গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা রোধে যা জানা জরুরি

ঢাকায় অনেক এলাকা গ্যাস নেই। বাধ্য হয়ে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন নগরবাসী। কিন্তু আশঙ্কাজনক হলেও সত্য যে, এসব সিলিন্ডার একেকটি বোমার মতো ভয়বহ হয়ে উঠছে। কারণ নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে এসব সিলিন্ডার বাতিল করার ব্যবস্থাপনাটি খুবই দুর্বল। যে কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বাজারে অহরহ বেচাকেনা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব দেখার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ কি নিয়মিত তদারকি করছেন?
রাজধানীর মগবাজারে রবিবার সন্ধ্যার দিকে একটি ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন মানুষ। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। এই বিস্ফোরণে আশপাশের অনেক ভবনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনকি রাস্তায় থাকা বাসের যাত্রীরাও ব্যাপকভাবে আহত হয়। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য বলছে, ওই ভবনের নিচে গ্যাস সিলিন্ডার ছিল।
দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা। জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাই সাবধান হতে হবে এখন থেকেই। সিলিন্ডার কেনার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এতে সহজে এধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। মূলত গ্যাসের কোনো মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ হয় না, কিন্ত প্রতিটি সিলিন্ডারের একটি মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ থাকে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেই বিস্ফোরণের দিকে এগোতে থাকে সিলিন্ডার। মেয়াদ শেষ হওয়া সিলিন্ডার ঘরে রাখা আর ঘরে বোমা রাখা সমান কথা।
সিলিন্ডার বিধিমালা-১৯৯১ এ বলা হয়েছে সিলিন্ডার বিনষ্ট করা হলে বিনষ্ট করার সময় থেকে এক বছর পর্যন্ত তার রেকর্ড রাখতে হবে। এই রেকর্ড প্রতিবছর জানুয়ারি, মে এবং সেপ্টেম্বর মাসে লিখিতভাবে বিস্ফোরক পরিদর্শকের কাছে পাঠাতে হবে। একাজগুলো আদতে করা হয় কিনা সেটি প্রশ্নবিদ্ধ। না হলে প্রায়শ এরকম বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটত না।
সিলিন্ডার বিধিমালা-১৯৯১’র ৩৪-এ বলা হয়েছে রিটেস্টিং এ কোনো সিলিন্ডার অনুপযোগী হলে সিলিন্ডারগুলোকে এমনভাবে চ্যাপ্টা করতে হবে যেন সেগুলো আবার পরস্পর যুক্ত করে নতুন সিলিন্ডার প্রস্তুত করা সম্ভব না হয়। কিন্তু বিধান থাকলেও এগুলো নষ্ট করা হচ্ছে কি?
কীভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার চেনা যাবে?
প্রত্যেকটি সিলিন্ডারের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে এবং এই মেয়াদসীমা শেষ হয়ে গেলে সিলিন্ডার তার চাপ ক্ষমতা হারায়। সাধারণভাবে সিলিন্ডারের গায়ে লেখা দেখে বোঝার উপায় নেই এর মেয়াদকাল সম্পর্কে। কারণ, এখানে কিছু সাংকেতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যেটা দেখে কিছুই বোঝা যায় না।
প্রতিটি সিলিন্ডারের উপরে যে রিং দেয়া থাকে তার ভিতরের দিকে A20, B19, D18, C22 এরকম সাংকেতিক লেখা থাকে। এটিই হলো সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ।
এখানে, বছররের ১২ মাসকে ৪টি ভাগে ভাগ করা থাকে।
যেমন, ১. A- বছরের ৩ মাস। যেমন: জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাস।
২. B- তার পরের ৩ মাস এপ্রিল, মে এবং জুন মাস।
৩. C- হলো জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস।
৪. D- হলো অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাস।
আর ইংরেজি বর্ণের শেষে বছরের শেষ দুই ডিজিট থাকে। অর্থাৎ A20 এর মানে হলো: ২০২০ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসে সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হবে। যদি D18 থাকে তাহলে, ২০১৮ সালের অক্টোবর, নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর মাসে সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হবে।
অর্থাৎ, ১. A20 অর্থ ২০২০ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসে মেয়াদ শেষ হবে।
২. B19 অর্থ ২০১৯ সালের এপ্রিল, মে বা জুন মাসে মেয়াদ শেষ হবে।
৩. C22 অর্থ হলো ২০২২ সালের জুলাই, আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বর মাসে মেয়াদ শেষ হবে।
৪. D18 অর্থ ২০১৮ সালের অক্টোবর, নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর মাসে মেয়াদ শেষ হবে।
দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের ট্র্যাডেজির কথা কেউ ভোলেনি। সেখানে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ হতে সৃষ্ট আগুন পার্শ্ববর্তী ভবনসমূহে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসাবমতে, সেসময় ঘটনাস্থলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ৭৮ জন। কোনো দুর্ঘটনা কেবলই দুর্ঘটনা নয়। জীবনের মূল্য অনেক। এমন দুর্ঘটনার যাতে বারবার না ঘটে, সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৮জুন/এসএস/এইচএফ)

মন্তব্য করুন