাড়ি, বায়ুযানই নয়, নগর জনপদ মানে রঙ্গালয়, খাদ্য এবং পানীয় আর সমবেত উল্লাস নয়,ক্রীড়াভূমি কিংবা মধুশালা নয়, নগর এক ভিখারিনী মাকেও চিনিয়েছে তাকে। পাইপের ভিতরে মানুষ, বস্তির ভিতরে মানুষ, একটি ঘরে সাতজন মানুষের কুঁকড়ে থাকা, বাতাসের অভাবে বাতাস খুঁজে বেড়ান। মার্কো ঝিমঝিমে মাথায় মেয়রকে প্রথমে কলকাতার মানচিত্র বোঝাতে লাগলেন। পশ্চিমে এক নদী। শহর ঐ নদীর কূলে গিয়ে শেষ হয়েছে। সূর্যাস্ত দেখতে হলে শহরের কেন্দ্রস্থলে যে সবুজ প্রান্তর আছে, সেখানে গেলে ভালো। একটা নগরের পশ্চিম তো এক জায়গা থেকে পশ্চিম নয়, অনেক জায়গা থেকেই পশ্চিম দেখা যায়। কিন্তু সব পশ্চিমই গঙ্গা নামের এক পবিত্র নদীর ওপারে দেখা যায়। নদীর এপারে কোনো পশ্চিম নেই। নদীর ওপারে অন্য শহর, সেখান থেকে পশ্চিম চলে গেছে অনন্ত দ্রাঘিমা পার করে কোথাও। মার্কো সেই কেন্দ্রস্থলের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে এক দুর্গের পশ্চাতে সূর্যোদয় দেখেছিলেন একদিন। তখন তাঁর সন্মুখে এক ভিখারিনী মা তার সন্তান কোলে সূর্যাস্ত দেখছিলেন। মার্কো বললেন, কলকাতার নানা জায়গা থেকে সূর্যাস্ত দেখেছেন তিনি। কিন্তু ভিখারিনী মায়ের সামনে রক্ত বলয় হয়ে সূর্যদেব অস্ত যাচ্ছেন, কন্যাকে তা দেখাচ্ছেন তিনি, এমন দ্যাখেননি আগে। ভিখারিনী মা বললেন, শহরটা তাঁর ছিল, শহরটা তাঁর নেই, দেশটা তাঁর ছিল, দেশটা তাঁর নেই, কিন্তু ফিরে আসবে এই ভেবেই সন্তান গর্ভে ধরা। তারপর যখন নগরের অনেক মানুষ, তারা স্থুলকায়, শীর্ণকায়, উচ্চশির, নতশির, দীর্ঘকায়, খর্বকায় মানুষ সেই সবুজ প্রান্তর ধরে সূর্যাস্তের দিকে চলতে আরম্ভ করেছে...।

সূর্যাস্তের দিকে কেন ? মেয়র জিজ্ঞেস করলেন।

কোথাও তো যেতে হবে হে নগরাধিপতি, কিছু মানুষ পশ্চিমে হাঁটে, কেউ হাঁটে পুবে, পরদিন ঐ দিকেই সূর্যোদয় হবে, সেই ভিখারিনী মা বিপরীতে হাঁটল।

সেই বিপরীতেও কি প্রান্তর বয়ে গেছে স্তেপভূমির মতো ? মেয়র জিজ্ঞেস করলেন।

না। মার্কো বললেন, কিছুটা গিয়েই বহুতল হর্ম্যশ্রেণী পরপর। সেই দিকে যেন প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভিখারিনী যুবতী মা তা যেন ভেদ করে গেলেন। কিছুই তাঁকে আটকাতে পারেনি। আমি তাঁকে অনুসরণ করতে গিয়ে হারিয়ে ফেললাম।

খবরিয়ার খবর লিখন:

কলকাতায় আর এক বীরপুঙ্গব জ্বরে পড়েছেন। তিনি এক ব্যবসায়ীপুত্র। লন্ডনে গিয়েছিলেন, নাকি লেখাপড়া করেন, এম, বি,এ, পড়েন তা নিয়ে কৌতুহল নেই। সেই যুবক কলকাতায় ফিরে বাবার স্যানিটারি ফিটিংসের দোকানে গিয়ে বসেন। ঘোরাফেরা করতে থাকেন। ধনী তাই করোনা ছোঁবে না। তাঁরা কাউকে পাত্তাই দেন না, থোড়াই সরকারি ফরমান মানেন, ওসব ফালতু আদমির জন্য। গরিব আদমির জন্য। কিন্তু এ দেখি ধনীর রোগ। যুবককে ধরল। জ্বর এল। তখনো সেই হাউজিঙের ম্যানেজাররা বলে যাচ্ছে তারা সব ঠিক করে রেখেছিল। কিচ্ছু হবে না। বাচ্চা ছেলে করে ফেলেছে...। টেলিভিশনে তা দেখেছি। সব কিছুকে ভয়ানক তুচ্ছ করার প্রবণতা এইসব মানুষের। পয়সা আছে, ক্ষমতাকে কিনে নিতে পারেন। ছড়াল ভাইরাস। পরিবারে পরিচিকা সহ আরো তিনজন আক্রান্ত হলো। সেই হাউজিঙে অনেক ক্ষমতাবানের বাস। ক্ষমতার লক্ষণ হলো সমস্ত রকম আইন ভাঙা।

মেয়র শুনতে শুনতে বললেন, এমন হয়ে থাকে ?

আমি দেখেছি এমন। মার্কোর মনে পড়ছিল অন্য কথা। নগর জনশূন্য হয়ে গেলে নগর কেমন হয়ে যায়। যেন নগর তৈরি হয়ে গেছে। বড় কোনো স্থপতি বহুদিন ধরে তা নির্মাণ করে চলে গেছেন। সেই নগর এখন মানুষ আসার অপেক্ষায়। মানুষ এসে প্রবেশ করবে অট্টালিকাগুলিতে। পথে পথে ঘুরবে সুন্দরী নারী, পুরুষ। বিপনিগুলির দরজা খুলে যাবে। ভরে উঠবে খাদ্য সম্ভারে। মার্কো দেখেছেন নগরের পথে সারমেয়রা কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মাঝে মাঝে সাইরেন বাজিয়ে ছুটে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেনস। সেখানে বসন্ত এসে গেছে, কদিন আগেই রঙের উৎসব গেছে। তারপরই সব ঝিম মেরে গেল। এই দিনের শেষ কোথায়? এই দিনের কথা কোথায় লেখা হবে?

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভারত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ!
ঢাকাসহ ১১ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস
ভেষজ আনারস ক্যানসার প্রতিরোধে সিদ্ধহস্ত, শরীরের ওজনও কমায়
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১১০ জন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা