করোনার দিনলিপি: হাসপাতাল যাত্রা

শাহাদাত হোসেন
  প্রকাশিত : ১৯ মে ২০২০, ১৮:৩৮
অ- অ+

খুব দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছি এ্যামবুলেন্সের। এদিকে বাসায় সবার মধ্য এক অনিশ্চিত যাত্রার গুমোট কান্নার প্রতিবিম্ব চোখে মুখে। ভবনের মানুষ জানলে আতংকিত হয়ে পড়বে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম হেটে রাস্তা থেকে এ্যামবুলেন্সে উঠবো।

ঝুকি নিয়ে আমার সহকর্মী ভাস্কর ভাদুড়ী আর মহসিন উল হাকিম ভাই শান্তিনগর ইষ্টার্ণ প্লাস মার্কেটের সামনে এ্যামবুলেন্স নিয়ে অপেক্ষা করছেন।পরিকল্পনা মতো আমরা দুজন দুটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাই। হেটে যখন আসছিলাম আমার ভেতরটা খুব শূণ্য লাগছিলো।

বারান্দায় প্রিয়জনেরা দাড়িয়ে। আমার সাড়ে তিনমাস বয়সী মেয়েও আমার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে। আমার শশুর আব্বা চোখের পানি মুছতে মুছতে এগিয়ে যাচ্ছেন। বুঝতে পারছিলাম সব কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে আমাকে লড়াই করতে হবে এ সংকটে।

এ্যামবুলেন্সের একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমার সহকর্মীরা। পিপিই(সুরক্ষা সামগ্রী) পরা ড্রাইভার প্রথমে আমার শশুর আব্বার এবং পরে আমার পুরো শরীর, ব্যাগে জীবানুনাশক ছিটিয়ে দিলো ।এরপর চেপে বসলাম অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে। আমাদের বিদায় দিলেন সহকর্মীরা। অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা করলো হাসপাতালের দিকে। আগে কখনো এম্বুলেন্সে অসুস্থতা নিয়ে উঠিনি, জীবনে প্রথমবার অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে বসলাম।

সাইরেন বাজাতে লাগলো। সাইরেনের শব্দে ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে-মুচড়ে উঠলো। একবার মনে হলো এটা কি আমার শেষবারের মতো যাত্রা? এই শহরকে দেখেছি প্রায় ১৮ বছর ধরে কিন্তু এমন নিস্তব্ধ নীরব শহর আগে দেখিনি। জানালার বাইরে দেখছিলাম,মনে হচ্ছিলো পৃথিবীর সবকিছু স্তব্ধ হয়ে আছে।

নানা দুশ্চিন্তা আশঙ্কা আর ফেলে আসা স্মৃতি মনে পড়তে থাকলো। যখন অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের খুব কাছাকাছি চলে আসলো তখন কিছুটা সম্বিৎ ফিরে আসলো আমার। ইমারজেন্সি বিভাগের সামনে এসে এম্বুলেন্স থামলো। ড্রাইভার জরুরি বিভাগের সামনে বসা দুজন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আমাদের রিপোর্ট দিলেন।

সেখান থেকেই ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলো। ততক্ষেনে আমরা প্রায় ৪০ মিনিট অ্যাম্বুলেন্সে বসেছিলাম।মনে হচ্ছিলো অনন্তকাল ধরে বসেই আছি।করোনা রোগী পরিবহন করে নিয়ে আসার পর ড্রাইভারই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে।

পরে একজন আনসার সদস্য এবং ড্রাইভার এসে আমাদের নামতে বললেন, দূর থেকে দাঁড়িয়ে বললেন সোজা হেঁটে লিফটে ওঠার জন্য। দুটো ব্যাগ হাতে নিয়ে আমরা দুজন লিফটের আটে এসে নামলাম। দূর থেকে একজন দাঁড়িয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে বললেন গেটের বাইরে। লম্বা সময় অপেক্ষার পর একজন নার্স এসে আমাদের সোজা হেঁটে ২৯ নম্বর রুমে যাওয়ার জন্য বললেন।

কঠিন নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে ( এটা করনা রোগীদের জন্য করা হয়েছিলো) আমরা ২৯ নম্বর কেবিনে এসে বসলাম।

৯ এপ্রিল ২০২০, হাসপাতাল, ঢাকা।

লেখক: সাংবাদিক, যমুনা টেলিভিশন

ঢাকাটাইমস/১৯মে/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রেমের টানে মালয়েশিয়ার তরুণী বদলগাছীতে, বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে
মুন্সীগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ বন্ধুর  
চুয়াডাঙ্গায় তেলবাহী ট্রাপচাপায় ৩ জন নিহত
ক্যাসিনোকাণ্ড অভিযানের নেপথ্য কাহিনী জানলে চমকে যাবেন আপনিও
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা