মহেশখালীর পানের দামে ধস

বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এখানকার অধিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পেশা পান চাষ। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এর ভূমি পান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। মহেশখালীর পানের বিশেষত্ব হলো তার মিষ্টি স্বাদ, যার কারণে এই পান সারাদেশে বিখ্যাত।
এক সময় মহেশখালীর মিষ্টি পান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। এখানকার পানের সুনাম দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে রয়েছে। কারও কারও মতে আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু দেশও বাদ যায় না। সমগ্র বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ মিষ্টি পান মহেশখালী দ্বীপে উৎপাদিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে উৎপাদিত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পুরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজালী, মহানলী, চেরফুলী, ভাবনা, সন্তোষী, জাইলো, ভাওলা, ঝালি প্রভৃতি জাতের মধ্যে মহেশখালীর মিষ্টি পান উল্লেখযোগ্য।
মহেশখালীর পানের বরজ সাধারণত দুই ধরনের পাহাড়ি বরজ এবং বিল বরজ। উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের ঢালু ও সমতল কৃষি জমিতে যুগ যুগ ধরে পান চাষ করে আসছে স্থানীয় পানচাষিরা। জমির শ্রেণি অনুসারে পাহাড়ি এলাকার ভূমিতে পান চাষ দুই/তিন বছর স্থায়ী হলেও সমতল জমিতে পান চাষ হয় মাত্র ছয় মাস। সমতল জমিতে সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়ে মে/জুনে শেষ হয়।
অপরদিকে পাহাড়ি ঢালু জমিতে পান চাষ হয় বছরের যে কোন সময়। এমনটাই জানান স্থানীয় পানচাষিরা। পান চাষের উপকরণ হলো: শন, উল, বাঁশ, কীটনাশক, সার, খৈল ইত্যাদি।
উপজেলার চালিয়াতলি পান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বরজ থেকে সদ্য ভেঙে আনা থরেথরে পান নিয়ে বসে রয়েছেন অনেক চাষি।
কক্সবাজারের চকরিয়া, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, পটিয়া, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যপারীরা এসব বাজার থেকে পান সংগ্রহ করে থাকে। তারপর ট্রাকবোঝাই করে পাঠিয়ে দেয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এসব পাইকারি বাজারে পানের বড় পান প্রতি বিরা বিক্রি হতো ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে।
মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চিকনীপাড়ার পান চাষি আবদুল মালেক ও ছৈয়দ নূর এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পানের বর্তমান দর আগের তুলনায় পানির মতো। অর্থাৎ যে বড় পান বিক্রি হতো ৪০০ থেকে শুরু করে ৬৫০ টাকায় আর মাঝারি পান বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে। ঠিক সেই পান বর্তমান বিক্রি হচ্ছে বড় পান প্রতি বিরা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা ও মাঝারি পান ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
তারা জানান, পানের বরজ তৈরি করতে যে টাকা খরচ হয়েছিল সেই টাকা উঠে আসা অসম্ভব। বর্তমান দরে পান বিক্রি করে মজুরি দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। ডেইলি একজনের মজুরি খরচ ৭০০ টাকা। এভাবেই যদি চলতে থাকে, তাহলে পানচাষিরা খুবই লোকসানে পড়বে।
তারা আরও জানান, দেশের বাইরে থেকেও বাংলাদেশে পান আমদানি হচ্ছে এখন। যার কারণে দেশের পানের দর অনেক কমে গেছে।
পানচাষিরা মনে হাজারো কষ্ঠ নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানান, দেশের সম্পদ দেশেই বিক্রি করলে আর বিদেশ থেকে পান আমদানি বন্ধ করলে; দেশের পান চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাবে।
(ঢাকাটাইমস/৮জানুয়ারি/এলএ)

মন্তব্য করুন