সাক্ষাৎকারে ডিএসই পরিচালক রকিবুর রহমান

পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস কোনো সমাধান নয়

শাহ মো. সাইফুল ইসলাম
  প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১১:০২| আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১১:০৯
অ- অ+

করোনার মাঝেও দেশের ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার খোলা রাখার বিষয়টি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, এতে করে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস কোনো সমাধান নয়। পৃথিবীর কোনো পুঁজিবাজারেই এটা নেই। একমাত্র বিরল ঘটনা বাংলাদেশ। এ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তারা।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ডিএসই পরিচালক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকাটাইমসের অর্থনৈতিক রিপোর্টার শাহ মো. সাইফুল ইসলাম।

কীভাবে বুঝলেন যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, জানতে চাইলে রকিবুর রহমান বলেন, করোনার কারণে প্রথমে বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশা থাকলেও পরবর্তী সময়ে যখন বাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তখন বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে করে বোঝা যায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

গত বছর করোনার প্রথম দিকে পুঁজিবাজারকে নিয়ে গুজব ছড়ানোর কারণে বাজার খারাপ হতে থাকে বলে মন্তব্য করে ডিএসই পরিচালক বলেন, ওইঅবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে করে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। একই সমস্যায় এ বছর প্রথমে ব্যাংক বন্ধ রাখার কথা থাকলেও পরে তা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনায় ব্যাংক আবার খোলা রাখা হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।

রকিবুর রহমান বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই ব্যাংক বন্ধ থাকে না। আমাদের দেশের চেয়েও ভারতে করোনা পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ। কিন্তু তাদের দেশের পুঁজিবাজার খোলা রয়েছে। লন্ডন, আমেরিকা, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ সব দেশেই পুঁজিবাজার এবং ব্যাংক খোলা। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পরে তা পরিবর্তন করা হয়।

এবারও করোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে কুচক্রি মহল। তারা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। তবে এবার আর আগের মতো অপপ্রচারকারীরা তাদের অপপ্রচারে সফল হতে পারেনি বলে মনে করেন রবিকুর রহমান।

ডিএসই পরিচালক বলেন, বিনিয়োগকারীরা এ বিষয়ে সতর্ক ছিল। আমি বলব, বিনিয়োগকারীরা যেন হতাশ না হয়।

রকিবুর রহমান বিনিয়োগকারীদেরে উদ্দেশে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলেই হবে না। এখানে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। আপনাকে বিনিয়োগ করতে হলে কোম্পানির বিষয়ে ভালো করে বুঝতে হবে। কোম্পানিটা কেমন, কোম্পানির আয় কেমন, কোম্পানিটা গত কয়েক বছরে কেমন লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানির শেয়ারের দর কমলেও কোম্পানিটির পেইড আপ ক্যাপিটালের মাধ্যমে তা কোম্পানি ক্রয় করতে পারবে কি না- এসব বিষয়ে লক্ষ রেখে বিনিয়োগ করতে হবে। এতে করে বিনিয়োগে ঝুঁকি কমবে।

বিনিয়োগকারীদের ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির শেয়ার কেনার পরামর্শ দিয়ে ডিএসই পরিচালক বলেন, ‘এতে করে বিনিয়োগে ঝুঁকি কমবে এবং বিনিয়োগকারী নিশ্চিন্তে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারবেন। ফান্ডামেন্টাল শেয়ারের দাম যতই কমে যাক তাতে তেমন কোনো সমস্য হয় না। কারণ এসব শেয়ার কিছুদিনের জন্য দর কমলেও পরে তা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। এর জন্য বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে লোকসান খুব কম, সুফল বেশি। সেটা পাঁচ বছর পরেও আসতে পারে। সহজ করে বললে, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত। বিনিয়োগকারী লাভবান হতে পারবেন।

বাজারে এখন বাইবেক আইন প্রণয়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন ডিএসই পরিচালক। এতে করে বাজার আরও বেশি সাসটেইনেবল হবে।

রকিবুর রহমান বলেন, কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম যদি ১৫০ টাকা হয়, আর তা যদি কোনো কারণ ছাড়াই কমতে থাকে এবং কমতে কমতে ১২০ টাকা হয়, তখন কোম্পানির রিজার্ভ যদি ১০০ কোটি টাকা থাকে, সেখান থেকে দুই কোটি টাকা দিয়ে বাজার থেকে কোম্পানির শেয়ার কিনে নিলে ওই শেয়ার আবার ঘ রে দাঁড়াবে। এই আইনকেই বাইবেক আইন বলে। সে ক্ষেত্রে কোম্পানিটির রিজার্ভ থাকবে ৯৮ কোটি টাকা।

বাইবেক আইন করার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে অবগত করেছেন জানিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, আইনটির ব্যাপারে সংসদে উত্থাপন করার কথা রয়েছে।

ফ্লোর প্রাইসের ব্যাপারে পুঁজিবাজারের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ২০২১ সালে জানুয়ারিতে যখন বাজার ঘুরে দাঁড়ায় তখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বোচ্চ আড়াই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। তখন যে শেয়ারগুলোর ভিত্তি ভালো, সেসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইস থেকে উঠে গেছে। আর যেগুলো পচা কোম্পানি, সেগুলোর শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। তালিকাভুক্ত ৩৬৭টি কোম্পানির মধ্যে ১০০-এর কাছাকাছি কোম্পানির শেয়ার দর ফ্লোর প্রাইসে পড়ে রয়েছে। পরবর্তী সময়ে যখন কোম্পানিগুলো নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করল, তখন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর সমন্বয় হয়ে প্রাইস পরিবর্তন হয়েছে। আবার যখন ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয়, তখন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কমতে থাকে। এখন কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে কোম্পানির শেয়ারের দর আবার বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে বোঝা যায় ফ্লোর প্রাইসই সমাধান নয়। বরং যে কোম্পানির শেয়ারের দর যা হওয়া উচিত তা-ই হবে।

শেয়ারের দর বাড়বে আবার কমবে এটাই পুঁজিবাজারের নিয়ম। এতে কের বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ ক্যাশ করতে পারছে। অথবা অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারছে। যদি কোম্পানির শেয়ারের দর ফ্লোর প্রাইসেই থাকে তাহলে বিনিয়োগকারীকে সেসব শেয়ার নিয়ে বসে থাকতে হয়। এতে করে বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়ে।

রকিবুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো স্টক এক্সচেঞ্জেই ফ্লোর নির্ধারণ করা নেই। একমাত্র বিরল ঘটনা বাংলাদেশ। আমরা এটা থেকে ক্রমান্বয়ে বের হয়ে আসতে শুরু করেছি। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার একটি আন্তর্জাতিক মানের পুঁজিবাজার। এটাকে সে নিয়মেই চলতে হবে। অন্যান্য পুঁজিবাজারের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের বাজারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

আবেগ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দিয়ে ডিএসই পরিচালক বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে আবেগের কোনো জায়গা নেই। পুঁজি নিয়ে আসবেন, তবে বিনিয়োগের সময় জেনে বুঝে বিনিয়োগ করবেন। এতে করে বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পল্লীবন্ধু এরশাদ চিরকাল মানুষের হৃদয়ে কণক প্রদীপ হয়ে জ্বলবেন
চাঁদা না দেওয়ায় পল্লবীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ: গ্রেপ্তার ৩
ছন্দে ফিরলেন লিটন, সমতায় ফিরল টাইগাররা
১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১০৭ কোটি মার্কিন ডলার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা