ডিসি অফিসের সামনে মানববন্ধন
হলুদ সাংবাদিক আয়ান শর্মার গ্রেপ্তার দাবি সনাতনী সমাজের

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার আসামী বিতর্কিত সাংবাদিক আয়ান শর্মার গ্রেপ্তার দাবি করেছে সনাতনী সমাজ। একই সঙ্গে ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিন’ ও ‘আলোকিত চট্টগ্রাম’ পত্রিকা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়।
মিথ্যা অপপ্রচার, জন্মাষ্টমী নিয়ে সনাতন সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা ও বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা, চাঁদাবাজ খ্যাত নিউজ পোর্টাল ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিন’র নিবন্ধন বাতিল এবং আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলার আসামী আয়ান শর্মাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সনাতনী সমাজ ও বীর চট্টলাবাসীর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন শেষে একই দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন সনাতনী সমাজের নেতারা।
জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের আজীবন সদস্য দোলন দেবের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাপ্পী দে, সুব্র্রত আইচ, সৌরভ প্রিয় পাল, মিঠুন বৈষ্ণব, ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় চক্রবর্তী মানিক, প্রশান্ত পা-ে, বিপ্লব চৌধুরী বিলু, অপু চৌধুরী আকাশ, মিটন রবি দাশ, রুবেল পাল, সৈকত বোস, প্রভাষ দাশ, সাগর দাশ, সুকান্ত তালুকদার জুয়েল, রয়েল কুমার পাল স্মৃতি দে প্রিয়া, পান্না দাস, ডলি দাস, অপু দাস, অর্চনা দাস, মিনা বিশ্বাস প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে দোলন দেব বলেন, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট আদালত চত্বরে ফেসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিল আয়ান শর্মা। তাই আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যায় ইন্দনদাতা এবং সরাসরি অংশগ্রহণকারী হিসাবে মামলার আসামী করা হয়েছে। আয়ান শর্মা কেবল চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশে একজন চাঁদাবাজ হিসাবে পরিচিত। একজন হত্যা মামলার আসামী কুখ্যাত চাঁদাবাজ কিভাবে এখনো জন্মাষ্টমী অফিসে যাতায়াত করে সেটা আমাদের বুঝে আসে না। ব্লেকমেইলার চাঁদাবাজ আয়ান শর্মাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ভারতে পালিয়ে থাকা ফেসিস্ট সরকারের নেতাদের সঙ্গে এখনো আয়ান শর্মা রাতে যোগাযোগ করেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভিডিও কলে জন্মাষ্টমী পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ কিভাবে দখলে রাখতে হবে তার নীল নকশা আঁকে। সাংবাদিক নামের কলঙ্ক আয়ান শর্মাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। সে সাংবাদিকতার মহান পেশাকে কলঙ্কিত ও অপমানিত করেছে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রলল নেতা সৌরভ প্রিয় পাল। সনাতনী সমাজ ও বীর চট্টলাবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সনাতনী সমাজের ন্যায্য দাবির সঙ্গে আমি একমত। ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিন’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি ও দলবাজি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা থেকে সনাতনী নেতা বনে যাওয়া চন্দন তালুকদার বা আয়ান শর্মার কাছে সনাতনী সমাজ জিম্মি নয়। আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়ান শর্মার গ্রেপ্তার ও ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিন’ পত্রিকার নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানান তিনি।
কে এই আয়ান শর্মা?
অসহায় মানুষের সাহায্যে কনসার্টের নামে ৩ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছিল ২০০৩ সালে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে পাহাড়তলী থানার এক পুলিশ সদস্যের কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আছে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মানুষকে হয়রানি, ধর্মীয় দাঙ্গার উসকানি, মাদক ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ।
সাংবাদিকতার মহান পেশার নাম বিক্রি করে এখনো এসব অপকর্মে সক্রিয় কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী আয়ান শর্মা। ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মুচলেখা দিয়েছিলেন; অঙ্গিকার করেছিলো সাংবাদিকতার মহান পেশার সাথে তার কলঙ্কিত নাম কখনো জড়াবে না। কিন্তু এসব ঘটনার রেশ না কাটতেই জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। ২০০৮ সালে ঢাকার একটি আদালতে মামলা করেন এক নারী। বিয়ের জাল কাগজপত্র তৈরি করে স্ত্রী দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পরে অবশ্য ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন।
অভিযোগ ওঠেছে, সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করে অপকর্মে জড়িতদের নিয়ে এলাকায় এলাকায় গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। তার এসব অপকর্মের ডাল পালা মেলে বেড়েছে শাখা প্রশাখা, জিম্মি করে নামে বেনামে চলে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা। সংবাদ প্রকাশের নামে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের চরিত্র হনন চলছে হরহামেশা। তবে এসব সংবাদের তীর কেবল বিএনপি-জামায়াত ও বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের দিকে।
পুলিশের কাছে চাঁদা দাবি :
২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পাহাড়তলী থানার তৎকালীন একজন এএসআই’র কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা আয়ান শর্মা। ওই এএসআই সাংবাদিক ইউনিয়নে অভিযোগ দেন। ইউনিয়নের তৎকালীন নেতারা প্রেসকাব ভবনের চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে আয়ান শর্মা ও তার আরেক সহযোগীকে হাজির করেন। সেখানে অপরাধ শিকার করে এ ধরনের কাজে জড়াবে না বলে মুচলেখা দিয়ে ছাড়া পায়। ওই ঘটনার পর একাধিক স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে তার ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ হয়।
ডিবির তদন্তে চাঁদাবাজ আয়ান শর্মা:
প্রেসক্লাবে আটকে অঙ্গীকারনামা নেওয়ার জেরে সাংবাদিক ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ ও কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ দেয় আয়ান। ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পুলিশ কমিশনার সেটি তদন্তের নির্দেশ দেন। একই বছরের ১৯ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবির তৎকালীন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার একেএম মোশাররফ হোসেন মিয়াজী। তদন্তে আয়ান শর্মাকে সাংবাদিক নামধারী চাঁদাবাজ হিসাবে চিহ্নিত করেন।
(ঢাকাটাইমস/১১ আগস্ট/এসএস)

মন্তব্য করুন