কতটা সচ্ছল মুনিয়ার পরিবার?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৫৩| আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৫২
অ- অ+

মোসারাত জাহান মুনিয়া। গুলশানে নিজের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সোমবার রাতে উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। আত্মহত্যায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে মুনিয়াকে ঘিরে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এখন সরব মুনিয়াকে নিয়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুনিয়া গুলশান-২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন সেটি ছিল তার ভাড়া বাসা। দুমাস আগে উঠেছিলেন সেখানে। অগ্রিম দুমাসের ভাড়াও দিয়েছিলেন। প্রতিমাসে ভাড়া ছিল এক লাখ টাকা। তিনি একাই নাকি থাকতেন ওই বাসায়।

মামলার এজহারে বলা হয়েছে, ২১ বছরের তরুণী মোসারাত জাহান পড়াশোনা করতেন মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয়বর্ষে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন কলেজ শিক্ষার্থী কী করে লাখ টাকা ভাড়ায় একা গুলশানের মতো অভিজাত পাড়ায় থাকতেন? পড়াশোনার বাইরে মুনিয়ার কোনো পেশা ছিল না। তাহলে বাসা ভাড়া, জীবনযাপনসহ পড়াশোনার খরচ কোথায় থেকে আসত? সেই সুবাদে সামনে আসছে মুনিয়ার পরিবারের বিষয়টি। এই ব্যয় বহনে মুনিয়ার পরিবার কতটা স্বচ্ছল?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুনিয়াদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা শহরের মনোহরপুর উজির দিঘির দক্ষিণ পাড়ে। সেখানে মুনিয়াদের পৈত্রিক একতলা পাকা দালান আছে। ‍মুনিয়ার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান মারা গেছেন বেশ আগেই। বাড়িটি ছাড়া তেমন কোনো সম্পদ তিনি রেখে যেতে পারেননি। মা ছিলেন ব্যাংকার। তিনিও প্রয়াত হয়েছেন। মুনিয়ারা তিন ভাইবোন। সবার বড় ভাই। নাম আশিকুর রহমান সবুজ। তারপর মেজো বোন নুসরাত জাহান। সবার ছোট ছিলেন মোসারাত জাহান মুনিয়া।

মুনিয়ার ভাই সবুজ তার স্ত্রীকে নিয়ে কুমিল্লার বাড়িতে থাকেন। বোন নুসরাতের স্বামী একজন ব্যাংকার। তিনিও পরিবার নিয়ে কুমিল্লা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকেন।

মুনিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাবা-মা হারা মুনিয়া নবম শ্রেণি পর্যন্ত কুমিল্লায় পড়শোনা করেন। পরে আসেন ঢাকায়। এখানে একজন আত্মীয় বাসায় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। পরে ভর্তি হন উচ্চমাধ্যমিকে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ভাই সবুজের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল নুসরাত ও মুনিয়ার। সম্পদের উত্তরাধিকার পেতে একটা সময় মামলা-মোকদ্দমাতেও যেতে হয়েছিল দুই বোনকে। সেই থেকে মুনিয়ার পড়াশোনাসহ সার্বিক দেখভাল করতেন বোন নুসরাত। এক কথায় বাবা-মায়ের অবর্তমানে তিনিই ছিলেন মুনিয়ার অভিভাবক। মা-বাবার রেখে যাওয়া কিছু নগদ অর্থ থেকেও মুনিয়ার পড়াশোনার ব্যয় চলতো। কিন্তু ঢাকার অভিজাত পাড়ায় থেকে কিংবা উচ্চাবিলাসী জীবনযাপনের যথাযথ ব্যয়ের সক্ষমতা তাদের ছিল না।

মুনিয়ার নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুনিয়ারা ছোটবেলা থেকেই একটু চাকচিক্য পছন্দ করতেন। পরিবারের অবস্থা যেমনই থাকুক, ভালো চলাফেরা, ভালো সমাজে ওঠাবসার চেষ্টা ছিল। ঢাকাতে এসেও মুনিয়া যথাসম্ভব চাকচিক্যময় জীবনযাপন পছন্দ করতেন। এনিয়ে বোন নুসরাতের সঙ্গেও তার বিভিন্ন সময় তর্ক-বিতর্ক হতো। কিন্তু মুনিয়া তার নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে বেশি প্রাধাণ্য দিতেন।

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, বাবা-মা হারা সন্তানদের জীবনে চলাচলের জন্য যথাযথ দিকনির্দেশনা দেওয়ার অভিভাবকের শূন্যতা অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য প্রতিটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত দেখা যায়, বিশেষ করে নারীদের জীবনব্যবস্থায় বাবা-মা মারা যাওয়ার পর একজন নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা যতটা ভালো অথবা খারাপ থাকুক না কেন, তাদের মধ্যে একধরনের অসহায়ত্ব কিংবা পরিবারের কাছ থেকে অসহযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়। সেই জায়গাটিতে ভিন্নতাও আছে। যদি নারী বিবাহিত হয় তাহলে এক ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করে। আর যদি অবিবাহিত হয় তাহলে আরেক ধরনের পরিস্থিতি সে মোকাবিলা করে।’

তৌহিদুল হক বলেন, ‘মুনিয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমের সংবাদ পড়ে যেটি মনে হয়েছে, আসলে তার বাবা-মা না থাকার কারণে পরবর্তীকালে তার অভিভাবক হিসেবে বড় বোন গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছে বা যে কথা বলছে, আসলে জীবনে চলার জন্য যে সঠিক দিকনির্দেশনা বা পরামর্শের প্রয়োজন হয় অভিভাবকদের কাছ থেকে সে ধরনের পরামর্শ বা নিদের্শনা পেয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।’

এই সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। আইন প্রমাণ করবে কে দোষী কে অপরাধী। আইনের নিজস্ব ব্যাখ্যা ও নিয়ম অনুযায়ী চলবে। তবে এই ঘটনার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের যে অভিমতগুলো এগুলোও কিন্তু সমাজের এক ধরনের চিত্র। সেটিকেও আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না।’

তৌহিদুল হক আরও বলেন, ‘অনেকের বক্তব্য আমি লক্ষ্য করেছি, তারা বলতে চেয়েছেন যে এরকম নারীর সংখ্যা সমাজে আরও অনেক রয়েছে। এই ধরনের কাজগুলো তো গোপনেই হয়। প্রকাশ্যে এই ধরনের পরিস্থিতি বা অবস্থার মধ্যে অনেকেই রয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘তারমানে আমরা বুঝতে পারছি সমাজের ভেতরকার যে অবস্থান, বিশেষ করে নারীদের স্বাভাবিক জীবনের যে নিশ্চয়তা, এই বিষয়গুলোর জন্য পরিবার, সমাজ একইসাথে বৃহৎ পরিসরে রাষ্ট্রের যে করণীয় এই জায়গাগুলো নিয়ে আমাদের ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।’

গুলশানের আগে মুনিয়া বনানীতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন। মাঝে কুমিল্লায় চলে গিয়েছিলেন। মাস দুই আগে আবারও ঢাকা আসেন। এবার ওঠেন গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে। মুনিয়া যে সেই ফ্ল্যাটে একা থাকতেন, তা অজানা ছিল না তার ভাইবোনের। মুনিয়া এই উচ্চবিলাসী জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত টাকা পরিবার থেকে পেতেন না। তাহলে তিনি কীভাবে সেখানে থাকতেন, তা কি জানতেন না তার ভাইবোনেরা? তখন কি তারা মুনিয়াকে সতর্ক করতে বা যে পথে তিনি চলে গেছেন সেই পথ থেকে ফেরানোর যথাযথ চেষ্টা করেছেন? কৌতুহলীদের এই প্রশ্নগুলো এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/এইচএফ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এসএসসিতে পাসের হারে দেশসেরা রাজশাহী বোর্ড, অন্যরা যা পেল
রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাফল্যের ধারা অব্যাহত
১৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা