খালেদা জিয়াকে কারাগারে চরম নির্যাতনের অভিযোগ, জড়িতদের বিচারের দাবি মির্জা আব্বাসের

খালেদা জিয়াকে কারাগারে চরম নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা আব্বাস। তিনি এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।
শুক্রবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই দাবি কথা বলেন।
তিনি বলেন, কারাগারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চরম নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের যেই কক্ষে রাখা হয়েছে সেই কক্ষে ইঁদুর দৌঁড়দৌঁডি করতো, পোঁকামাকড় দৌঁড়াদৌঁড়ি করতো। কয়েকজন ডেপুটি জেলর, জেলর অন্যায়ভাবে তাকে ছাদের ওপরে একটি কক্ষে রেখেছিলো।
আজকে আমি এই অনুষ্ঠান থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেলজীবনে তার ওপরে যে অত্যাচার হয়েছে, যে নির্যাতন হয়েছে, কারা কারা এর সঙ্গে দায়ী তাদের সকলের একটা বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি এবং এর বিচার হওয়া উচিত।
বিএনপির দুর্দিনে দলের নেতৃত্ব দিয়ে খালেদা জিয়া যে ভূমিকা রেখেছেন তা তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা যারা কয়েকজন তাদের সাথে কাজ করেছি তারা দেখেছি, নানা চাপের মধ্যে দেশনেত্রীকে আমরা দেখেছি দৃঢ় মনোবল। গণতন্ত্রের প্রশ্নের তার আপোষহীন নেতৃত্ব এবং নেতা-কর্মীদের প্রতি তার যে ভালোবাসা ও স্নেহ তা তুলনাহীন।
২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতিদমন কমিশনের মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। পুরোনো কারাগারে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বিনা চিকিৎসায় বন্দী রাখার ফলে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুপারিশ করলেও বার বার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদন তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার নাকচ করে দেয়। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে, ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বেগম খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। এ সময় গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় বন্দী রাখা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়া চতুর্থ। বাবা এস্কান্দর মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। পৈত্রিক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখেন গৃহবধূ খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে তিন দফা বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপি এই মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এই মিলাদ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাজধানীতে বিভিন্ন মসজিদে ও এতিমখানা-মাদ্রাসায় বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দলের চেয়ারপারসনের আরোগ্য কামনায় এই মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভীর সঞ্চালনায় নয়া পল্টনের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানও বক্তব্য রাখেন।
এই মিলাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নিরব, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহানরগর দক্ষিন বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়নসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/জেবি)

মন্তব্য করুন