অবসরে রাউল, কাস্ত্রো শাসনের অবসান কিউবায়

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১২:২২| আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪১
অ- অ+

দীর্ঘ ছয় দশক পর কাস্ত্রো পরিবারের শাসনের অবসান ঘটছে কিউবায়। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন রাউল কাস্ত্রো। কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেলের হাতে কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পদ ফার্স্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব তুলে দেবেন রাউল। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে কাস্ত্রো পরিবারের কিউবা শাসন, যা শুরু হয়েছিল বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর হাত ধরে।

৮৯ বছর বয়সী রাউল জানিয়েছেন, তিনি ‘তীব্র ইচ্ছাশক্তি এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনায় পরিপূর্ণ’ নবীন প্রজন্মের কারও হাতে নেতৃত্বের ভার তুলে দিতে চান।

১৯৫৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে কিউবার তৎকালীন সরকার উৎখাতে নেতৃত্ব দেন ফিদেল কাস্ত্রো। এতে তার কমান্ডার হিসেবে ছিলেন ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রো।

২০০৬ সালে ফিদেল কাস্ত্রো অসুস্থ হওয়ার আগপর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০৮ সালে তিনি নেতৃত্ব তুলে দেন রাউলের হাতে। ২০১৬ সালে মারা যান কিউবার ঐতিহাসিক এ বিপ্লবী নেতা।

নেতা হিসেবে রাউলও কিউবায় একদলীয় শাসন কায়েম রেখেছেন। তার আমলেই ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বেশ উন্নতি হয়েছিল দ্বীপটির। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে রাউলের ঐতিহাসিক একটি বৈঠকও হয়েছিল।

শাসক কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পদে কাস্ত্রো পদবির কেউ না থাকলেও দেশে প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাদের মতে, কিউবার তরুণ প্রজন্মের চাপে বরং ধীরে ধীরে পরিবর্তন শুরু হয়েছে।

আক্ষরিক অর্থেই মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল কিউবার পরবর্তী প্রজন্মের নেতা। ১৯৫০-এর দশকে কাস্ত্রোর নেতৃত্বে বিপ্লব তার জন্মের আগের ঘটনা। বরাবরই সামরিক উর্দি পরতে পছন্দ করতেন ফিদেল ও রাউল। কিন্তু মিগুয়েলের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক নেই। বিটলসের গানে ও আধুনিক প্রযুক্তির ভক্ত মিগুয়েল কাস্ত্রোদের চেয়ে অনেক অর্থেই আধুনিক।

কিন্তু এই পরিবর্তনে কিউবার শাসনতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, ক্ষমতা থাকছে কমিউনিস্ট পার্টির হাতেই। কিউবার প্রাক্তন কূটনীতিক কার্লোস আলজ়ুগারে ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নরম্যান ম্যাকের মতে, ‘কাস্ত্রো পদবির কেউ শীর্ষ পদে না থাকার অর্থ এই নয় যে কমিউনিস্ট পার্টির কাজ করার ধরন বদলে যাবে। ২০১৯ সালের নয়া সংবিধানে স্পষ্টই বলা হয়েছে সমাজতন্ত্রে কিউবার আস্থা বদলাবে না।’

নেতৃত্বে বদলের চেয়ে কিউবার সাধারণ মানুষের অনেক বেশি চিন্তা আর্থিক সঙ্কট নিয়ে। তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে ওই দ্বীপরাষ্ট্র। মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যসামগ্রীর অভাব, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য লম্বা লাইন আর স্বাধীনতার অভাবে জেরবার কিউবানেরা।

আর্থিক সংস্কারে কিউবা সরকারের কিছু ভুল পদক্ষেপ, ট্রাম্প জমানায় আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা বাড়া ও করোনা মহামারির ফলে পর্যটকের সংখ্যা কমাই কিউবার বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। ২০২০ সালে ১১ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি কমেছে। ১৯৯৩ সালের পরে এই প্রথম এত বড় ধাক্কা খেয়েছে কিউবার অর্থনীতি।

অনেকের মতে, মিগুয়েলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের ইঙ্গিত না হলেও ধীরে ধীরে তরুণ প্রজন্মের চাপে কিছুটা বদল আনতে বাধ্য হচ্ছে কিউবান সরকার। ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রের হাতে থাকা অর্থনীতির দরজা বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য অনেকটাই খুলে দিয়েছে কিউবা।

ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে Industry Academia Collaboration Summit-2025 শুরু
নির্বাচনি প্রতীক: নৌকা বাদ ও শাপলা তালিকাভুক্ত করার দাবি এনসিপি’র
কুষ্টিয়া পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ফটকে ময়লা ফেলে কর্মবিরতি
জরুরি অবস্থা ঘোষণায় লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন, সিদ্ধান্তে একমত রাজনৈতিক দলগুলো
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা