বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দু-চার কথা বলা তাদের ছলচাতুরি: তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:০০

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় তাকে নিয়ে ভাস্কর্যবিরোধিদের দু-চার কথা বলাকে ছলচাতুরি হিসাবে দেখছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের যারা কাফের বলেছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্মই ভাস্কর্য বিরোধিতা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে শেখ ফজলুল হক মনির ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়। একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।

এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাহফিলে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন, যেকোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া’ হবে। তাদের এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের বক্তব্য ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান নেতা ও স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন মরহুম মুসলিম নেতা হিসেবে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। কখনো কোনোভাবে এমন একজন প্রয়াত মরহুম জাতীয় নেতার বিরুদ্ধাচারণ করি না এবং করাকে সমীচীনও মনে করি না।’

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানেই মুক্তিযুদ্ধ। যারা দেশটা চায়নি, যারা মুক্তিযুদ্ধকে গন্ডগোলের বছর বলে, তারা বঙ্গবন্ধুকেও পছন্দ করে না। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ফতোয়া দিয়েছিল মুক্তিবাহিনীর সব সদস্য কাফের, তারাই আজকে বলছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা সঠিক হচ্ছে না। এটিকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আবার বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দুই-চার কথা বলার চেষ্টা করে। এ হচ্ছে ছলচাতুরি, তাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের অপকৌশলের অংশ, সেটা সবাইকে বুঝতে হবে।’

‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও তাদের ভাবধারা-নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী পরবর্তী প্রজন্ম চায় না দেশ এগিয়ে যাক। ১৯৭১ সালে তারা ফতোয়া দিয়েছিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছে তারা সবাই কাফের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করা ইমানের বরখেলাপ। পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র করা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সামিল। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হচ্ছিল, তখন তার স্বপক্ষে এই ফতোয়াও দেয়া হয়েছিল যে, এরা ‘গণিমতের মাল’, তাদেরকে ভোগ করা যাবে। যারা সেই ফতোয়া দিয়েছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্মই আজকে ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে, একটি শ্রেণিকে উস্কে দিচ্ছে, ভাস্কর্য ভাঙচুর করছে।’-যোগ করেন মন্ত্রী।

এই দেশে শতশত বছর ধরে বহু ভাস্কর্য আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমলে বহু ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ইতিহাসকে ধারণ করার স্বার্থে বহু ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। তখন কেউ কথা বলেনি। যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিভিন্ন জায়গায় নির্মিত হচ্ছে, তখন তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। এটি রহস্যজনক।’

‘সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে যে মৌলবাদী অপশক্তিকে পরাভূত করে, যে ধর্মান্ধগোষ্ঠীকে পরাভুত করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে রচিত বাংলাদেশে তাদের আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়া যায় না।’-যোগ করেন মন্ত্রী।

ভাস্কর্যবিরোধীদের চোখ মেলে ইসলামী বিশ্বের দিকে তাকানোর অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবে ভাস্কর্য মিউজিয়াম আছে, রাস্তায় রাস্তায় ঘোড়ার-উটের এমনকি মানুষের মুখাবয়বের ভাস্কর্য আছে। আরব রাষ্ট্রগুলোতে সেখানকার বাদশা-সুলতানদের মুখাবয়বসহ ভাস্কর্য আছে। আরব আমিরাতের মিশনপ্রধান আমার সাথে দেখা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, তাদের দেশে শতশত বছর ধরে কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অংশ হয়ে থাকা ভাস্কর্যগুলো অপরিবর্তনীয়। আর তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ঘোষণা দিয়েছেন, তারা এখানে কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য নির্মাণ করবেন। যারা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তারা সেখানে এরদোগানের ভাস্কর্যগুলো বা যারা আরব আমিরাত থেকে অর্থ নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালান, তারা আরব আমিরাতের ভাস্কর্যগুলো দেখেন না!’

ভাস্কর্যবিরোধীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাস্কর্য নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। আপনারাও বিভ্রান্তির হাত থেকে মুক্ত হোন এবং চোখ মেলে সারা পৃথিবীর দিকে তাকান। অন্যথায় দেশের মানুষ যেভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এই বিক্ষোভের আগুন আপনাদের গায়ে লাগবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি বলতে চাই, আমরা এই ধরণের বক্তব্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা কোনোভাবেই বরদাশত করবো না। দেশের সমস্ত সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে আহ্বান জানাই মাঝেমধ্যে এ ধরণের বক্তব্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবসময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

ভাস্কর্য কোনো ইস্যু নয় বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল যে মন্তব্য করেছেন তার সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে কিভাবে দেশে ফেরত আনা যায়, দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কিভাবে করা যায় আর খালেদা জিয়ার হাঁটুর ব্যথা, পায়ের ব্যথা হচ্ছে উনার কাছে ইস্যু।’

বিএনপির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারাতো জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য সারাদেশে বানিয়েছেন, আপনাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুন, এই অপশক্তির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিন, এই বক্তব্য দিতে আপনাদের এতো লজ্জা কেন? অন্যথায় আপনারা এর পেছনে ইন্ধনদাতা হিসেবে জনগণের কাছে চিহ্নিত হবেন।’

তথ্যমন্ত্রী এসময় বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘একজন মেধাবী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে অস্ত্রধারণ করে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের পর বীরবেশে বাংলাদেশে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে অসামান্য অবদান রেখেছিল, তাদের সংগঠিত করে দেশ গঠনের জন্য তার নেতৃত্বেই যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, শেখ ফজলুল হক মনিকেও তার অন্তসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজুমনিসহ সেদিন হত্যা করা হয়।’

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা লায়ন চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম, কন্ঠশিল্পী এস ডি রুবেল, স্বাধীনতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন টয়েল প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

ইট মারলে পাটকেল খাওয়ার জন্য বিএনপিকে প্রস্তুত থাকার হুঁশিয়ারী নানকের

সরকার দেশকে বিদেশি ঋণ নির্ভর দেশে পরিণত করেছে: জামায়াত

জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির তিন দিনের কর্মসূচি 

বিএনপির আরও চার নেতা বহিষ্কার

নাশকতার ১৪ মামলায় বিএনপি নেতা সালামের স্থায়ী জামিন

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আ.লীগের কর্মসূচি

বিএনপির আশার গুড়ে বালি, যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক গভীর করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল

ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি বানাচ্ছে: রাশেদ প্রধান

শেখ হাসিনা ছাড়া এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন কেউ করেনি: ওবায়দুল কাদের 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :