সেন্টমার্টিনে জাহাজ ও পর্যটক সীমিত করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পর্যটন শিল্প

কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করলে পর্যটনশিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানিয়েছেন 'সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ' (স্কোয়াব)।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার শহরে লাবনী পয়েন্টস্থ হোটেল মিশুকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন 'স্কোয়াব' সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড লিমিটেডের প্রতিনিধি নুর মোহাম্মদ সিদ্দিকী ও টুয়াকের প্রতিনিধি এস এ কাজল।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল সীমিত করার চিন্তা করছে বিআইডব্লিউটিএ। মাত্র দুইটি জাহাজ চললে কয়েক হাজার পর্যটক বঞ্চিত হবে, যার প্রভাব পড়বে পুরো পর্যটন শিল্পে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ব্যবসা। জাহাজ চলাচল বন্ধ হলেও বিকল্প পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের নৌকায় চড়ে সেন্টমার্টিন যাবে পর্যটকেরা। সুতরাং যে উদ্দেশে জাহাজ চলাচল সীমিত করা হচ্ছে তার কোন সুফল আসবে না। বরং ঝুঁকি বাড়বে পর্যটন খাতে। সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা দরকার বলে মনে করেন স্কোয়াব এর প্রতিনিধিরা।
লিখিত বক্তব্যে স্কোয়াব নেতা বাহাদুর বলেন, আমরা জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ ও হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ ১ যুগের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
বিশেষ করে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সুরক্ষায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব থেকে দ্বীপকে রক্ষার জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছি। ২ বছর আগে করোনা মহামারির শুরু থেকে এই পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাহাজে পর্যটক ওঠানামা এবং পারাপার করে আসছি। সেন্টমার্টিনে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর থাকায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। কারো করোনা শনাক্তও হয়নি। এ নিয়ে প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। সেন্টমার্টিনকে করোনামুক্ত রাখতে জাহাজ মালিক-কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যেহেতু জাহাজে চড়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করে থাকেন পর্যটকেরা।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের আবেদন ও ব্যাপ্তি বাড়বে বহুগুণে। কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল, শুঁটকি, লবণ, চিংড়িসহ নানা ব্যবসার পরিধি বাড়বে। ৬-৭ লাখ বেকার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে। এসব ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম প্রাণশক্তি হচ্ছে সেন্টমার্টিন। কারণ, সেন্টমার্টিন ঘিরেই এক তৃতীয়াংশ পর্যটক আগমন ঘটে কক্সবাজারে। কিন্তু সেন্টমার্টিনে যদি পর্যটক সীমিত করা হয়, তাহলে কক্সবাজারে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি হোটেল মোটেল ও ব্যবসা এবং পর্যটন খাতে লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগে ধস নামবে।
সেন্টমার্টিন সুরক্ষায় আপনার কার্যালয় থেকে ১৩ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবৈধভাবে নির্মিত হোটেলসহ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে দ্বীপের ঝুঁকি যেন না বাড়ে সে ব্যাপারে হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। দ্বীপের যানবাহন চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মা কচ্ছপের ডিম পাড়ার পরিবেশ সৃষ্টিসহ জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে দ্বীপের চতুর্দিকে মাছ ধরার জালফেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ছেরাদিয়া দ্বীপেও পর্যটক যাতায়াত ও নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টেকনাফ থেকে ১০টি জাহাজে দৈনিক ৩ হাজার পর্যটক আসা যাওয়া করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও জাহাজ ও দ্বীপে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। যে কারণে এখনো সবকিছু ঠিকঠাক আছে। সেন্টমার্টিন এখনো করোনামুক্ত।
ঠিক এই মুহূর্তে জাহাজ চলাচল সীমিত করার চিন্তা করছে বিআইডব্লিউটিএ। মাত্র দুইটি জাহাজ চললে কয়েক হাজার পর্যটক বঞ্চিত হবে, যার প্রভাব পড়বে পুরো পর্যটন শিল্পে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ব্যবসা। জাহাজ চলাচল বন্ধ হলেও বিকল্প পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের নৌকায় চড়ে সেন্টমার্টিন যাবে পর্যটকেরা। সুতরাং যে উদ্দেশ্যে জাহাজ চলাচল সীমিত করা হচ্ছে তার কোন সুফল আসবে না। বরং ঝুঁকি বাড়বে পর্যটন খাতে।
আপনার কার্যালয় থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনার সাথে আমরা একমত এবং এসব বাস্তবায়নে মাঠে আছি। কিন্তু নানা অজুহাতে জাহাজ চলাচল এবং পর্যটক সীমিত করা হলে হোটেল ব্যবসাসহ পর্যটনখাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমরা জানতে পেরেছি, সেন্টমার্টিনে অদূর ভবিষ্যতে দুইটি জাহাজ চলবে এবং ১২৫০ জন পর্যটক যাতায়াতে সুযোগ পাবে। স্বল্প সংখ্যক পর্যটক ব্যবস্থাপনায় দ্বীপের ১৮৮ টি আবাসিক হোটেলে নতুন সংকট সৃষ্টি হবে।
পর্যটকের যাতায়াত এবং ব্যবসা ঘিরে সেন্টমার্টিনের অন্তত ৫ হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। পর্যটক সীমিত করলে তাদের জীবিকাও হুমকিতে পড়বে।
এ ক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশ হলো, বর্তমান চলাচলরত ১০টি জাহাজে করে সর্বোচ্চ ৩০০০ পর্যটক যাতায়াত করবে। দ্বীপের আবাসিক হোটেলগুলোতে কক্ষ আছে ১৪০০টি। প্রতি কক্ষে একজন করে দৈনিক ১৪০০ পর্যটক সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপন করুক। বাকি ১৬০০ পর্যটক গন্তব্যে ফিরে আসুক। বিগত ১০ বছর ধরে এই প্রক্রিয়ায় পর্যটক যাতায়াত করে আসছে। সরকারি নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ১০টি জাহাজে করে দৈনিক ৩০০০ পর্যটক পারাপার করতে চাই। এক্ষেত্রে আপনার সদয় দৃষ্টি ও নির্দেশনা কামনা করছি।
(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/এআর)
সংবাদটি শেয়ার করুন
অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
অর্থনীতি এর সর্বশেষ

ঘাটতি মেটাতে ২ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার

ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেবে সরকার

দাম কমবে ক্যানসার ওষুধের

সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর আশা ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই

স্বর্ণ আনার শুল্ক দ্বিগুণ, কমানো হয়েছে পরিমাণ

প্রথমবারের মতো আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ল সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ১০ মেগা প্রকল্পে

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা, প্রশিক্ষণ পাবে ৮০ হাজার তরুণ-তরুণী
