ঐতিহ্য হারাচ্ছে দাগনভূঞা প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
  প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৩০
অ- অ+

ঐতিহাসিক বাড়িটি এরই মধ্যে জরাজীর্ণ হয়ে ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। ধসে পড়েছে কোনো কোনো ভবনের দেয়াল। কোনোটিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। জরাজীর্ণ এসব ভবন যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

জমিদারি প্রথার স্মৃতিচিহ্ন গায়ে মেখে এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার প্রতাপপুর জমিদারবাড়ি। তবে সংস্কার না হওয়ায় বাড়িটি ঐতিহ্য হারাচ্ছে। খুব দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না নিলে জমিদারি প্রথার মতোই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে বাড়িটি।

১২২৮ বঙ্গাব্দের ১৩ ফাল্গুন রামনাথ কৃষ্ণ সাহা ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামে এ জমিদারবাড়ি নির্মাণ করেন। স্থানীয়দের কাছে এটি বড়বাড়ি নামে পরিচিতি। প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গার ওপর নির্মিত বাড়িটিতে রয়েছে পাঁচটি দ্বিতল ভবন। নির্মাণের সময় ১২টি পুকুর খনন করা হয়েছিল। তবে এখন বেশির ভাগই বিলীন হয়ে গেছে।

১৯৫০ সালে জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পর এ জমিদার পরিবারটির শৌর্য-বীর্য কমতে থাকে। তারপরও দীর্ঘ ৪৮ বছর পর্যন্ত তারা এ বাড়িতে থেকেই নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পরে ধীরে ধীরে তারা ভারত ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যান।

তবে আগের ধারাবাহিকতায় এখনো প্রতি বছর ওই বাড়িতে দুই দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় জমিদারের বংশধররা আসেন। উৎসবে চলে জমিদারবাড়ির স্মৃতিচারণ, পূজা উৎসব, পুঁথি পাঠ ও গল্প পাঠের আসর।

এলাকাবাসী জানান, জমিদারবাড়িটির এমন ভগ্নদশা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থী আসছে প্রতিদিনই। যাতায়াতব্যবস্থা ভালো হওয়ায় সহজেই এখানে আসা যায়। তবে জমিদারবাড়িটি পর্যটকবান্ধব নয় বলে অভিযোগ করেছেন তারা। তারা জানান, ওই এলাকার নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো নয়। রয়েছে শৌচাগারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাব। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার আগেই এ বাড়ি ছাড়তে হয় দর্শনার্থীদের। দ্রুত বাড়িটি সংস্কার করে পর্যটনবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন তারা।

পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রায়হান বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে দাগনভূঞার থানার টহল পুলিশ মাঝে মাঝে আসেন। বেশ কয়েকবার ইউপি সদস্য ও স্থানীয়দের উদ্যোগে এটি পরিস্কার করা হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির বিভিন্ন ভবনের দেয়াল ধসে গেছে। ইটের স্তর ভেদ করে কোথাও গজিয়েছে পরজীবী গাছ। কোনো কোনো ভবনের উপরিভাগ ক্ষয়ে গেছে।

নোয়াখালীর রামপুর থেকে আসা আবদুল আজিজ বলেন, উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতাপপুর জমিদারবাড়ি সম্পর্কে জানতে পেরে এটি দেখার শখ জাগে। তাই বন্ধুরা মিলে এখানে এসেছিলাম। খুব ভালোই লাগছে। এখানকার সৌন্দর্য-ঐতিহ্য ও যাতায়াত ব্যবস্থা আমাদের খুবই মুগ্ধ করেছে। তবে এখানে শৌচাগার ও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই।

দাগনভূঞা ইয়ুথ সোসাইটির গোল্ডেন মেম্বার গোলাম সরওয়ার জানান, সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎহীন বাড়িটিকে ভুতুড়ে বাড়ি মনে হয়। দীর্ঘদিন সংস্কার ও পরিষ্কার না করায় বাড়িটির ভবনগুলোসহ চারপাশে আগাছা জন্মেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া জানান, বাড়িটি এখনো জমিদারদের ওয়ারিশদের মালিকানায়। ফলে সরকারিভাবে এখানে সংস্কার বা অন্য কিছু করা যাচ্ছে না। এর আগে জমিদারদের নাতিদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান জানান, প্রতাপপুর জমিদারবাড়ির বিষয়ে আমি জেনেছি। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে বাড়িটির ঐতিহ্য রক্ষা ও পর্যটকবান্ধব করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/কেএম/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার এখনো পাই নাই: রমজান আলী
শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আবারও সক্রিয় অপশক্তি: সপু
বগি লাইনচ্যুত, খুলনার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
স্মরণকালের ভালো নির্বাচন দিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার: ফাওজুল কবির খান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা