১২ জেলায় বন্যার চোখ রাঙানি, খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তার ৪৪টি গেট

টানা বৃষ্টি ও ওপার থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা, পদ্মা ও যমুনার পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি বা ওপর দিয়ে বইছে। এর ফলে দেশের ১২টি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়েকটি জেলায় এরই মধ্যে ঘরবাড়ি ও চরাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী
রাজশাহী মহানগরীতে বিশেষ করে পদ্মাপাড়ের অংশে নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়েছে। অনেক বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে পানির ওপর জীবনযাপন করছে বাসিন্দারা। রায়পাড়া এলাকায় বাতেনের বিল উপচে আশপাশের বস্তি তলিয়েছে।
নদীর পানির সঙ্গে আছে বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিল ভরে গেলে পানি উপচে উঠে ঘরে।
এড়িকে বাঘায় পদ্মার অন্তত এক ডজন চরে পানিবন্দি মানুষ। অন্তত ১৬ হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে।
বগুড়া
বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দিতে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী তিন দিনের মধ্যে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল পদ্মায় ১০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। নদী তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে অধিকাংশ রাস্তাঘাট।
ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বুধবার ১৮টি এবং গতকাল আরও তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বন্যায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
নাটোর
নাটোরের লালপুরে পদ্মার পানি বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে ১৮টি গ্রাম। তলিয়ে গেছে ৫ শতাধিক বাড়ি। চরাঞ্চলের প্রায় ৫১৮ হেক্টর ফসল ডুবে গেছে।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিফাত করিম জানান, আগামী দুই দিন পদ্মার পানি বাড়তে থাকতে পারে। বর্তমানে লালপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নীলফামারী
ভারি বর্ষণ, ওপারের পাহাড়ি ঢল ও গজলডোবা থেকে পানি ছাড়ার জেরে বাংলাদেশ তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, তিস্তা অববাহিকা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
রংপুর
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মিটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, পানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবারের বন্যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলোকে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা, বহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে। দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের কৃষি জমি।
বন্যা মোকাবিলায় ছয় উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে জেলা প্রশাসন।
ভোলা
ভোলায় পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে ইলিশার লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট। গতকাল বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো ঘাট এলাকার অ্যাপ্রোচ সড়ক জোয়ারের পানিতে ৮ ঘণ্টা ডুবে থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ প্রায় ২১ জেলার যাত্রীদের লঞ্চে ওঠা-নামায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এদিকে সাগর বৈরী ও লঘুচাপের কারণে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। এতে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-মনপুরা, বেতুয়া-ঢাকাসহ জেলার ১০ রুটের নৌ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-ঢাকা রুটের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন