ভরসা পাচ্ছেন না ভর্তিচ্ছুরা, অভিভাবকদের মনেও উৎকণ্ঠা

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৩৫

পরীক্ষা নিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও সেই পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে কী প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে এবার অনিশ্চয়তায় পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নিতে উপাচার্যদের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব এলেও তা সম্ভব হবে কি-না সে প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতি নির্ধারকদের মনে।

করোনা মহামারীর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজন করা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার ফলে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই হিসেবে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে অন্তত নয় থেকে দশ লাখ শিক্ষার্থী।

প্রতি বছর বিপুল শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ে পড়তে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে নামে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে অন্য পরীক্ষাগুলোর মতো এই ভর্তির আয়োজনও সম্ভব হচ্ছে না।

এই অবস্থায় গত শনিবার বৈঠকে বসেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। সেখানে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন তারা। ওই বৈঠকেই ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার একটি প্রস্তাব আসে। আর এজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায় কি-না সে বিষয়েও আলোচনা হয়।

শিক্ষাবিদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনাকালে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেয়া স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে তাই ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি বদলানো দরকার। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আগে থেকে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে অসুবিধা হতে পারে। তাই আগে ইন্টারনেটের গতির বিষয়েও ভালো প্রস্ততি রাখতে হবে। এছাড়াও প্রশ্নপত্রের ধরণের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। কতো সময়ের পরীক্ষা হবে প্রশ্ন কিভাবে সেট করা হবে এসব বিষয় রয়েছে। তবে অনলাইন কিংবা অফলাইন যেভাবেই পরীক্ষা হোক প্রশ্নফাঁসের বিষয়টা যেন না ঘটে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।’

উচ্চমাধ্যমিক পার করে আসা সিংহভাগ শিক্ষার্থীরই উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথম পছন্দ থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের প্রধান এই বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া যায় কি-না সে বিষয়ে তারা ভাবনাচিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। আর সেক্ষেত্রে কিভাবে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে সেসব বিষয়ে আজ মঙ্গলবার ঢাবি কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।

ঢাবি উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ের সঙ্গে নানাবিধ বিষয় জড়িত রয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে আমরা আলোচনায় বসবো। পরীক্ষা নিতে অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা যে সফটওয়্যারের কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের সংশ্লিষ্টরা দেখছেন।’

ওই সফটওয়্যারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের চেয়ারম্যান এবং আইসিটি ডাইরেক্টররা পর্যালোচনা করে দেখছেন বলে জানান ঢাবি উপাচার্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মুনাজ আহমেদ নূর ঢাকা টাইমসকে বলেন, অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে নূন্যতম একটা স্মার্ট ডিভাইস থাকতে হবে। কারণ আমাদের সফটওয়্যারটি ইনস্টল করে পরীক্ষা দেয়ার জন্য পরীক্ষার্থী যখন অন করবে তখন মোবাইলের ক্যামেরা এবং রেকর্ডিং নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে সফটওয়্যারটি। তখন আর কোনও সফটওয়্যার সেখানে খোলা যাবে না। এটির নাম প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন’।

এসময় মোবাইলের ক্যামেরাটি রাখতে হবে নূন্যতম দুই ফিট দূরত্বে। ফলে দেখা যাওয়ার পাশাপাশি অডিও রেকর্ডিং হওয়ায় কারো সঙ্গে কথা বললেও সব রেকর্ডিং হতে থাকবে। একজন শিক্ষকের আওতাধীন ২০ জন করে পরীক্ষার্থী থাকবেন যারা প্রতিমুহূর্তে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন বলে জানান এই অধ্যাপক।

তবে দেশের অনেক জায়গায় দুর্বল নেটওয়ার্কে সেটি কতটা কাজ করবে সেই অনিশ্চয়তাও রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ অনেক উপজেলা সদরে এখনও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা মিলছে না। এসব এলাকায় বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ডেটা সার্ভিসও অত্যন্ত ধীরগতির। আর এ কারণে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়েও ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে।

এবিষয়ে অধ্যাপক মুনাজ বলেন, ‘একজন পরীক্ষার্থীকে পুরো সময়টা অনলাইনে না থাকলেও হবে। পরীক্ষা শুরুর প্রথম দশ মিনিট এবং শেষ দশ মিনিট অনলাইনে থাকলেই হবে। যেহেতু সাউন্ড রেকর্ডিংসহ ডিভাইস সফটওয়্যারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তাই অনলাইনে থাকুক আর না থাকুক মোবাইলে ছবিগুলো ক্যাপচার হবে। অর্থাৎ মোবাইলের স্ক্রিন কন্ট্রোলও থাকবে এডমিনের হাতে।’

এই সফটওয়্যারে অসদুপায় অবলম্বন করা যাবে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে অ্যাপসটি অন করার ফলে পরীক্ষার্থীদের লাইভ মনিটরিং করা যাবে। কারণ প্রতিটি মুহূর্ত মনিটরিং করা হবে। আর পরীক্ষা চলাকালীন সবকিছুই রেকর্ড থাকবে সার্ভারে। ফলে অফলাইনে থাকলেও ছবি এবং সাউন্ড রেকর্ড করা থাকবে। পরে সেই তথ্যগুলো সার্ভারে আসার পর বোঝা যাবে অফলাইনে তারা কোনও ধরণের অসদুপায় অবলম্বন করেছে কি না।’

তবে বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী এই অনলাইনের আওতায় অংশগ্রহণ করলে কিছু সমস্যা হতে পারে বলেও মনে করছেন অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর।

ভরসা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা

স্মার্ট ডিভাইস উচ্চ মাধ্যমিকের কত ভাগে পরীক্ষার্থীদের রয়েছে সে সম্পর্কে এখনও কোনও জরিপ বা কোনও ধারণা নেই। এমনকি স্মার্ট ডিভাইস থাকলেও সেটি ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা দেবার মতো দক্ষতা কতজনের আছে সে প্রশ্নও থেকে যায়। কারণ ম্যানুয়াল বলপয়েন্ট ব্যবহার করে উত্তরপত্র ভরাট করতে গেলেও শিক্ষার্থীরা ভুল করে থাকে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলে সেই স্মার্ট ডিভাইসটি সঠিক পদ্ধতিতে অপারেট করতে পারার প্রযুক্তিদক্ষতা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যে।

কুমিল্লার মোহাম্মদপুর সেরাজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মারুফা আক্তারের বাবা মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘মোবাইল তো আছে। কিন্তু এটার মধ্যে পরীক্ষা দিবে কিভাবে? এর মধ্যে উত্তর দিবে কি করে? মেয়েরে তো এতদিন মোবাইল চালাইতে দিই নাই। এখন এটা চালিয়ে পরীক্ষা দেবে?’

ঢাকার দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান মাহিন বলেন, ‘অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্মার্ট ডিভাইসকে ভালোভাবে অপারেট করা জানতে হবে। আমার স্মার্টফোন আছে। তবে অনলাইন পরীক্ষায় ভরসা করতে পারছি না। কারণ মোবাইল দিয়ে কথা বলা বা সোশ্যাল মিডিয়া চালানো এক বিষয় অপরদিকে এত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দেয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার।’

মাহিনের বাবা হামিদুর রহমান লিটন বলেন, ‘করোনার কারণে এতদিন সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এখন ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আরেক দুচিন্তা শুরু হলো। অনলাইনে পরীক্ষার ওপর বিশ্বাস করাটা কঠিন। তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা কি করবো।’

ঢাকার বিসিআইসি কলেজের তানভীর সিদ্দিক তাসীনের বাবা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘যদি অনলাইনেই ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারটি চূড়ান্ত হয় তবে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ সন্তানের ভবিষ্যতের বিষয় জড়িত। তা না হলে তো সে অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়বে। তবে করোনাকালে তো এর বিকল্প কিছু ভাবতেও পারছি না। তবে সে পরীক্ষা লিখিত হবে নাকি এমসিকিউ হবে আগেভাগে জানতে না পারলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা প্রস্তুতি নিতে সংকটে পড়বে।’

(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :