পুলিশ ছিল বলে মায়ের বুকে ফিরল অপহৃত শিশুটি

দিনভর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকার সড়কে যানবাহন সামলে রাতে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আবুল বাশার। সহকর্মী তারেকও সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। হঠাৎ পার্কের পাশে সাইকেল নিয়ে দাঁড়ানো দশ বছর বয়সী একটি শিশুর দিকে চোখ আটকে যায় পুলিশ সদস্য বাশারের। কাছে গিয়ে পার্কে থাকা ছিন্নমূল কিশোরদের ভেতর থেকে শিশুটিকে নিয়ে এসে যে খবর জানলেন তাতে অনেকটা ভড়কে যান তিনি। জানতে পারেন সোমবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের ইয়াজউদ্দিন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেটিকে কে বা কারা অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে এসেছে।
খবরটি সহকর্মী তারেকের সঙ্গে শেয়ার করার পর শুরু হয় কীভাবে শিশুটিকে প্রকৃত অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া যায়। নানা চেষ্টায় এই দুই পুলিশ সদস্য সফল হন। সোমবার রাত সাড়ে দশটার দিকে ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে ছেলেটিকে মায়ের হাতে তুলে দিয়ে স্বস্তি নিয়ে বাসায় ফেরেন তারা।
সোমবার রাতের ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলে জানা যায়, অপহৃত ছেলেটির বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। ইতালি প্রবাসী বাবার একমাত্র ছেলেটি মুন্সীগঞ্জের সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন স্কুলে পড়াশোনা করে। পরিবারের সদস্যরা অবশ্য ছেলটির নাম বলতে রাজি হননি।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যদিনের মতো সোমবার দুপুরে জোহরের নামাজ পড়তে বাসার কাছের মসজিদে যায় শিশুটি। সঙ্গে নিজের সাইকেলটি নিয়ে বের হয় সে। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলো না পরিবার। পরে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কোনো হদিস না পেয়ে গোটা পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে। এর মধ্যে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে।
অবশ্য ততক্ষণে তাদের ছেলেটি হারালেও নিরাপদ আশ্রয় পায় পুলিশের কাছে। কিন্তু সে শুধু নিজের নাম, বাবার নাম আর নিজের স্কুলের নাম ছাড়া কিছুই বলতে না পারায় চিন্তায় পড়ে পুলিশ। পরে ছেলেটিকে কাছে রেখে পুলিশ সদস্যরা মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় পরিচিত একজনকে ফোনে বিষয়টি জানান। ছেলেটির পরিবার এলাকায় পরিচিত হওয়ায় সহজেই খোঁজ মেলে।
পরে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত ঢাকায় চলে আসেন ছেলেটির মাসহ অন্য স্বজনরা। ভিক্টোরিয়া পার্কে যখন তারা পৌঁছায় তখন এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির তৈরি হয়। সন্তানকে নিরাপদে ফিরে পেয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন তারা।
পুলিশ সদস্য আবুল বাশার ঢাকাটাইমসকে বলেন, রাত আটটার দিকে বাসায় যাবো ঠিক তখন চোখে পড়লো একটা সাইকেলসহ ছেলেটিকে পার্কের ভবঘুরে কিছু ছেলেপান ঘিরে রাখছে। পার্কের পাশে ছেলেটিকে ঘিরে রাখছে দেখে টেনশন শুরু হয়ে যায়। ছেলেটি কোনো সমস্যায় পড়েছে ভেবে ওকে নিয়ে নিজের কাছে বসিয়ে রাখি।
তিনি বলেন, কথা বলে জানতে পারি ওর বাড়ি মুন্সীগঞ্জ। ইয়াজউদ্দিন স্কুলে পড়ে। বাবা-মায়ের নাম ছাড়া আর তেমন কিছু বলতে পারে না। পরে সহকর্মী তারেকের সঙ্গে আলাপ করলে তার পরিচিত একজনের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ থানায় খবর পৌঁছাই। একপর্যায়ে ছেলটির অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়।
পুলিশ জানায়, ছেলেটিকে হঠাৎ করে কেউ একজন মুখে কিছু গুঁজে দেয়ার পর সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে কীভাবে ঢাকায় এসেছে তাও বলতে পারেনি।
আরেক পুলিশ সদস্য তারেক ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমারও সন্তান আছে৷ যখন দেখেছি বাচ্চাটা বিপদে পড়েছে তখন ওর ফয়সালা না করে বাসায় ফেরার কথা ভাবিনি। যখন বাচ্চাকে তার মা পেয়ে আনন্দে কান্না করে ফেলেছে তখন সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। জীবনে এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু নেই।
অপহৃত সন্তানকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত মা পুলিশ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। অন্য স্বজনরাও তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রশংসা করেন।
(ঢাকাটাইমস/২৫ জানুয়ারি/বিইউ/ইএস)
সংবাদটি শেয়ার করুন
রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
রাজধানী এর সর্বশেষ

আগামী বছর থেকে শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলে জলাবদ্ধতা হবে না: মেয়র তাপস

সেই মেহমানখানায় যোগ হলো পড়াশোনা

ই-ক্যাব নির্বাচনে ইসমাইল হুসাইনের মনোনয়নপত্র জমা

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে আটক ৬২

বরখাস্ত হয়ে, চাকরি ছেড়ে ওয়াসা কর্মীদের আন্দোলন

এডিস লার্ভা: ডিএনসিসির জরিমানা আদায় প্রায় ৮ লাখ টাকা

রাজধানীতে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই, কারণ কী?

রাইড শেয়ারে ঘুচল বেকারত্ব

এডিস নিয়ন্ত্রণে তৎপরতার আহ্বান মেয়র তাপসের
