যে সব কারণে আলোচনা-সমালোচনায় হেলেনা জাহাঙ্গীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:২৮| আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২১, ১৫:০৫
অ- অ+

আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হয়েই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া। নিজের প্রচার-প্রকাশনায় বিভোর থাকা এক সমালোচিত ব্যক্তিত্ব হেলেনা জাহাঙ্গীর। ব্যবসায়ীক সংগঠনের সাবেক এই সদস্য ভাইরাল ব্যক্তি ও বিষয়ের উপর ভর করে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন। নিজেকে আলোচনায় নিয়ে আসতে নানা সমালোচনার জন্মও দিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে বারবার বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়ন চেয়েও বঞ্চিত হয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন সময়ে তার নানান কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ক্ষমতারও লালসা। তিনি একাধিক বার তার প্রমাণও দিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে যতেষ্ট চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। নিজের ঢাক-ঢোল পেটাতে উত্তর সিটির সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও গণপরিবহনে দেখা গিয়েছিল তার পোষ্টার। বড় বড় করে সাটিয়েছিলেন ফেস্টুন। কিন্তু পদ বঞ্চিত হন তিনি। মনোনয়ন পান করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক।

সম্প্রতি কুমিল্লা-৫ (ব্রাক্ষণপাড়া-বুড়িচং) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। সংগত কারণে মনোনয়নপত্রও কিনেছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। নিজেকে সমাজসেবী, নারীবাদীসহ নানান তকমা দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন এফবিসিসিআই এর সাবেক এই সদস্য। কিন্তু তাকে সে পদের যোগ্য বলে মনে করেনি আওয়ামী লীগ। ফলে মনোনয়ন বঞ্চিত হন হেলেনা।

হেলেনা জাহাঙ্গীর লায়ন্স, নোটারিসহ বেশ কিছু ক্লাবের সদস্য। নিজেকে আলোচনায় রাখতে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মত বিষয়কে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। আর নিজের কাজের চাইতে কয়েকশো গুণ বেশি প্রচারণা করতেন তিনি- এমন ভাষ্য তারই নিকটজনদের। ব্যক্তিগত ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ও নানান মাধ্যমে নিজের প্রচারণায় বেশি মনোযোগি ছিলেন তিনি।

নিজেকে আরও কিছুটা মেলে ধরতে একটি আইপি টেলিভিশন চালু করেছেন হেলেনা। জয়যাত্রা নামের অবৈধ এই নামমাত্র টেলিভিশনটির মাধ্যমে তিনি হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য টাকা নিয়েছেন তিনি। যা গণমাধ্যমে নিয়মের সম্পূর্ণ বিপরীত। অবৈধ চ্যানেল পরিচালনা, সেখান থেকে অর্থ আত্মসাৎ এমন চ্যানেলের নাম ভাঙিয়ে নানান চাঁদাবাজিও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে নানান সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য অনেক গণমাধ্যম অঘোষিতভাবে তাকে বয়কটও করেছে।

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রতারকদের একজন। বেশ কিছু দিন আগে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় র্যা ব অভিযান করে তাকে গ্রেপ্তার করে। সেই সাহেদের সঙ্গেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের সখ্যতা ছিল এমন প্রমাণ মিলেছে।

দলের তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে কখনই ছিলেন না হেলেনা। তারপরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বিএনপি নেতা মালেকের সঙ্গে এক টকশোতে অংশ নেন তিনি। সেই টকশোতে তিনি বেশ অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন। তার অশালীন বক্তব্য নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়। যা নিয়ে বাংলা ভাষাভাষী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে নানান সমালোচনা শুরু হয়।

এরপর ভার্চুয়ালি বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব সেফু দা’র সঙ্গেও এক টকশোতে দেখা গেছে তাকে। মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কোনো ব্যক্তি এ ধরণের টকশোতে অংশ নিতে পারেন, এমন ধারণা ছিল না কারোই। সে টকশোতে বিরাট সমালোচনার জন্ম দেন হেলেনা।

কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের সঙ্গে এক টকশোতে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে। দলের সিনিয়র নেতার সঙ্গে হেলেনা ব্যবহার রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা বোট ক্লাবে অভিনেত্রী পরিমনির ঘটনায় নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টাও হাত ছাড়া করেননি বিতর্কিত এই নেত্রী। ঘটনার পর বোট ক্লাবে গিয়ে লাইভ করেন তিনি। সেখানে নানান বিতর্কিত কথাও বলেছেন হেলেনা। পাশাপাশি ভাইরাল ঘটনায় উপর ভর করে নিজেকে ভর করার সমস্ত চেষ্টাই চালিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে এক ভুঁইফোড় সংগঠনের নামে অনলাইনে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে। নিজের ছবি সম্বলিত পোষ্টার দিয়ে ভুঁইফোড় সংগঠনটির প্রচারণা ও কর্মী জোগাড়ের চেষ্টা করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে নানান ভাবে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন সরকার দলীয় সদ্য সাবেক এই নেত্রী।

আজ রাত সাড়ে আটটার দিকে তার বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশের এলিট ফোর্স-র‍্যাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বিতর্কিত এই নারী। তল্লাশিকালে হেলেনার বাসা থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ মাদক।

র‍্যাব সূত্র জানা গেছে, মাদক উদ্ধারের ঘটনায় তাকে আটক করা হয়েছে। মাদক রাখার কারণ ও এ বিষয়ে আরও তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। গত রবিবার হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উপকমিটির সদস্যসচিব ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ সই করেন। এতে বলা হয়, হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ হতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/কারই/এইচএফ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ড. ফয়জুল হককে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
অতিরিক্ত সচিব আরিফুজ্জামানসহ ৩ জনকে ওএসডি
যশোরে পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবক খুন 
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অর্ধ বার্ষিক বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা