কেমন হবে আগামীর করোনামুক্ত বিশ্ব!

ওয়াহেদ মুরাদ
  প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:০১
অ- অ+

বর্তমানে যে সময়টা যাচ্ছে সত্যিকার অর্থেই আমরা পৃথিবীবাসী এই মুহূর্তটির জন্য কখনো প্রস্তুত ছিলাম না। পৃথিবীর অর্থনীতি, রাজনীতি, সামরিক শক্তিসহ আধুনিক টেকনোলজিকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে এক অদৃশ্য ভাইরাস শত্রুর কাছে। অর্থাৎ আপনার সমস্ত শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আপনি প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছেন। কারণ আপনি জানছেন না কীভাবে সেই শক্তিকে ব্যবহার করবেন বা আদৌ সেই শক্তি যথেষ্ট কি না। আর এ সব ভাবনা থেকে বড় বড় টেকনোলজিস্ট, ইকোনমিস্ট বা রাষ্ট্রের মাথাওয়ালা মানুষরা এখনই ভাবতে বসে গিয়েছেন ভবিষ্যতে করোনামুক্ত পৃথিবীতে কি কি পরিবর্তন আসতে পারে? আর সেই নতুন পৃথিবীর চিত্র কেমন হতে পারে?

আমরা কি প্রস্তুত আছি সেই নতুন পৃথিবীর জন্য? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ভবিষ্যতের পূর্বাভাস:

টাচবিহীন প্রযুক্তি আসছে। খুব বেশিদিন হয়নি যখন টাচ স্ক্রীন প্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয় এসেছে। মোবাইল স্ক্রীনের স্ক্রলিং থেকে শুরু করে কোথায় নেই টাচ স্ক্রীন। ল্যাপটপ, ট্যাব বা ব্যাংকের এটিএম বুথ কিংবা কোনো সুপার শপের কম্পিউটার সেখানেও টাচ স্ক্রীন। কিন্তু করোনা আমাদের চিন্তাকে পাল্টে দিল। বিজ্ঞান অনুযায়ী ভাইরাসটি যেকোনো সারফেসে প্রকারভেদে ভিন্ন ভিন্ন সময়ব্যাপী অবস্থান করে। যার প্রেক্ষিতে যেসব স্থান বা বস্তু আমাদের যতটা সংস্পর্শে আসছে আমরা ততটাই সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছি। করোনার এমন প্রভাবে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন কীভাবে ফিজিক্যাল টাচ ব্যতীত বা সীমিত করে সব ধরনের যোগাযোগ বা আদান-প্রদান ও বিনিময় করা সম্ভব হবে। আর সেই উত্তর খুঁজতে ভবিষ্যতে জোরালো হতে যাচ্ছে টাচবিহীন প্রযুক্তি। যা ‘ভয়েস’ ও ‘মেশিন ভিশন ইন্টারফেস’-এর মাধ্যমে ভয়েস আইডেন্টিফিকেশন ও ফেস ভয়েস রিকগনিশনের দ্বারা কোনো প্রকার টাচ ছাড়াই প্রয়োজনীয় কাজ করা সম্ভব হবে।

শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো হতে যাচ্ছে।

Work at Home, Zoom Meeting, Google Meet, Webinar, Facebook Live সাম্প্রতিক সময়ে এই ব্যপারগুলোর সাথে আমরা কমবেশি খুব পরিচিত হয়ে উঠছি। কারণ পৃথিবীর অনেক কিছুই এখন বন্ধ। মানুষ বাড়িতে থেকে যার যার লেভেলে কাজ করে যাচ্ছে। সে অফিস হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, মিটিং, অর্ডার প্লেসমেন্ট ইত্যাদি। অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলোকে চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো না কোনো উপায়ে ডিজিটাল প্লাটফর্মের ওপর নির্ভর করছি। আর এসবের পেছনে মুখ্য চালিকাশক্তি ছিল সামাজিক দূরত্ব। চিন্তাবিদরা সেটাই ভাবছেন। ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে মানুষকে সেভাবেই ভাবাবে কতটা দূরত্ব রেখে আমাদের কাজগুলোকে সেরে নিতে পারি। হতে পারে অন্য দেশে না গিয়ে নিজের অফিস থেকেই একটা গ্রুপ মিটিং সেরে ফেলা বা অনলাইন এডুকেশন বা শপিং ইত্যাদি। সুতরাং আসছে ভবিষ্যতে ডিজিটাল প্লাটফর্ম আরো শক্তিশালী হতে যাচ্ছে। বলা যায়, না হওয়ার কোনো বিকল্পই নেই!

ইন্টারনেট অব থিংস এবং বিগ ডাটার ব্যবহার আসছে। সংক্ষেপে আইওটি হচ্ছে, আমাদের ব্যবহারের জিনিসপত্রের সাথে ইন্টারনেটের সংযোগ করা। যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ, গাড়ি ইত্যাদির সাথে ইন্টারনেট কানেকশন থাকবে এবং ইউজার সেসব ডিভাইস কন্ট্রোল করবে। আর বিগ ডাটা হচ্ছে বিশাল পরিমাণ তথ্য নিয়ে কাজ-কারবার।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে করোনা মোকাবেলায় তাদের সাফল্যের কথা শোনা যায়। তাদের সাফল্যের কারণ কি ছিল? বিগ ডাটা বা ডাটা সায়েন্স বা মেশিন লার্নিংয়ের মতো যে বিষয়গুলোর ব্যবহার শোনা যায় তা তারা ব্যবহার করেছিল প্রাকটিক্যালি। যখনই প্রথম কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয় তখনই তারা মোবাইল ডিভাইসের জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি কোনো ট্যাক্সি বা শপিংমলের কোনো দোকান বা কোন রাস্তা ব্যবহার করেছিলেন আর সেসব জায়গায় কারা তার সংস্পর্শে এসেছিলেন সব ডাটা নিয়ে তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। সাফল্যও পেলেন। সুতরাং ভবিষ্যতে মহামারি পর্যবেক্ষণ, সতর্কতা তৈরি, আক্রান্ত এলাকার প্রাদুর্ভাব মনিটরিং, সংক্রামক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ ইত্যাদি সহজ হবে। এখানে একটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রাইভেসী’ আপনার গোপনীয়তা নিয়েও বর্তমানে কাজ চলছে। তার অর্থ, ভবিষ্যতের মহামারিগুলোতে আরও কার্যকরভাবে নিরীক্ষণ ও মোকাবেলায় IoT ও Big Data নিয়ে আসছে বিশাল সম্ভাবনা।

‘রোবট, মেশিন লার্নিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডাটা অ্যানালাইটিক্সের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিই হবে আগামী দিনের অর্থনীতিসহ জীবনযাত্রার চালিকাশক্তি। এজন্য সবাইর এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা থাকতে হবে।’

আইটি প্রতিষ্ঠানের পেশাজীবীদের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে। ‘কোভিড-১৯ মহামারিকালে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ, ই-কমার্সে কেনাকাটা বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৫০ লাখ। দুর্যোগ, মহামারিকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রাখার এটি একটি প্রকৃষ্টতম উদাহরণ।’

লেখক: উপদেষ্টা এবং পরিচালক, বাংলাদেশ সফট স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ক্লাব ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, রোটার‍্যাক্ট ক্লাব অব চিটাগাং রিভার শাইন

ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ড. ফয়জুল হককে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
অতিরিক্ত সচিব আরিফুজ্জামানসহ ৩ জনকে ওএসডি
যশোরে পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবক খুন 
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অর্ধ বার্ষিক বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা