দাম বাড়ায় ভৈরবের কয়লার বাজার মন্দা

দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়লা বাজার ক্রেতাশূন্য। বেচাকেনা কম, কমেছে কয়লার আমদানিও। দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাসহ বিভিন্ন জায়গার ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহৃত হয়। এসব কয়লা ভৈরব কয়লা বাজার থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সারাদেশের সাথে ভৈরবের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এই বাজার থেকে কয়লা কিনতে আসেন ইটভাটার মালিকরা।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কয়লা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল দেড়শ। এবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও বেচাকেনা করছে ১০-১৫টি। ভৈরব কয়লা ঘাটে ১৫-২০ হাজার শ্রমিক জড়িত ছিল কয়লা ব্যবসার সাথে। এখন অধিকাংশ মালিক কর্মচারী শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন।
আগে কয়লা ব্যবসায়ীরা ইটভাটা মালিকদের বাকিতে কয়লা বিক্রি করতেন, কিন্ত দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নগদ টাকা ছাড়া কয়লা বিক্রি করছেন না তারা। কারণ কয়লা ব্যবসায়ীরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে নগদ টাকা ছাড়া কয়লা আনতে পারছেন না।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভৈরব ফেরিঘাট কয়লা বাজারে প্রতি টন কয়লা বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকায়। অথচ গত বছর এই মৌসুমে কয়লার দাম টন প্রতি ছিল ৭-৮ হাজার টাকা। গতবছর মৌসুমের শেষ দিকে কয়লা বিক্রি হয় প্রতি টন ১০-১২ হাজার টাকায়।
এবার মৌসুমের শুরুতে গত দুই সপ্তাহ আগে প্রতি টন কয়লার দাম ছিল ১৫-১৬ হাজার টাকা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি দাম বেড়ে ৪-৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ইটভাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় এখনো অধিকাংশ ইটভাটায় উৎপাদন শুরু করেনি। সাধারণত প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৫ মাস ইট তৈরির মৌসুম থাকে।
এসময়ে প্রতিটি ইটভাটায় অর্ধ লাখ থেকে এক কোটি ইট তৈরি করা হয়। ভৈরব কয়লা বাজারের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, কয়লা উৎপাদন দেশ ইন্দোনিশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশ কয়লা আমদানি করে থাকে। সেসব দেশে কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।
অন্য বছরে এ সময়ে কয়লা বাজার বেচাকেনায় খুব ব্যস্ত সময় পার করত, কিন্তু দাম বাড়ায় কয়লা বাজারে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। ফলে ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কা দেখছেন তারা।
ভৈরব কয়লা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মজনু সওদাগর বলেন, কয়লার দাম দ্বিগুন বৃদ্ধিতে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। ঘাটে কয়লা আমদানি কম হচ্ছে, বেচাকেনাও কম। প্রতি বছর ভৈরবে লাখ লাখ টন কয়লা আমদানি হতো।
এই কয়লা দেশের ২০-২৫টি জেলার ইটভাটায় সরবরাহ করতাম আমরা। প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা বাকি দিতাম। এবার কয়লা বিক্রি করতে না পারায় বাকি টাকা উঠে আসবে না। এতে ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাবে বলে তিনি জানান।
ভৈরবের এসএস ব্রিক প্রতিষ্ঠানের মালিক আরএ মারুকী শাহিন জানান, কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ইটের দাম প্রতি হাজারে ৩/৪ হাজার টাকা বৃদ্ধি পাবে। এ দামে ইট বিক্রি করা যাবে না, চিন্তা করে আমার ইটভাটা এবার চালু করিনি।
তবে আশায় আছি, যদি ভারতীয় কয়লার আমদানি শুরু হয়, তাহলে বাজারে দাম কিছুটা কমতে পারে।
(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/এলএ/এসএ)

মন্তব্য করুন