কেন্দ্রে ডিজিটাল ডিভাইসে প্রশ্নফাঁস, বাইরে থেকে সমাধান

সোশ্যাল অ্যাপস ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁস করে একটি চক্র। পরীক্ষার হলের বাইরে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্ট ওয়াচ, ইয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহের কাজ করে চক্রটি। এই চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
শনিবার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
এর আগে শুক্রবার অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কাকরাইল এলাকা থেকে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও প্রশ্নের উত্তর সরবরাহকারী চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নোমান সিদ্দিকী, মাহমুদুল হাসান আজাদ, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, মাহবুবা নাসরীন রুপা, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছয়টি ইয়ার ডিভাইস, ছয়টি মাস্টারকার্ড মোবাইল সিম হোন্ডার, ব্যাংকের পাঁচটি চেক, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সাতটি, স্মার্টফোন ১০টি, বাটন মোবাইল ছয়টি, প্রবেশপত্র ১৮টি ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র তিন সেট জব্দ করা হয়।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য শুক্রবার ৭০ নাম্বারের পরীক্ষা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য ছিল আগেই বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়া কিছু ব্যক্তি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল অ্যাপস এবং ব্যক্তি পরিবর্তন করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, উত্তর বা সমাধান সরবরাহসহ অসদুপায় অবলম্বন করতে পারে।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ কাকরাইলে অবস্থিত নিউ শাহিন হোটেল থেকে অসাধু উপায় অবলম্বনকারী দুই পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে কাফরুল থানার সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ডিভাইস, প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্রের খসড়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি পুলিশের অপর দল বিজিপ্রেস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থী এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে নগদ টাকা, ডিজিটাল ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার করে। পরবর্তী সময়ে তার দেওয়া তথ্যমতে অপর আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ, নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী এর আগেও ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসসংক্রান্ত মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। গ্রেপ্তারকৃতরা অন্যান্যদের যোগসাজশে বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপস ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করেন। হলের বাইরে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্ট ওয়াচ, ইয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করে থাকেন। এর আগেও গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন, হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ সিজিএ অফিসের সরকারি কর্মকর্তা এবং মাহবুবা নাসরীন রুপা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এএ/জেবি)

মন্তব্য করুন