ভাসানচর ছেড়ে কেন পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর ২০২১, ২২:২৪
অ- অ+

নোয়াখালীর হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচর দেশ-বিদেশে পরিচিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে আরও প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে স্থানান্তরের টার্গেট নিয়েছে সরকার।

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই মুসলিম নাগরিকদের জন্য সবধরনের সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে ভাসানচরে। কিন্তু তারপরও গত কয়েক মাসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা পালানোর চেষ্টাকালে আটক হয়েছে। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবারও নারী-শিশুসহ ৪৭ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। এভাবে কয়েকশ রোহিঙ্গা পালাতে গিয়ে আটক হয়েছে বিভিন্ন সময়। আর ইতিমধ্যে পালাতে সফল হয়েছে কতসংখ্যক রোহিঙ্গা সেটার কোনো পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে।

এদিকে ভাসানচর নিয়ে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মধ্যে আগামী শনিবার (৯ অক্টোবর) চুক্তি সই হবে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, শনিবার দুপুর ১২টায় সচিবালয়ে এই চুক্তি সই হবে। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের পক্ষে ইউএনএইচসিআর সই করবে। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভাসানচরকেন্দ্রিক সব ধরনের দূরত্ব দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তির আলোকে জাতিসংঘ ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘শনিবার ইউএনএইচসিআর এর সঙ্গে সরকারের এ সমঝোতা স্মারক সই হবে। ভাসানচরে ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা নেওয়া হয়েছে। আরও ৮০ হাজার নিয়ে যাব।’ এপ্রিলের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে বলে জানান সচিব।

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। এর আগেও বিভিন্ন সময় দলে দলে রোহিঙ্গারা এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। এতে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক এখন কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে।

বারবার চেষ্টা করেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারায় কক্সবাজারের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু করে সরকার। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত বছরের ৪ ডিসেম্বরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর শুরু হয়। এ পর্যন্ত ছয় দফায় ১৮ হাজার ৩৩৪ জন শরণার্থীকে স্থানান্তর করেছে সরকার।

কেন ভাসানচর ছাড়তে চাচ্ছে রোহিঙ্গারা?

সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও রোহিঙ্গারা ভাসানচর ছেড়ে কেন পালাচ্ছে সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। বুধবার এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে প্রশ্ন করলে তিনি অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তাদেরকে তো আমরা দাওয়াত দিয়ে আনিনি, তারা যেতে চাইলে যাক। এটা আমাদের কোনো সমস্যা নয়।

উন্নত সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলেও রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই প্রবণতা কেন তৈরি হলো সেটা সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের পাচার করতে একটি দালাল চক্র তৈরি হয়ে গেছে। তারা স্থানীয় মাছ ধরা নৌকার মাঝিদের সঙ্গে যোগসাজশে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন রুটে পালাতে সহায়তা করছে। বিদেশে যাওয়ার লোভে অনেকে পালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশ নেওয়ার নাম করে অনেক নারী-শিশুকে পাচার করে দিচ্ছে দালাল চক্র। বেশির ভাগই মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা জানান, ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটা অংশ আয় রোজগার কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অনেকে মা-বাবা পরিবার-পরিজন কক্সবাজারে থাকার কারণে সেখানে ফিরে যেতে চাচ্ছে। আবার একটা শ্রেণি আছে যারা দ্বীপের মধ্যে নিজেদের বন্দী বলে মনে করছে।

ওই ব্যক্তি আরও জানান, কিছু লোক আছে মা-বাবা ছাড়া এখানে এসেছে। কেউ আবার বেকার, পড়াশোনা জানা কিন্তু কোনো কাজ পাচ্ছে না। এসব কারণেই তারা হতাশ হয়ে পড়ছে এবং এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

রোহিঙ্গারা ভাসানচরে ভালো আছেন জানিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প-৩ (ভাসানচর প্রকল্প) এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যারা এসেছে তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে চার থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এখানে যে স্থাপনা এবং অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে এ ধরনের সুবিধার কথা শুনে অনেকে আসছে। আমি সম্প্রতি ট্রিপল আরসির (শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার) সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি জানিয়েছেন অনেকে আসতে চাইছে। আমার ধারণা, আমাদের যে স্থাপনা ও সুবিধাগুলো আছে সেগুলোর জন্য তারা অনেক ভালো আছে।

ভাসানচরে নবগঠিত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সেখানে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও রোহিঙ্গাদের পালানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে এ পর্যন্ত কত সংখ্যক রোহিঙ্গা পালিয়েছেন সেটি সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি। তবে ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাবার বিষয়টি কীভাবে ঠেকানো যায় সেটি নিয়ে প্রশাসন বেশ তৎপর বলে জানা গেছে।

(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ও কর্মস্থল ত্যাগ করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে এনবিআর
খিলক্ষেতে অপসারণকৃত পূজা মন্ডপটি ছিল অননুমোদিত: রেল মন্ত্রণালয়
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকা থেকে ছাত্রলীগের জিহাদ পাঠান গ্রেপ্তার
চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছে বিএনপির প্রতিনিধি দল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা