শিক্ষায় ক্ষতি অনেক, চ্যালেঞ্জও বহুমাত্রিক

মোয়াজ্জেম হোসেন ও বীর সাহাবী, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২২, ০৭:৪৯ | প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২২, ০৭:৪২
ফাইল ছবি

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েক ধাপে খুলে দেওয়ার পর আজ থেকে পুরোদমে ক্লাসে ফিরছে স্কুল-কলেজ। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এখন থেকে সব ক্লাস নেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের সশরীর উপস্থিতিতে।

সরাসরি ক্লাসে ফিরলেও সব স্তরের শিক্ষার্থীরা একটা বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের ওপর পড়েছে স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার ‘অত্যন্ত গুরুতর প্রভাব’।

দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকায় পুরো সিলেবাস পড়তে না পারার ঘাটতি নিয়ে ওপরের ক্লাসে উঠে আসা, শ্রেণিকক্ষে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিয়ে পড়াশোনা করতে না পারায় দক্ষতা কমে আসার শঙ্কা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ না হওয়ার মতো ঝুঁকি তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

গতকাল শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ‘করোনার কারণে অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষার অগ্রগতি উন্নয়ন এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিজ্ঞানভিত্তিক মানসম্পন্ন পাঠদানে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সংযোজিত করে পাঠদানের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এমন বাস্তবতায় আজ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে ক্লাসে ফিরছে। এরই মধ্যে প্রায় সব শিক্ষার্থীও চলে এসেছে কোভিডপ্রতিরোধী টিকার আওতায়। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল-কলেজগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতেও জোর দেওয়া হচ্ছে।

স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাসে পাঠদানের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মাধ্যমিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান এবং সিলেবাসের আলোকে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো চাপ নয় বরং তাদের পাঠ মনোযোগের সঙ্গে এবং আনন্দদায়ক করতে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। তবে সরাসরি পাঠদানে দীর্ঘ শিক্ষা বিরতির কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে এখনো প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক।

ইস্কাটন গার্ডেন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের স্কুলে দুই শিফটে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করে। কোভিডের কারণে তাদের অনেকেই পিছিয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যথাসাধ্য তাদের পর্যাপ্ত গাইড করার।’

করোনার কারণে শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এই প্রধান শিক্ষক। দুলাল চন্দ্র বলেন, ‘এর জন্য আমাদের অতিরিক্ত শিক্ষকসহ অতিরিক্ত আরো অনেক কিছুই প্রয়োজন যা আমরা পাচ্ছি না। তাই বলা যায় এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কোনো সহজ পথ নেই।’

শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সিদ্ধান্তগুলো শিক্ষক পর্যায় থেকে নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন ইস্পাহানি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক জেরিন হক। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অনেক সময় ওপর থেকে যেসব নিয়ম করা হয়, সেগুলো প্রায় সময়ই প্রাথমিক পর্যায় থেকে কার্যকর হয় না। বাস্তবিক অর্থে শিক্ষকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিকভাবে থাকেন। সমস্যাগুলো খুব কাছ থেকে দেখেন, জানেন। তাই শিক্ষকরা সমাধানটাও খুব ভালো করে জানেন।’

জেরিন হক আরও বলেন, ‘আমি মনে করি শিক্ষক পর্যায় থেকে মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আরো বেশ ফলপ্রসূ হতো। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরে সে অনুযায়ী সংস্কার করতে পারতাম।’ ঢাকা সিটি কলেজ ক্যাম্পাস সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কলেজের গেইটে স্যানিটাইজার রাখা আছে। ক্লাস চলাকালীন মুখে মাস্ক থাকলেও পরে তা পরতে দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের।

কলেজটির অ্যাকাডেমিক অ্যাডভাইজার ও সাবেক অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় সব শিক্ষার্থী অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছে। আর যারা নেয়নি তাদের টিকা নিতে শ্রেণিকক্ষে বলে দেওয়া হচ্ছে।

আনোয়ার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসের গেইটে স্যানিটাইজার ও ওয়াশরুমে হ্যান্ডওয়াশ রেখেছি। এছাড়া সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নির্দেশ দেওয়া আছে।’

মহামারির কারণে শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. তারিক আহসান। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে একটা প্ল্যান দরকার। বিশেষ করে তৈরি হওয়া গ্যাপগুলো পূরণে সামনের তিন মাসের জন্য পুরোদমে এগিয়ে যেতে হবে।’

শিক্ষাবিদ ড. তারিক আহসান পরামর্শ দিচ্ছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একটু স্বাধীনতা দিতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সব আদেশ না দিয়ে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজেদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী পাঠদান করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি ক্লাসের পাশাপাশি আরও কিছু সময় অতিরিক্ত পাঠদান করা দরকার। সেক্ষেত্রে বাসায় অথবা কমিউনিটিভাবে সেটি করা যায়। অনলাইনের মাধ্যমে হলেও এটা করা জরুরি।’ (ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :