হঠাৎ বন্যা: বাঁধ ভাঙার শঙ্কায় কয়েক হাজার মানুষ

অরিন্দম মাহমুদ, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর ২০২০, ১৬:০৭| আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২০, ১৬:১৩
অ- অ+

উজানের ঢলে বন্যার কারণে নিম্নাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে হাবুডুবু খাচ্ছে গরু-ছাগল। সেখানে বাঁধ ভাঙার শঙ্কায় গ্রামের শত শত মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে খোলা আকাশের নিচে। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে টানা বৃষ্টিতে উজানের ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে।

বন্যার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা গেছে, সম্প্রতি উজানের ঢলে আত্রাই নদীর পানি উপজেলার শিমুলতলী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ৮ নম্বর খেলনা ইউনিয়ন ও রসপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের (রসপুর-সরাইল গুচ্ছগ্রামসহ) ভগবানপুর, উদয়শ্রীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এক কোমর থেকে বাড়িঘরের দেয়ালের মাঝ পর্যন্ত বন্যার পানিতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাবুডুবু খাচ্ছে গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি। ঘরের ভেতরে কোমর ভর্তি পানি থাকায় রান্না করা যাচ্ছে না। এতে ছোট শিশুদের নিয়ে পরিবারের লোকজন পড়েছেন বেকায়দায়।

রসপুর বাজারের আশপাশে বন্যাদুর্গত গুচ্ছগ্রামের মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে গরু, ছাগল ও শিশুদের নিয়ে বাঁধের উপর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ঘরের ভেতরে থাকা চাল ডাল তরিতরকারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় না খেয়ে থাকার অভিযোগও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ নিয়ে বন্যাদুর্গত ও অসহায় সাধারণ মানুষের পাশে এখনো কোনো জনপ্রতিনিধি সরেজমিনে পরিদর্শন ও বন্যা দুর্গত মানুষের খোঁজখবর না নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ দেখা গেছে।

এলাকাবাসী জানান, বাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেগুলেটর থাকায় খুব সহজেই বন্যার পানি ঢুকে পলির আবাদি জমিতে ফলানো ফসল যেমন আমন ধান, কলা, বেগুন, পটল, মুলা, শাক-সবজি, শসা, ঝাল, পেঁপে, পেয়ারা, আখসহ প্রায় দুইশ বিঘা জমিতে ফলানো কৃষকের স্বপ্ন বন্যার পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আশপাশের সব পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় পথে বসেছেন মাছ চাষিরা। এতে প্রায় কয়েকশ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

রসপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ, নাসির উদ্দিন ও স্থানীয় দুর্গা মন্দিরের সভাপতি অলিভ চন্দ্রদাস অভিযোগ করে বলেন, ক'দিন ধরে বন্যার পানিতে ভাসছি। আমাদের দুঃখ দুর্দশায় সমবেদনা জানাতে কেউ আসেনি।

সরাইল গুচ্ছগ্রামের গণেশ মাহিস্বর ও শেফালী বেগমের সঙ্গে দেখা হলে বলেন, বাড়িঘরের ভিতরে কোমর পানি। ঘরে রাখা খাবার চাল, ডাল, জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না পেলে খাব কি।

এ বিষয়ে ৮ নম্বর খেলনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, মেম্বারদের নিয়ে আমি সবসময় খোঁজ খবর রাখছি। কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বালির বস্তা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। পিআইও, পৌর মেয়রসহ উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বন্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছি। বাঁধে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের তালিকা করা হবে। টিআর চাল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই, চাল পেলে বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

উপজেলা পিআইও ইস্রাফিল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা গত ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ অনেককে নিয়ে খেলনা ইউনিয়নের ভগবানপুরসহ দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। কিন্তু গুচ্ছগ্রামে যাওয়া হয়নি। বাঁধের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরোনো রেগুলেটর লিক করে গুচ্ছগ্রামসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা হয়েছে। রেগুলেটর মেরামত করা আমাদের কাজ নয়, এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। আশা করি খুব শিগগির আমরা পাঁচ টন চাল বরাদ্দ পাবো। ত্রাণের চাল পেলেই দুর্গতদের মাঝে বণ্টন করা হবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোপা আমন ধান ১৫৪ হেক্টর, শাকসবজি ১৬ হেক্টরসহ মোট ১৭০ হেক্টর জমির আবাদ বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। নতুন করে এগুলো চাষের আর কোনো সুযোগ নেই বিধায় আমরা পরবর্তীতে আগাম রবি মৌসুমে আলু, পেঁয়াজ, সরিষা, রসুন চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান আজাহার আলী বলেন, আমরা বুধবার গিয়েছিলাম। বন্যার ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। ইউএনও মহোদয় ছুটিতে আছেন। তিনি এলে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান এম আলীকে ধরে থানায় দিল জনতা
তারেক রহমানকে শরণখোলা বিএনপির নেতাদের চিঠি, কাউন্সিলে আঞ্জুমান আরার প্রার্থীতা বাতিলের দাবি
সনাতনী জনগণের মাঝে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিলেন কাজী আলাউদ্দিন
বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই দেশ পুনর্গঠন করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা